সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোভিড (COVID-19) ঝড়ে এখনই বিধ্বস্ত ভারত। তবে এখানেই নাকি শেষ নয়। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারা দেশে কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন ৩৩ থেকে ৩৫ লক্ষ মানুষ! অঙ্ক কষে কোভিড গ্রাফ তৈরি করে এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কানপুর এবং হায়দরাবাদের আইআইটির বিজ্ঞানীরা। এক মার্কিন গবেষণা বলছে, মে মাসের মাঝামাঝি ভারতে করোনা সংক্রমণে (Coronavirus) একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হতে পারে ৫ হাজার ৬০০ জনের! তবে আশার কথা একটাই। মে মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে একেবারে উপরে থাকার পর কোভিড গ্রাফ নিচের দিকে নামবে। মে মাসের শেষে অনেকটা থিতিয়ে যাবে সংক্রমণ।
শুক্রবার একদিনে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন তিন লক্ষ ৩২ হাজার মানুষ। মারা গিয়েছেন ২,২৬৩ জন। এই পরিসংখ্যানটাই মাত্রা ছাড়াবে মধ্য মে মাসে। দিনে ১০ লক্ষ কোভিড রোগীর খোঁজ মিলবে। এই রিপোর্ট তৈরিতে কানপুর ও হায়দরাবাদ আইআইটির বিজ্ঞানীরা সাসেপ্টেবল, আনডিক্টেড, টেস্টেড (পজিটিভ) অ্যান্ড রিমুভড অ্যাপ্রোচ (সুত্রা) মডেল অনুসরণ করেছেন। এপ্রিল মাসের ২৫ থেকে ৩০ তারিখ দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। যেটা মহারাষ্ট্র এবং ছত্তিশগড় এখন দেখছে। আইআইটি কানপুরের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক মণীন্দ্র আগরওয়াল জানান, মে মাসের ১১ থেকে ১৫ তারিখ ভারতের জন্য খুব খারাপ। সমীক্ষায় আক্রান্তের গ্রাফের রেখাও খাড়াভাবে সোজা উঠেছে। যেটা প্রমাণ করে, ভারত এখনও কোভিড ঝড় কাটিয়ে ওঠেনি। সামনে আরও খারাপ দিন আসছে।
[আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় এবার আসরে বায়ুসেনা, অক্সিজেন সরবরাহে নামল মালবাহী বিমান]
আমেরিকাকে ইতিমধ্যেই পিছনে ফেলে দৈনিক সংক্রমণে আতঙ্কের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে ভারত। পাশাপাশি এখনই দেখা যাচ্ছে, ফুটপাথে পড়ে থাকা রোগীর ভিড়ের লজ্জাজনক ছবি। ফলে অক্সিজেন, প্রতিষেধক এবং হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যার সরকারি আশ্বাস মিললেও দেশ জুড়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এর পাশাপাশি একটা শয্যার জন্য কোভিড আক্রান্তের স্বজনের কাকুতিমিনতি যেন গোটা দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বেআব্রু চিত্রেরই প্রতিফলন। এর পর মে মাসে ভারতের জন্য আরও কঠিন দিন অপেক্ষা করছে বলেই আশঙ্কাপ্রকাশ করছেন গবেষকরা। তাঁদের কথায়, উপসর্গহীনদের ধরে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করতে না পারা গেলে এই ছবি বদলাতে সময় নেবে না। আরও কঠিন দিন দেখবে ভারতবাসী।
কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে নয়াদিল্লিতে। এমন হারে বাড়ছে যে, মৃতদের সৎকার করার লাইন পড়ে গিয়েছে শ্মশানে। প্রিয়জনকে সসম্মানে শেষ বিদায়টুকু জানানোর সুযোগ পাচ্ছেন না রাজধানীবাসী। নীতীশ কুমার যেমন কোভিডে মৃত মায়ের শবদেহ দু’দিন নিজের বাড়িতে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ, রাজধানীর সব শ্মশানে সব ‘স্লট’ ভর্তি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার মায়ের অন্ত্যেষ্টি করতে পেরেছিলেন নীতীশ। কিন্তু শ্মশানে নয়। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সীমাপুরী শ্মশানের পার্কিং লটে তৈরি অস্থায়ী গণদাহ কেন্দ্রে!
“দু’দিন শহরের প্রত্যেকটা শ্মশানে হন্যে হয়ে দৌড়ে বেড়িয়েছিলাম। কিন্তু কোথাও জায়গা পাইনি। সব ভরতি। শ্মশানের লোক বলল, মৃতদেহ সৎকারের কাঠ আর নেই তাদের কাছে।” মায়ের শেষকৃত্য করাকালীন বলছিলেন নীতীশ। মায়ের চিকিৎসা করানোর সময়ও কম সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁকে। দশদিন আগে কোভিড ধরা পড়ে তাঁর মায়ের। যিনি ছিলেন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। অনেক চেষ্টা করেও প্রশাসন তাঁর জন্য হাসপাতালের শয্যা জোগাড় করতে পারেনি। “সরকার কিচ্ছু করছে না। আমাদেরই যা করার করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা একদম একা,” বলছেন নীতীশ।
শহিদ ভগৎ সিং সেবাদল নামের এনজিও চালান জিতেন্দর সিং শান্তি। “দিল্লির কেউ কোনওদিন এই দৃশ্য দেখেনি। পাঁচ বছরের শিশুর অন্ত্যেষ্টি হচ্ছে। ১৫ বছরের বাচ্চা, ২৫ বছরের তরুণ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। নবদম্পতির একসঙ্গে সৎকার হচ্ছে। এসব দেখা খুব কঠিন,” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি।
পিপিই কিট এবং হলুদ পাগড়ি পরা শান্তি জানিয়েছেন, গত বছর যখন কোভিডের প্রকোপ সর্বোচ্চ ছিল, একদিনে সবচেয়ে বেশি ১৮টা মৃতদেহ সৎকারে সাহায্য করেছিলেন তিনি। সে সময় দৈনিক দাহের সংখ্যা থাকত আট থেকে দশ। সেখানে চলতি বছরে মৃত্যুর হার বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। গত মঙ্গলবার একটা কেন্দ্রেই ৭৮টা মৃতদেহের সৎকারে সাহায্য করতে হয়েছে তাঁকে। রাজধানী দিল্লির এই ছবি যেন গোটা দেশের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিকেই তুলে ধরছে।