সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহামারির কোপে সর্বস্ব খুইয়েছেন ওঁরা। সম্বল বলতে, বুকের ভিতর ধুকপুক করতে থাকা হৃদপিন্ড আর সচল শরীর। সেটাকে অবলম্বন করেই বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা। কেউ থাকেন বিহারের কোনও দেহাতি গ্রামে, কেউ বা ওড়িশার সীমানা লাগোয়া গ্রামে। খুঁজে দেখলে ওই ভিড়ে বাংলার শ্রমিকদেরও দেখা মিলবে। ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা হতেই বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন ওঁরা। কিছুটা পায়ে হেঁটে, কিছুটা রাস্তা পণ্যবাহি ট্রাকে চেপে গন্তব্যের উদ্দেশ্য পাড়ি জমাচ্ছেন তাঁরা। পেটে দানাপানি নেই। তেষ্টায় চাঁদি অবধি শুকিয়ে গিয়েছে, কিন্তু জলের দেখা নেই। তবু থামছেন না তাঁরা। দেশজুড়ে চাল লকডাউনের চতুর্থদিনে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ ধরণের খণ্ড খণ্ড ছবি সামনে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে লকডাউনের কঠিন দিকটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এবার এই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে টুইট করলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। কেন্দ্রকেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়েছেন কংগ্রেসের আরেক সাংসদ আহমেদ প্যাটেলও। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী (অন্তর্বর্তীকালীন) সোনিয়া গান্ধীও।
সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানা এলাকায়। উত্তরপ্রদেশ থেকে বহু মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজে যায়। তাঁদের অনেকে আবার দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে। নিজের বাড়িতে ফিরতে দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানায় জড়ো হয়েছেন প্রচুর শ্রমিক। উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিল্লির হাইওয়ের দু’ধার ধরে বহু মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা যাচ্ছে। যা দেখে অনেকে বলছেন, ‘দেশের বৃহত্তম লং মার্চ’।
বিশ্বব্যাপী মহামারির আকার নিয়্ছে করোনা। দেশেও ক্রমশ চওড়া হচ্ছে করোনার থাবা। সেই সংক্রমণ ঠেকাতে মরিয়া সরকার। তাই মঙ্গলবার রাত থেকে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফলে বিভিন্ন নির্মাণ, ব্যবসা সমস্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজ হারিয়েছে ঠিকা শ্রমিকরা। হারিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁইও। অগত্যা বাড়ি ফিরতে চাইছেন তাঁরা। সেখানেও বিপত্তি। বন্ধ বাস-ট্রেন। পায়ে হেঁটে ফিরতে গিয়ে রাস্তায় পণ্যবাহি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হচ্ছেন অনেকে। প্রকাশ্যে আসছে একাধিক দুর্ঘটনার খবর। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকার ও আমজনতাকে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে আবেদন জানালেন রাহুল, সোনিয়ারা।
[আরও পড়ুন :করোনা রুখতে মরিয়া, হাতে-কলমে সামাজিক দূরত্ব শেখাচ্ছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী]
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি লেখেন সোনিয়া গান্ধী। সেখানে আটকে পড়া ঠিকা শ্রমিকদের ফেরাতে যানবাহনের ব্যবস্থা করা হোক। আর যারা ফিরতে পারছেন তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করুক জেলা প্রশাসন। টুইটারে একই আবেদন জানান আহমেদ প্যাটেলও। শনিবার টুইটারে রাহুল লেখেন, “কাজহারা ভাইবোনদের বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। তাঁদের পরিবারকে নিজের গ্রামে ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তাঁই পায়ে হেঁটেই বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন তাঁরা। সাধারণ মানুষ ও কংগ্রেস কর্মীদের অনুরোধ করছি, ওঁদের পাশে দাঁড়ান। কিছু খেতে দিন। পথচলার মাঝে রাতে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে দিন।” কিন্তু সংক্রমণ এড়াতে মানুষ যেভাবে দূরে-দূরে থাকছেন তাতে আদৌ কি কংগ্রেস সাংসদের ডাকে সাড়া দেবেন, উঠছে প্রশ্ন।
[আরও পড়ুন : ‘বাড়ি থেকে বেরলেই জিতবে করোনা’, বাবার কাছে ছোট্ট মেয়ের আরজি তুলে ধরে বার্তা মোদির]
The post সরকারি সাহায্যে আস্থা নেই, হেঁটেই ঘরে ফিরছেন কয়েক হাজার ঠিকা শ্রমিক appeared first on Sangbad Pratidin.