বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, হায়দরাবাদ: প্রথম লড়াই শেষ হয়েছে শুক্রবার। শনিবার থেকে দ্বিতীয় লড়াই শুরু হয়ে গেল সীতারাম ইয়েচুরির। সিপিএম সাধারণ সম্পাদকের লড়াই আবার একটি নয়, দুটি। প্রথম লড়াই, দলে নিজের পদ ধরে রাখা।
দ্বিতীয় লড়াই, কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের দল ভারী করা। দুই ক্ষেত্রেই বাধা সেই প্রকাশ কারাট ও কেরল লবি। এখনও পর্যন্ত দুই কমিটিতেই সংখ্যাগুরু কারাট লবি। সংখ্যালঘু হয়ে পার্টি চালানো কত কঠিন, গত তিনবছরে হাড়েহাড়ে টের পেয়েছেন সীতারাম।
[ নিজের পদ ধরে রাখা আর দল ভারী করাই এখন সীতারামের লক্ষ্য ]
এ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় আলিমুদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ইয়েচুরি। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তিনিই গোপনে কথাবার্তা চালান। গোটাটাই কেন্দ্রীয় কমিটি বা পলিটব্যুরোর অনুমোদন ব্যতিরেকে। রাজনৈতিক মহলের গুজব, সেই ‘দোষে’-ই কারাট ও কেরল লবি প্রবল আপত্তি জানিয়ে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যসভায় যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয় সীতারামের। প্রকাশ কারাটদের সেই বাধাদানে এই রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় কোনও সদস্য পাঠাতে পারেননি। পার্টির দুই শীর্ষ কমিটিতে সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই ইয়েচুরির এহেন যাত্রাভঙ্গ। এবার তাই পালে হাওয়া বুঝে দুই কমিটিতেই ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্তি চাইছেন সাধারণ সম্পাদক। এই লড়াইতেও তাঁর ভরসা বঙ্গ ব্রিগেড।
উলটোদিকে থেমে নেই কারাট শিবিরও। ইয়েচুরিকে সড়ানোই এখন তাঁদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য। কেরল শিবিরের হয়ে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বৃন্দা কারাট, মানিক সরকার ও বিভি রাঘবুলু। যার মধ্যে কঠিনতম প্রতিপক্ষ মানিক সরকার। প্রকাশের সাহায্য নিয়ে ইতিমধ্যেই পার্টি কংগ্রেসের সভাপতির আসনে বসেছেন মানিক। পার্টি কংগ্রেসের বক্তাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। অভিযোগ উঠেছে পক্ষপাতিত্বের। অবশ্য বঙ্গ সিপিএম নিশ্চিত। জোট ইস্যুতে কারাট লবিকে পরাস্ত করতেই সাধারণ সম্পাদকের পদ সীতারামের থাকছে বলেই মনে করছে বঙ্গ ব্রিগেড। পলিটব্যুরোতে আলিমুদ্দিনের পছন্দের রামচন্দ্র ডোমকে জায়গা করে দিতে ইয়েচুরি নিজেই লড়াইয়ে নেমেছেন বলে খবর। সেক্ষেত্রে দক্ষিণ ভারত থেকে কারাত ঘনিষ্ঠ কোনও সদস্য বাদ যেতে পারেন।
[ বিজেপি ছাড়লেন ‘বিদ্রোহী’ যশবন্ত সিনহা, রাজনৈতিক সন্ন্যাসের ঘোষণা ]
আবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাজ্য থেকে শ্যামল চক্রবর্তী ও মদন ঘোষের বাদ যাওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা। বাদ যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন দীপক দাশগুপ্ত ও নৃপেন চৌধুরিও। সুজন চক্রবর্তীর অন্তর্ভুক্তি একশো শতাংশ নিশ্চিত। অশোক ভট্টাচার্যও কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পেতে পারেন। আর দু’জন কারা তা ঠিক করবেন বিমান-সূর্যকান্ত মিশ্ররা। শনিবার পার্টি কংগ্রেসের চতুর্থদিনে সংগঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেও তোপের মুখে প্রকাশ কারাট। সীতারামকে রাজ্যসভায় না পাঠান ঐতিহাসিক ভুল বলে তোপ দাগেন ওড়িশার রাজ্য সম্পাদক দুশমন্ত দাস। কারাটের ভুলেই রাজ্যসভায় সিপিএমের কোনও উপযুক্ত প্রতিনিধি নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি। দার্জিলিংয়ের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার কেন্দ্রীয় কমিটিকে আক্রমণ করেন। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সমালোচনার জবাবে বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার ফলে বর্তমান শাসকদলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া গিয়েছিল।” সমঝোতা না হলে বিরোধীদের ৭৭টি আসনও জুটত না বলে দাবি করেন তিনি।
The post জোড়া লড়াই শুরু ইয়েচুরির, বসে নেই কারাট-পক্ষও appeared first on Sangbad Pratidin.