সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাওবাদী ডেরায় গোপন পুলিশি অভিযান, পুলিশ-মাওবাদী মুখোমুখি সংঘর্ষ – এসব নতুন কিছু নয়৷ তবে ছত্তিশগড়ের সুকমার জঙ্গলে গত সপ্তাহের মাওবাদী অভিযানের আড়ালে উঠে এসেছে এক নতুন গল্প৷ যা রাষ্ট্রদ্রোহীদের চিরাচরিত সক্রিয়তার বাইরে ছুঁয়ে যায় হৃদয়৷
[আরও পড়ুন: দেশের মানুষের স্বার্থে পদক্ষেপ, কাশ্মীর ইস্যুতে কেন্দ্রের প্রশংসা সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর]
২৯ জুলাই৷ সুকমার বালেংটং গ্রামে মাওবাদীদের ঘাঁটিতে অভিযান চালান ছদ্মবেশি পুলিশ কর্মীরা৷ এই জঙ্গলের রানি বছর পঞ্চাশের ভেট্টি কান্নি৷ তিনি কন্টা এলাকার মাওবাদী স্কোয়াডের নেত্রী৷ কান্নি এবং তাঁর ৩০জনের দলকে পর্যদস্তু করাই ছিল অভিযানকারীদের লক্ষ্য৷ অপারেশন চলাকালীন কান্নির মুখোমুখি হন অভিযানকারী দলের অন্যতম সদস্য ভেট্টি রামা৷ যিনি সম্পর্কে কান্নির ভাই৷
এমন একটা আকস্মিক পরিস্থিতির জন্য বোধহয় প্রস্তুত ছিল না কেউই৷ একে অপরের চোখাচোখি হয়, দিদিকে চিনতেও পারে ভাই৷ কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজেদের নেত্রীকে বাঁচাতে রামার উপর গুলি চালায় তার এক সহযোগী৷ রামা পালটা গুলি চালান৷ আর এই গুলিযুদ্ধের মাঝেই সুযোগ বুঝে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় কান্নি৷ নিহত হয় এই স্কোয়াডের ২ মাওবাদী৷ আরেকদিকে, মাওবাদী হামলা থেকে কোনওক্রমে নিজেকে বাঁচান ভেট্টি রামাও৷ এই অপারেশনের পর ঘনিষ্ঠমহলে ভেট্টি রামা বলেন, ‘আমি ওকে গুলি করতে চাইনি৷ কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ওর দেহরক্ষী আমার উপর হামলা করায় আমাকেও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে হয়৷ কিন্তু তারপরেই দেখলাম, ও জঙ্গল থেকে উধাও৷’
সুকমা অঞ্চলে কন্টা জঙ্গলের এরিয়া কমান্ডার মাওবাদী নেত্রী ভেট্টি কান্নি৷ সরকার থেকে তার মাথার দাম ধার্য করা হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা৷ তার মূল কাজ, মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত সদস্যদের আইনি সহায়তা দান এবং পুলিশের হাতে নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা৷ ছত্তিশগড়-তেলেঙ্গানা সীমানায় এই বনাঞ্চল মাওবাদীদের অতি প্রাচীন একটি ঘাঁটি৷ যেখানে বছরের পর বছর ধরে রীতিমত সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে৷ বিশেষ মাওবাদী দমন অভিযানেও তা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি৷ আর এমন একটি জায়গাতেই দাপিয়ে কাজ করেন ভেট্টি কান্নি, যার ভাই পুলিশ৷ পরিস্থিতি ভাই-বোনকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সমাজের সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি প্রান্তে৷ একজনকে করে তুলেছেন আরেকজনের শত্রু৷
[আরও পড়ুন: কাশ্মীর নিয়ে ‘ব্যাখ্যা’, আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন মোদি]
তবে পরিস্থিতি এমনটা ছিল না৷ নয়ের দশকের গোড়ায় সাত বছরের ছোট ভাই রামাকে নিয়েই অঞ্চল বাঁচাও অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন কান্নি৷ তখন তারা গগনপল্লি গ্রামের বাসিন্দা৷ আন্দোলন চলছিল একসঙ্গে৷ এরইমধ্যে মাওবাদীদের ছত্রছায়ায় ঢুকে পড়ে ভাইবোন৷ রামাও একসময়ে এরিয়া কমান্ডার ছিলেন৷ ২০১৮-এ হঠাৎই পট পরিবর্তন৷ আত্মসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসেন রামা৷ ছত্তিশগড় পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ দিদি কান্নি প্রতিষ্ঠান বিরোধী আন্দোলন থেকে সরতে চাননি৷ সে থেকে যায় জঙ্গলেই৷ এক বছর পর ভাইকে দেখল দিদি৷ একদা জংলাছাপ উর্দি ছেড়ে ভাইয়ের পরনে এখন পুলিশের খাকি পোশাক৷ ভাইয়ের প্রতি আদৌ কোনও মমত্ববোধ জাগেনি কান্নির৷ তবে ২৯ জুলাই অভিযানের শুধু সেই মুহূর্তটুকুই অনন্য৷ তারপর ফের ভাই আর দিদি চলে গিয়েছে যে যার পথে৷ রেখে গিয়েছে অলিখিত একটি কাহিনি৷
The post দিদি মাও নেত্রী, সামনে পেয়েও রক্তের টানে গুলি ছোঁড়া হল না পুলিশ ভাইয়ের appeared first on Sangbad Pratidin.