সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: দুরারোগ্য ক্যানসার থাবা বসিয়েছিল প্রেয়সীর শরীরে। প্রতি মুহূর্তে একটু একটু করে কমে আসছিল তাঁর আয়ু। তবে নিদারুণ সেই সত্যিকে জেনেও প্রেমিকার সঙ্গ ছাড়েননি মল্লিকবাজারের তরুণ ব্যবসায়ী অভিষেকপ্রতাপ সাউ। বরং দাঁতে দাঁত চিপে পালটা লড়াই শুরু করেছিলেন তরুণ নাট্যকর্মী প্রিয়াঙ্কার জন্য। তাঁর চিকিৎসার কোনও ত্রুটি রাখছিলেন না। কিন্তু বহু কাঠখড় পোড়ানোর পরও যখন চিকিৎসকরা জবাব দিয়ে দিলেন, সাফ জানিয়ে দিলেন যে আর কোনও চেষ্টা করা বৃথা, তখন প্রণয়ীযুগল বেছে নিলেন চরমতম পথ। মাঝগঙ্গায় লঞ্চ থেকে মরণঝাঁপ দিলেন প্রিয়াঙ্কা ও অভিষেক। পরস্পরকে আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থাতেই সলিলসমাধি ঘটল তাঁদের। ঘটনা মঙ্গলবারের।
[১০ ইঞ্চির পুরুষাঙ্গে বিপাকে ডাকাত সর্দার, বাঙুরে শাপমুক্তি]
বিকেলেই অবশ্য পরিবারকে সংকেত দিয়ে রেখেছিলেন এই যুগল। যদিও দুই বাড়ির লোকজন সেই সংকেত বুঝে ওঠার আগেই ঘটে যায় বিপর্যয়। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে অভিষেক ও প্রিয়াঙ্কা বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে এসে পৌঁছন মিলেনিয়াম পার্কে। আর পাঁচজন প্রেমিক-প্রেমিকার মতোই পার্কে বসে তাঁরা আড্ডা দেন। পার্কের বেঞ্চে বসে বাদাম ভাজা খান। সেইসময়ই কথায় কথায় অভিষেক প্রিয়াঙ্কাকে বলেন, “তুমি না থাকলে আমারও বাঁচা দায়। তাই চলো, আজ দু’জনই মৃত্যুকেই বরণ করে নিই।’’ সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তাঁরা দু’জনেই সন্ধ্যায় শিপিং কর্পোরেশনের জেটি থেকে হাওড়াগামী লঞ্চে ওঠেন। লঞ্চ মাঝগঙ্গায় আসতেই দু’জনেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঝাঁপ দেন গঙ্গাবক্ষে।
[জোড়া পদ্ধতিতে জাল মদ, বড়দিনের উৎসবে শঙ্কায় আবগারি দপ্তর]
লঞ্চে পড়ে থাকে অভিষেকের মোবাইল, প্রিয়াঙ্কার ব্যাগ। সেই ব্যাগে ছিল চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা কাগজপত্র। অভিষেকের মোবাইল উত্তর বন্দর থানায় জমা দেন যাত্রীরা। সেই মোবাইল দেখেই বাবা ওমপ্রকাশ সাউয়ের নম্বর খুঁজে বের করে পুলিশ। খবর দেওয়া হয় তাঁকে। রাতেই থানায় আসেন তিনি। আর তার পরই ভেঙে পড়েন কান্নায়। খবর দেওয়া হয়, প্রিয়াঙ্কার বাড়ির লোকজনকেও। খবর পেয়ে তাঁরাও ছুটে আসেন উত্তর বন্দর থানায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে থানায় দুই বাড়ির লোকজনই জানান, “অভিষেক ও প্রিয়াঙ্কা আত্মঘাতী হবে বলে এদিন বাড়ি থেকে ইঙ্গিত দিয়েই বেরিয়েছিল। সেই ইঙ্গিত আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। যদি পারতাম, তাহলে এদিন বাড়িতেই আটকাতাম তাদের।”
[আমডাঙার জমায়েতে পালটা প্রতিরোধের ডাক সূর্যকান্তের]
অভিষেকের বাড়ি মল্লিকবাজারে। বাবার কাচের ব্যবসা সামলান তিনি। অন্যদিকে, এলিয়ট রোডের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা। ভাল নাম সুজাতা প্রসাদ। অ্যাসেম্বলি অফ গড চার্চ থেকে পাশ করার পর তিনি নাটকের দলে যোগ দেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় অভিষেকের। আলাপ থেকে জমে ওঠে প্রেম। মাস কয়েক পর অভিষেক জানতে পারেন, প্রিয়াঙ্কার আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। তার উপর প্রিয়াঙ্কার রোগের কথা জেনে অভিষেকের সমবেদনা এবং ভালবাসা বেড়ে যায়। প্রেমিকাকে সুস্থ করতে মেডিক্যাল কলেজে তাঁর নিয়মিত চিকিৎসাও করান অভিষেক। কিন্তু তাতেও কিছু না হওয়ায় এদিন লঞ্চ থেকে মরণঝাঁপ দেওয়ার চরম সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। দু’জনকে উদ্ধারের জন্য এদিন গভীর রাত পর্যন্ত গঙ্গায় তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। রাত পর্যন্ত তাঁদের কোনও সন্ধান মেলেনি।
The post ক্যানসার আক্রান্ত প্রেমিকাকে নিয়ে মাঝগঙ্গায় মরণঝাঁপ প্রেমিকের appeared first on Sangbad Pratidin.