ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের অন্দরে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা জঞ্জাল সাফ করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কোমর বেঁধে আসরে নেমেছে লোধা কমিশন৷ এখনও কতটা সাফ হল সেই জঞ্জাল? আদৌ সাফ হবে তো? নাকি এই সাফাই অভিযানে বলি হতে হবে স্বয়ং ক্রিকেটকেই? উত্তরের খোঁজে সুলয়া সিংহ৷
Advertisement
বছর তিনেক আগে ভয়ঙ্কর ঘুর্ণিঝড়ে ওলটপালট হয়ে গিয়েছ ভারতীয় ক্রিকেট৷ তছনছ হয়েছিল বেশ কিছু ক্রিকেটীয় পরিবার৷ জীবন (পড়ুন কেরিয়ার) শেষ হয়ে গিয়েছিল একাধিকজনের৷ আর তারপরই শুরু হয়েছিল মেরামতির কাজ৷ ভূমিকম্প রোধ করে ক্রিকেট দুনিয়ার ভিত মজবুত করতে আসরে নেমেছিলেন দেশের রক্ষাকর্তারা৷ সেই কাজ এখনও চলছে৷ কিন্তু এই তিন বছরে বাইশ গজের ঠিক কতটা জঞ্জাল সাফ করা গেল? আদৌ কি একটুও করা গেল?
হ্যাঁ, কথা হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের আইপিএল পরবর্তী জমানা নিয়ে৷ যে আইপিএল কলঙ্কিত করেছিল এ দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিকে৷ ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের মানচিত্রে জ্বলজ্বল করতে থাকা নামের ঐতিহ্যকে৷ মাথানত করে দিয়েছিল গর্বিত কিংবদন্তিদের ইতিহাসকে৷ কথা হচ্ছে সেই ক্রোড়পতি লিগের যার আড়ালে বাইশ গজে চলেছিল নোংরা খেলা৷ দম্ভ দেখিয়েছিল অর্থ৷ সেই ‘টাকা’ নামক কোহিনূরকে কাজে লাগিয়ে দাদাগিরি চালিয়ে ছিল একদল ‘ভাই’৷ কেঁচো খুঁড়তে কেউটের মতো তারপরই বেরিয়ে এল একের পর এক কিসসা৷ যার বিস্তার এমন ঘটল, যে তিন বছর ধরে ‘স্বচ্ছ ক্রিকেট অভিযান’ চালিয়েও তা সাফ করা গেল না৷
গল্প কোথ্থেকে শুরু হয়েছিল, তা স্পষ্ট৷ এবার দেখা যাক, সেই কাহিনি কতটা এগোলো৷ ক্রোড়পতি লিগের মানচিত্র থেকে উধাও হয়ে গেল চেন্নাই এবং রাজস্থান৷ যদিও চিরকালের মতো নয়৷ চিরকালের মতো বিদায় নিল সেই দুই জায়গার দুই জন্মদাতা৷ আর যে ক্রিকেটাররা মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দিয়েছিল, বাইশ গজের দুনিয়া থেকে তাদের ইতি ঘটল৷ তবে এটুকুই তো যথেষ্ট নয়৷ কথায় আছে, আগে মন সুন্দর হতে হবে, তারপর বাহ্যিক সৌন্দর্যের কথা৷ তাই ক্রিকেটকে ফের ‘জেন্টলম্যান’স গেম’-এ পরিণত করতে শুরু হল অন্দরমহল সাফাই অভিযান৷ কিন্তু আপনারই বাড়িতে ঢুকে অন্য কেউ যদি বলে, এটা-ওটা-সেটা, দেখতে ভাল না, সরিয়ে ফেলো৷ আপনি নিশ্চয়ই মুখ বুজে মেনে নেবেন না? এক্ষেত্রেও তাই হল৷
সেকেন্ড ডিভিশনে কোন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি হাঁকালো, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কোনও ব্যাটসম্যানের বাবার পকেট ভারী অথবা তার কোচের নাম কী৷ তবেই রাজ্য সংস্থার চোখে পড়া যায়৷ রঞ্জিতে ব্রেক পাওয়া যায়৷ ইত্যাদি ইত্যাদি৷ তা সত্ত্বেও তারা ধরা পড়ে না৷ তাই শাস্তিও হয় না৷ এই অবাধ প্রবেশেই লাগাম টানার চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি বাড়ির আরও কিছু পুরনো নিয়ম কানুন বদলে ফেলতে উদ্যোগী এই নয়া অতিথিরা৷ আর তাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছে বাড়ির লোক৷ এতদিন যে মহলে স্বয়ং দেশের সরকার হস্তক্ষেপ করেনি৷ যেখানে প্রবীন রাজনীতির ছায়া পড়লেও গায়ে বিদেশি শক্তির আঁচ লাগেনি৷ এত বছর ধরে পুরনো নিয়ম মেনেই তো বিশ্ব ক্রিকেটে জাঁকিয়ে বসেছে তারা৷ নিজেদের সংসারকে সম্বৃদ্ধ করেছে৷ বিশ্বদরবারে দেশকেও জনপ্রিয় করে তুলেছে৷ প্রচার আর স্পনসরে ফুলেফেঁপে উঠেছে৷ তাহলে হঠাৎ বাইরের লোকের কথা শুনবে কেন তারা? এই নিয়ে চলছে বাকবিতন্ডা৷ আর তাই গল্পটা এর থেকে যেন আর এগোতেই চাইছে না৷
কিন্তু প্রশ্ন হল, এতে তাদের ক্ষতি হবে না তো, যারা ব্যাট আর বল ছাড়া জীবনে অন্য কিছু নিয়ে স্বপ্ন দেখে না৷ যাদের ধ্যান, জ্ঞান ওই নীল জার্সিটা৷ ক্ষতি হবে না, তা জোর গলায় বলা যাচ্ছে কই! নাহলে অদূর অতীতে কে কবে শুনেছে, অর্থের অভাবে এদেশে সিরিজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল! রাজায়-রাজায় যুদ্ধে প্রাণ উলুখাগড়াদেরই প্রাণ যাবে না তো? এমন পরিস্থিতিতে ‘বিরাট’ জনপ্রিয় ক্রিকেটটিরও হাল যে সুপ্ত ফুটবলের মতো হয়ে যাবে না, কে বলতে পারে! তবে কি অন্দরমহলে পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই? এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি টানতেই হচ্ছে৷ নরেন্দ্র মোদির দাবি, দেশের হিতের কথা ভেবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলতে নয়৷ জঞ্জাল সাফ করতে তাই আগুন তো একটু জ্বলবেই৷ কিছু মানুষের চোখে তার আঁচও লাগবে৷ তাই বলে তো কাজ আটকে রাখলে চলবে না৷ ভবিষ্যতে ‘সচল’ নোটের প্রলোভনে কেউ যাতে নিজেকে বিকিয়ে না দেয়, তার জন্য হাজার বাধা সত্ত্বেও দেশের রক্ষাকর্তারা ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ঘটাতে বদ্ধপরিকর৷
The post ক্রিকেটমহলের অন্দরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে না তো? appeared first on Sangbad Pratidin.