বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: সংখ্যার বিচারে পরাজয় নিশ্চিত হতেই কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করল স্বয়ং পার্টির সাধারণ সম্পাদকের শিবির। পার্টি কংগ্রেসের দ্বিতীয় দিনেই পার্টি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানালেন সীতারাম ইয়েচুরি ঘনিষ্ঠ এক প্রতিনিধি৷ উঠল প্রথা ভেঙে সংশোধনীর উপর গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির দাবি৷ মানিক সরকার জোট বিরোধী অবস্থান নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পার্টি কংগ্রেস ছেড়ে চলে যান ত্রিপুরার রাজ্য কমিটির সদস্য বিশ্বজিৎ দত্ত। পদত্যাগ করে বসলেন পার্টির পদ থেকে৷ ‘সুপার সেক্রেটারি’ বলে কটাক্ষও শুনতে হল প্রকাশ কারাতকে। এমনকী, মঞ্চ থেকেই নিজের রাজ্যের অবস্থানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন কেরলের এক প্রাক্তন সাংসদ ও বর্তমান জেলা সম্পাদক৷ এমনই ঘটনাবহুল হয়ে উঠল হায়দরাবাদে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। প্রতিনিধিদের একের পর এক বিদ্রোহে জোট বিরোধী প্রকাশ কারাত শিবির কিছুটা হলেও কোণঠাসা। তাতেই খুশির হাওয়া জোটপন্থী শিবিরে৷
[বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ফের জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় পাঠানকোটে জারি হাই অ্যালার্ট]
বিদ্রোহের আগুনটা ধিকধিক করে জ্বলছিল জোটপন্থী শিবিরে। বুধবার পালটা চালে সেই আগুনে ‘ঘৃতাহুতি’ করেন ইয়েচুরি নিজেই। প্রথা ভেঙে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতকে দিয়ে ‘অফিসিয়াল’ রাজনৈতিক খসড়া দলিল পেশ করতে বাধ্য করেন। নিজে সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে পালটা দলিল পেশ করেন। কারাতের দলিল পেশ করাটা যে প্রতিনিধিদের বড় অংশ মেনে নিতে পারেননি বৃহস্পতিবার আলোচনা শুরু হতেই তা মালুম করতে পারে কারাত ঘনিষ্ঠ কেরল শিবির। আলোচনায় অংশ নিতে উঠে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে জোর সওয়াল করে মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধি উদয় নারভেলকর কার্যত বিদ্রোহ করে বসেন। বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বাস্তব পরিস্থিতি রয়েছে বলে দাবি করেন। এই সহজ সারমর্ম যারা বুঝতে পারছেন না তাদের সঙ্গে এক ঘরে সংসার করা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানান। এক্ষেত্রে তিনি পার্টি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান বলে সিপিএম সূত্রে খবর৷ নতুন পার্টি হলে তার নাম সিপিআইএমের বদলে সিপিএমআই হতে পারে বলে মঞ্চে স্পষ্ট জানিয়ে দেন নারভেলকর। মহারাষ্ট্রে ‘লং মার্চ’ দেশজুড়ে ঝড় তুলেছিল। সেই ‘লং মার্চে’ র নেতার এই অবস্থানে বিপাকে কারাত শিবির। তারই সুরে জোটের পক্ষে সওয়াল করেন বিহারের অরুণ মিশ্র, রাজস্থানের ধুলি চাঁদরা। বঙ্গ ব্রিগেড থেকে এদিন জোটের পক্ষে প্রথম সওয়াল করেন নদীয়া জেলার শান্তনু ঝা।
তাঁর যুক্তি, বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের শক্তিকে পাশে নিতেই হবে। কারণ ২০১৪ পর থেকে বিজেপি শাসিত রাজ্যে কংগ্রেসের জনসমর্থন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে বিজেপিকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় বলেই জানান তিনি৷ তবে, কারাতের নিজের রাজ্য কেরলের এক প্রতিনিধির বিদ্রোহ খুশির হাওয়া নিয়ে এসেছে জোট শিবিরে৷ প্রাক্তন সাংসদ ও কোল্লম জেলার সম্পাদককে বালাগোপাল প্রতিনিধিদের অবাক করে সীতার জোটের অবস্থানকে সমর্থন করে বসেন। তিনি যুক্তি সাজান, বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে কংগ্রেসকে সমথর্ন না করলে ঘুরিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়া হবে৷ ভবিষ্যতে পার্টি ফের প্রশ্নের মখে পরবে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য কারাত শিবিরে ভাঙনের ইঙ্গিত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আবার পঞ্জাবের রাজ্য সম্পাদক সুখবিন্দর সিং সেখু ‘অফিসিয়াল’ দলিল পেশ করায় কারাতকে তুলোধনা করেন। তাঁকে ‘সুপার সেক্রেটারি’ বলে কটাক্ষ করেন সুখবিন্দর৷ কারাতের দলিল পেশ বিতর্কে জল ঢালতে আসরে নামেন সীতারাম৷ অতীত প্রসঙ্গ টেনে জানান, জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করা নিয়ে বিতর্কে হরকিষেণ সিং সুরজিৎ সংখ্যালঘু মতামত পেশ করেছিলেন৷
[‘আমাকে গুলি করুন তবু মিথ্যা ছড়াবেন না’, কাঠুয়া কাণ্ডে আরজি আইনজীবীর]
ব্যতিক্রমী উদাহরণও রয়েছে৷ যেমন বঙ্গ ব্রিগেডের সদস্য কলকাতা জেলার সম্পাদক কল্লোল মজুমদার জোট বিরোধী অবস্থান নিয়ে কারাতের বক্তব্যকে সমথর্ন জানান বলে খবর৷ বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসকে পাশে নিলে তা ঘুরিয়ে বিজেপির অথর্নীতি ও বিদেশ নীতিকেই সমর্থন করা হবে বলে সওয়াল করেন৷ কল্লোল ছাড়াও কেরলের পি রাজীব, হিমাচলের রাকেশ সিংহ, দিল্লির এমকে তেওয়ারি, অসমের সুপ্রকাশ তালুকদার বা ত্রিপুরার তপন চক্রবর্তীরা জোট বিরোধী অবস্থান নেন৷
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ইসু্যতে পার্টির অন্দরে যে দ্বিমত রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি। পার্টির অন্দরে গণতন্ত্রকে মান্যতা দিতেই পাল্টা দলিল পেশের সুযোগ ও বিতর্ক বলে জানান ইয়েচুরি। তবে, পার্টি ভাঙার দাবির প্রসঙ্গে নীরব থেকেছেন সাধারন সম্পাদক৷ আর প্রথা ভেঙে রাজনৈতিক অবস্থান বিতর্কের মীমাংসায় গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির দাবি সরাসরি খারিজ করেননি তিনি৷
The post বিদ্রোহের পার্টি কংগ্রেস, রীতি ভেঙে দাবি গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির appeared first on Sangbad Pratidin.