ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: কংগ্রেসের ডাকের অপেক্ষায় সিপিএম। কয়েকদিন আগের ঘটনা। ফরওয়ার্ড ব্লকের মঞ্চ থেকে বিজেপি-তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেসকে ইস্যুভিত্তিক সমর্থনের কথা বলেছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। কিন্তু তারপর কংগ্রেস থেকে কোনও উত্তর মেলেনি। রবিবার দলীয় মঞ্চ থেকে আরও একধাপ এগিয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পার্টি কর্মীদের স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেস অনেক বেশি গণতান্ত্রিক তাই দেশে বিজেপি ও রাজ্যে তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার প্রশ্নই নেই। এমনকী এই লক্ষ্য পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রণকৌশল অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিজেপি ও কংগ্রেস থেকে সমদূরত্বের লাইন বলে যে কথা পার্টির কেউ কেউ বলছেন তার আর কোনও গুরুত্বই নেই।
কার্ল মার্কসের দ্বিশতবার্ষিকী জন্মদিবসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মহাজাতি সদনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রবিবার বলেছেন, “অনেকেই প্রশ্ন করেন কংগ্রেস-বিজেপি থেকে কী সমদূরত্ব বজায় রাখবে পার্টি? আমরা বলি কেন্দ্রে বিজেপি আর রাজ্যে তৃণমূলকে ঠেকানোই মূল উদ্দেশ্য। কারণ এই দু’টি দলের থেকে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক কংগ্রেস।” রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই কংগ্রেসের হাত ধরার কথা বলছেন সিপিএম শীর্ষনেতৃত্ব। এখন কংগ্রেসের ডাকের অপেক্ষায় রয়েছে আলিমুদ্দিন। কারণ একক শক্তিতে রাজ্যে তেমন সুবিধা করতে পারবে না আলিমুদ্দিন নেতৃত্ব। একধাপ এগিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র এদিন বলেছেন, “সন্তান যখন জন্মাবে তখন নামকরণ হবেই। তবে তার আগে বিজেপি-তৃণমূলকে আটকানোই মূ্ল উদ্দেশ্য।” সিপিএম রাজ্য সম্পাদক এদিন বলেছেন, “দু’টি দল দেশ ও রাজ্যে মোহজাল তৈরি করেছে। বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূল বা উলটোটা সম্ভব নয়।”
সূর্যবাবুর দাবি, বিকল্প পথ বামেদের কাছে। এর আগে রাজ্য কমিটির বর্ধিত সভায় দলের কলকাতা জেলা কমিটির দফতরে প্রায় একই বক্তব্য রেখেছেন সীতারাম ইয়েচুরি ও সূর্যকান্ত মিশ্র। মহাজাতি সদনের এদিন বক্তব্য রেখে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রের নীতির সমালোচনার পাশাপাশি লোকসভা ভোটে দলের অবস্থান আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি এদিন মূলত, তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেন। সীতারামের কথায়, লোকসভা ভোটে বিজেপিকে ঠেকানো যেমন মূল লক্ষ্য তেমনই সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলকেও এক ছাতার তলায় আনতে হবে। এবং তৃতীয়ত লোকসভায় বামপন্থী প্রতিনিধিদের আগের মতো আরও বেশি করে জেতাতে হবে। তাঁর যুক্তি বিকল্প নীতি একমাত্র বামেরাই দিতে পারে। রবিবার সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, “শনিবার সব রাজ্য সভাপতির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। রাজ্যগুলি এককভাবে প্রার্থী দিতে চায়।” এই মন্তব্য করার পাশাপাশি সীতারামের যুক্তি, এখনও অনেক সময় আছে। ব্রিগেডের সমাবেশ হবে। অনেক রাজনৈতিক সমীকরণ হবে। তাই আলোচনারও জায়গা রয়েছে।
এদিন আলোচনায় অংশ নিয়ে বাম অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক কেন্দ্রের অর্থনীতির সমালোচনা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করে বিমান বসু হঠাৎ বলে বসেন,‘‘ ৮ ও ৯ জানুয়ারি ধর্মঘট ও ব্রিগেডের সমাবেশে নিকম্মাদের কোনও জায়গা নেই। সব কর্মীকে এই দু’দিন সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত রাস্তায় থাকতে হবে ধর্মঘট সফল করার জন্য।