সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: গোবর গ্যাসে মিড ডে মিল। অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহার করে রান্নাবান্নার কাজেও পরিবেশবান্ধব প্রকল্প কার্যকর করতে এই প্রথম পুরুলিয়ায় (Purulia) গোবর গ্যাস থেকে স্কুলের মিড ডে মিলের রান্না শুরু হল। গোবরের মতো জৈব গ্যাস থেকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজ্যের গোবর্ধন প্রকল্পে স্কুলের মিড ডে মিল রান্না রাজ্যে সেভাবে উদাহরণ নেই বলে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের দাবি। দেশলাই দিয়ে রীতিমত গ্যাসের ওভেন জ্বালিয়ে পুরুলিয়ার মানবাজার ১ নম্বর ব্লকের জিতুজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাথরকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক (DM) রজত নন্দা।
খুব শীঘ্রই এই গ্রামের ৭০ টি বাড়িতে পাইপ লাইনের সাহায্যে গ্যাসের সংযোগ দেবে মানবাজার ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি ও জিতুজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। বাজারের LPG’র চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে, মাসে ৫০০ টাকায় এই গ্যাস মিলবে। যা সাধারণভাবে মাসখানেক চলবে। স্কুলে একদিনে রান্নার জন্য জ্বালানির খরচ হয় প্রায় ১০০ টাকা। এখানে চার ঝুড়ি গোবরেই স্কুলের একদিনের রান্না হয়ে যাবে। যার খরচ প্রায় ৫০ টাকা। অর্থাৎ সাশ্রয় যেমন হবে তেমনই কমবে দূষণ (Pollution)। সঙ্গে গোবর বিক্রি করে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে এই পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্য দিয়ে। বাড়ি বাড়ি এই গ্যাস সংযোগে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে পাইপলাইন এবং কম্প্রেসারের ব্যবস্থা করবে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
[আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টিতে সূর্যই সেরা, টানা দ্বিতীয়বার আইসিসির বর্ষসেরা ভারতের তারকা]
এদিন এই সূচনা পর্বে ছিলেন পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আদিত্য বিক্রম মোহন হিরানি, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের উপসচিব জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “গোবর্ধন প্রকল্পে গোবর গ্যাস থেকে মিড ডে মিল রান্না এই প্রথম শুরু হলো পুরুলিয়ায়। মানবাজারের পাথরকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এই কাজ শুরু হলেও আগামী দিনে আমরা বাড়ি-বাড়ি সংযোগ দেব। সেইসঙ্গে জেলা জুড়ে বিভিন্ন ব্লকের ৩০ টি গ্রামে ৩০ টি ছোট ইউনিট হবে।” শুধু গোবর দিয়েই এই গ্যাস হবে তা নয়। যে কোনও পচনশীল বর্জ্য পদার্থ থেকেই এই বায়োগ্যাস উৎপাদন হবে। কচুরিপানার মতো বর্জ্য পদার্থ এই প্রকল্পে কাজে লেগে যাবে। এই প্রকল্পটি রূপায়ণ করেছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। যার প্রকল্প ব্যয় ৩৫ লক্ষ টাকা।
[আরও পড়ুন: ইংরেজ স্পিনারের ভিসা বাতিল, মোদি সরকারকে কড়া বার্তা সুনাক প্রশাসনের]
পুরুলিয়ায় এই বায়ো গ্যাস ইউনিট হচ্ছে দুটি। একটি মানবাজার (Manbazar) ১ ব্লকের জিতুজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাথরকাটায়, আরেকটি পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের রাঘবপুর গ্রামে। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে তা উদ্বোধন হবে বলে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ জানিয়েছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনের মধ্য দিয়ে এই প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এই প্রকল্পের কাজে যুক্ত থাকা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক কেজি বায়োগ্যাস উৎপাদন করতে প্রায় ৪০ কেজি তাজা গোবরের প্রয়োজন। বায়োগ্যাস হলো একটি বায়বীয় পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির উৎস। যার কাঁচামাল গোবর ছাড়াও কৃষি বর্জ্য, সার, উদ্ভিদ উপাদান, পয়:নিষ্কাশন, সবুজ বর্জ্য, বর্জ্য জল, খাদ্য বর্জ্য।