দীপঙ্কর মণ্ডল: বাংলার ভোট। বাঙালির ভোট। আর সেখানে প্রার্থী হতে নাকি বাংলায় আবেদনই করা যাবে না! লিখতে হবে ইংরেজি বা হিন্দিতে। অনলাইন মনোনয়নের ক্ষেত্রে এমনই ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
পশ্চিমবঙ্গ, অসম, তামিলনাড়ু, কেরালা ও পুদুচেরিতে বিধানসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার suvidha.eci.govin লিংকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা। চার রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত এলাকার কোনটিতেই হিন্দিভাষীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নন। এ রাজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাংলাভাষী। তারপরও চলতি বিধানসভা ভোটে বাঙালি প্রার্থীদেরও মনোনয়ন জমা দিতে হবে হিন্দি বা ইংরেজিতে। কমিশনের এহেন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব সবমহল। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে বাংলা জাতীয়তাবাদী সংগঠনের তরফে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, কমিশন কি শুধু হিন্দিভাষী প্রার্থীই চাইছে? সংশোধনের জন্য কমিশনকে তিনদিন সময় দিয়েছে তাঁরা। ওই সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য, অনলাইন ব্যবস্থায় শুধু ইংরেজি থাকলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু কেন হিন্দি ভাষা রাখা হবে?
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের বক্তব্য, “কমিশনের সিদ্ধান্ত অন্যায় এবং অনুচিত। প্রশাসনিক সুবিধার্থে দেশে ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষা ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু রাজ্যের বিধানসভা ভোটের অনলাইন মনোনয়নে ওই দু’টি ভাষা চাপিয়ে দেওয়া অবৈধ। রাজ্যের কোটি কোটি মানুষের সম্মানে অবিলম্বে বাংলা ভাষাতেও অনলাইনে মনোনয়ন জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।” কমিশনের ভাষা নির্বাচনে বাঙালি বিদ্বেষেরও অভিযোগ উঠেছে। বাংলা জাতীয়তাবাদী সংগঠনের এক সদস্যের বক্তব্য, “ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার মাধ্যমে অনলাইনে মনোনয়নের ব্যবস্থা করে কমিশন বাংলা এবং বাঙালি বিদ্বেষের পরিচয় দিয়েছে। বাঙালি জাতির জন্য এই নীতি অত্যন্ত অপমানজনক।” বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে ই-মেলের মাধ্যমে এই ইস্যুতে তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। প্রশ্ন করা হয়েছে, বাঙালিদের কি হিন্দি শেখা বাধ্যতামূলক? শেষ জনগননার তথ্য অনুযায়ী রাজ্যের ৮৬ শতাংশ মানুষ বাংলাভাষী। অনেকেই ইংরেজি বা হিন্দি জানেন না। তাঁরা কেউ অনলাইন আবেদন করতে চাইলে কি করবেন?
[আরও পড়ুন: ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে প্রায় দু’শো কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ, হাই কোর্টে দায়ের জনস্বার্থ মামলা]
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সর্বত্র ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। পরে নিশ্চয়ই আঞ্চলিক ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবে।” তামিলনাড়ু, অসম, কেরালা এবং পুদুচেরির রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে স্থানীয় ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এ রাজ্যের ক্ষেত্রে তা নেই। কেন বাংলা ভাষার প্রতি এমন আচরণ, তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ।