রমেন দাস: ফের শিক্ষাক্ষেত্রে আচার্যের বেআইনি হস্তক্ষেপের অভিযোগ। এবার রাজভবনের সচিবালয়ের একটি নির্দেশ নিয়েই প্রশ্ন তুললেন খোদ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Education Minister of West Bengal) । অভিযোগ, গত ১৭ অক্টোবর রাজভবনের (Raj Bhavan) সচিবালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। দাবি, ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India) এসএলপি (বিশেষ লিভ পিটিশন), মামলা লড়ার কাজে নিযুক্ত আইনজীবীদের খরচ বহন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। আর সেই খরচ সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে যোগসূত্র হবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (Calcutta University)! এই নির্দেশ প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
রাজ্যের প্রাক্তন উপাচার্যদের একটি সংগঠন ‘এডুকেশনিস্টস ফোরাম’ প্রশ্ন তুলেছে, কোন আইনি অধিকারের বলে রাজ্যপাল তথা আচার্য এমন নির্দেশ জারি করতে পারেন! শুধু তাই-ই নয়। ওই মঞ্চের সদস্যদের আরও অভিযোগ, এই ফরমান সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা শুধু নয়, বেআইনি-অনৈতিক।
রাজ্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) ‘তিক্ত সম্পর্কে’র মধ্যেই এই নির্দেশ প্রকাশ্যে এসেছে। আর যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। সোমবার বিকাশ ভবনে তিনি জানান, ”মাছের তেলে মাছ ভাজা! সুপ্রিম কোর্টের গোচরে আনব বিষয়টি। রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা লড়ার নির্দেশ আচার্য দিতে পারেন কিনা, সেটা নিয়ে আমরা যথাযোগ্য পদক্ষেপ করব। উনি তো বলবেন ভালো হচ্ছে, উনি সুপ্রিম কোর্টকে অগ্রাহ্য করতে চাইছেন হয়ত!”
রাজভবনের সচিবালয়ের এই নির্দেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন ছাত্র, শিক্ষকদের একাংশও। এবিষয়ে সরব হয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) অধ্যাপক তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। তাঁর দাবি, ”কোনও অধিকার নেই রাজভবনের তরফে এমন বিজ্ঞপ্তি জারির। রাজ্যের টাকা রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে খরচ করবে, এটা কীভাবে সম্ভব আমাদের জানা নেই। এই আচার্য তাঁর পছন্দের উপাচার্যদের মাধ্যমে এমন কাজ করছেন। এক কথায় আইনজীবীদের খরচ নেওয়া মানে তোলা তোলার শামিল বলে মনে হয়। এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।”
প্রায় একই সুরে অভিযোগ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের। তাঁর দাবি, ”ইতিমধ্য়েই যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয় থেকে ৬০ হাজার টাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য এমন করতে পারেন না। এর কোনও নথি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা না হলে কীসের জন্য টাকা দেবে! চরম বেআইনি কাজ এটি। এই কাজের বিরুদ্ধে আমরা চিঠি দিচ্ছি উপাচার্যকে। আচার্যের দপ্তরের নির্দেশও বেআইনি। আবার ২০২২ সালে বিকাশ ভবনের এই ধরনের নির্দেশও বেআইনি বলেই মনে করি।”
[আরও পড়ুন: দিল্লিতে মুখোমুখি মোদি-মমতা, রাজ্যের বকেয়ার দাবিতে বৈঠক আগামী সপ্তাহেই]
দাবি, গত ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যদের উদ্দেশে রাজ্যপালের বিশেষ সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়, আচার্য অর্থাৎ রাজ্যপালের নির্দেশ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে মামলা লড়ায় নিযুক্ত আইনজীবীদের পারিশ্রমিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক লেনদেনের ভার নিতে হবে।
[আরও পড়ুন: SLST Protest: জট কাটিয়ে কবে নিয়োগ? SLST আন্দোলনকারী-শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে মিলল ইঙ্গিত]
এরপরেই ওঠে প্রশ্ন। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফের সরগরম হয় রাজ্যের শিক্ষাঙ্গণ। রাজ্যের অনুদানপুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা কীভাবে রাজ্যের বিরুদ্ধেই মামলা লড়তে ব্যবহার করা হবে? এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ওমপ্রকাশরা। পুরোটাই যে বেআইনি, এমনও দাবি করেছেন প্রাক্তন উপাচার্যদের একাংশ।