জোস ব্যারেটো: দু’দশকের বেশি একটা মানুষ ফুটবলের উপাসনা করেছে। ওর ড্রয়িংরুমে কী নেই? তাও মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় ক্ষতবিক্ষত হতে হচ্ছে রোনাল্ডোকে (Cristiano Ronaldo)। ওর ব্যক্তিগত জীবন, ওর চরিত্রকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। অথচ ওকে দেখুন। কত ঠান্ডা মাথায় পেনাল্টির ফায়দা তুলল। এটাই রোনাল্ডো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মাঠের বাইরের এই আক্রমণগুলোই ওকে আরও তাতাবে। ইউরোর মতো, বিশ্বকাপও যদি রোনাল্ডোর সঙ্গে পর্তুগালে যায়, অবাক হব না।
জীবনের যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে নামার সময় আমি, আমরা কী করি? চেষ্টা করি মানসিক দিক থেকে চাঙ্গা থাকতে। অথচ গত ক’টা সপ্তাহ রোনাল্ডোর কেমন কাটল ভেবে দেখুন। সংবাদমাধ্যম, সোশাল মিডিয়া, এমনকী ওর আঁতুরঘর, সব জায়গায় ওকে আক্রমণ করা হয়েছে। এমন নয় যে, ও ফুটবলটা খেলতে পারছে না। একটা মানুষ ফুটবলের জন্য এতকিছু করল, সেসব ভুলে গিয়ে মাঠের বাইরের অবান্তর বিষয় টেনে এনে লাগাতার সমালোচনা চলছিল। এই বয়সে এসে, এতকিছু করার পরেও কোনও ফুটবলারকে যখন এটা প্রমাণ করতে হয় যে, তার জন্য ফুটবলই সব। সেটা খুব কষ্টকর। অথচ চাপের এভারেস্টে বসে থাকা সত্ত্বেও রোনাল্ডো যখন বলটা পেনাল্টি স্পটে বলটা বসাল, ওর চোখের দিকে দেখেছেন? খুব ভাল করে জানত, গোটা দুনিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ বলবে, ওর মনের মধ্যে কেমন সুনামি উঠেছিল? অন্য সময় যে অ্যাটিটিউডে থাকে, ঠিক সেভাবেই মাথায় কী অদ্ভুত ফিনিশটা করল রোনাল্ডো। শুধু টানা পাঁচটা বিশ্বকাপে (FIFA World Cup) গোল করে রেকর্ড বুকে নামটাই তুলল না রোনাল্ডো, চুপ করিয়ে দিল দুনিয়াজুড়ে ওর সমালোচকদের। শুধু এই রেকর্ডই কেন, রোনাল্ডো বা মেসি (Leo Messi) ফুটবলের জন্য যা করেছে, তাতে ফুটবল দুনিয়ার সব সাফল্য ওদের পাওয়া উচিত।
[আরও পড়ুন: পুর-সংশোধনী আইনে বাড়ল সুবিধা, বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনলে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গেই মিউটেশন]
যতক্ষণ মাঠে ছিল, সবসময় ছটফট করে গেল। একটা অদম্য খিদে, তাগিদ ওর মধ্যে দেখা যাচ্ছিল। টিমকে সাপোর্ট করতে ডিফেন্সে নেমে আসতেও ছাড়েনি। একটা লোক আর কী করতে পারে? তবে আজ যদি রোনাল্ডো অন ফিল্ড গোল পেত, আমি আরও খুশি হতাম। যাইহোক, এবার আসি ম্যাচের কথায়। সীমিত ক্ষমতা নিয়েও ঘানা অসাধারণ খেলল। পর্তুগালকে একেবারেই জায়গা দেয়নি ঘানা। ওদের কোচকে এর জন্য অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে। তবে পর্তুগালকে আরও উন্নতি করতে হবে। যে মানুষটা গোটা দলের বোঝা বয়ে চলেছে, সেই দলকে বুঝতে হবে যে, তাদের ক্যাপ্টেনের মানসিক অবস্থা এখন কোন জায়গায় রয়েছে। বুঝতে হবে রোনাল্ডো বলতেই ফিটনেসের যে দেবতার ছবি চোখে ভাসে, সেই দেবতাও সময়ের নিয়মে বৃদ্ধ হচ্ছেন। তবু রোনাল্ডো নিজের সেরা নিংড়ে দিচ্ছে। বাকিরা কেন সেটা করবে না? যথেষ্ট ভাল টিম ওদের।
[আরও পড়ুন: B.Ed ও D.El.Ed কলেজ পিছু ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন মানিক! আদালতে দাবি ইডির]
শেষে আবার রোনাল্ডোর কথা বলব। যে চাপ ও কাতারে (Qatar World Cup) এসেছে, তা প্রচণ্ড কঠিন। মাঠের ভিতরে ডিফেন্ডারদের কড়া ট্যাকল, বিপক্ষ কোচের ক্ষুরধার বুদ্ধির স্ট্র্যাটেজি ভেঙে ফেলা অনেক সহজ। বাইরের বোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই সবচেয়ে কঠিন। এর জন্য তোমায় সেলাম। যেভাবে প্রথম ম্যাচ পার করলে, গোটা টুর্নামেন্টটাই করো। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হোক যেমন চাই, তেমনই তোমার আর মেসির ফুটবলের সব পাওয়া উচিত, এই বিশ্বাস আমি করি।