সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’ (Rocky Aur Rani Kii Prem Kahaani) ছবির ট্রেলারে আলিয়া ভাটের মুখে ‘খেলা হবে’ স্লোগান শুনে খুশি হয়েছিলেন দেবাংশু ভট্টাচার্য। কিন্তু রিলিজের আগে সেন্সরের কাঁচিতে ছাঁটাই হওয়ার পর মন খারাপ নিয়েই সেন্সর বোর্ড-সহ মোদী সরকারকে তুলোধনা করলেন তৃণমূল নেতা। তাঁর প্রশ্ন, “‘কাশ্মীর ফাইলস’, ‘কেরালা স্টোরি’র মতো সিনেমা ছাড়পত্র পেলে খেলা হবে স্লোগান নিয়ে সমস্যা কোথায়?”
শেষমুহূর্তে করণ জোহরের ছবিতে সেন্সর বোর্ডের কোপ। ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’র পাঁচটি দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তুলেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন। বলিউড মাধ্যম সূত্রে খবর, ‘খেলা হবে’ স্লোগান-সহ নির্বাচনের রেফারেন্সে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ছেঁটে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার সেই প্রসঙ্গেই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর কাছে মুখ খুললেন ‘খেলা হবে’ স্রষ্টা দেবাংশু ভট্টাচার্য।
তৃণমূল নেতার মন্তব্য, “কী অবস্থা! সেন্সরের বোর্ডের কাজ হচ্ছে সমাজের পক্ষে যেটা ক্ষতিকারক, অসামাজিক কোনও বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া। বা এমন কোনও সংলাপ-দৃশ্য, যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে, সেগুলোকে বাদ দেওয়া। এরা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ হইহই করে ছেড়ে দিচ্ছে, যেখানে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে চরম দ্বন্দ দেখানো হয়েছে, আর সামান্য একটা খেলা হবে স্লোগান কিংবা একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম শুনে বলছে, বাদ দিয়ে দাও! কতটা নির্লজ্জ। এদের সময় ঘনিয়ে এসেছে।”
প্রসঙ্গত, ‘আদিপুরুষ’ বিতর্কের পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে সেন্সর বোর্ড। কড়া আতসকাঁচে রেখে প্রতিটা ছবিকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এদিকে ট্রেলার প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চর্চার শিরোনামে ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’। বলিউডি ছবিতে বাঙালির ঘর-সংসার, রীতি-রেওয়াজ, আদব-কায়দা দেখানো হয়েছে। রয়েছেন বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রির দুই তাবড় অভিনেতাও- চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় এবং টোটা রায়চৌধুরী। প্রেক্ষাগৃহে বাংলার দর্শক টানতে নির্মাতারা বাঙালি ছোঁয়া রাখার চেষ্টা করেছেন। এমনকী, ট্রেলারে আলিয়া ভাটের মুখে খেলা হবে স্লোগান শুনে রীতিমতো তাঁদের উত্তেজনার পারদ চড়েছিল। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন দেবাংশু নিজেও। এবার শোনা গেল, সেই স্লোগানকেই কিনা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে! সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে তোপ দাগলেন তৃণমূল নেতা।
[আরও পড়ুন: শুটিং শুরুর আগে অযোধ্যায় ‘সীতা’ দীপিকা, আশীর্বাদ নিলেন ‘রাম লাল্লা’র কাছে]
দেবাংশু বলছেন, “এই সিনেমাটা যেহেতু বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই শুটিং, সেখানে নেতিবাচক কিছু ছিল বলে মনে হয় না। আসলে জাতীয়স্তরে সিনেমাটা রিলিজ হবে, দিদির নাম থাকবে, বাংলা থেকে তৈরি হওয়া একটা স্লোগান থাকবে। যে স্লোগানটা শুনে নরেন্দ্র মোদি চৌচির হয়ে গিয়েছিলেন। উপরন্তু জাতীয়স্তরের দর্শকেরা দেখবেন, আলিয়া ভাট ‘খেলা হবে’ বলছেন, এটাতেই ওদের আপত্তি। এটা গণতন্ত্রহরণ ছাড়া কিছু না। দিদিকে নিয়ে নিশ্চয় নেতিবাচক কিছু ছিল না, তাহলে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে কোত্থেকে? “
উল্লেখ্য, ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’র গল্প দুই ভিনধর্মী প্রেমিক-প্রেমিকাকে কেন্দ্র করে। রণবীর সিং যেখানে আদ্যোপান্ত পাঞ্জাবী পরিবারের ছেলে, সেখানে পুরোদস্তুর বঙ্গকন্যার ভূমিকায় আলিয়া ভাট। স্টিরিওটাইপ বঙ্গসংস্কৃতি দেখাতে গিয়ে রবি ঠাকুরের শরণাপন্নও হয়েছেন পরিচালক করণ জোহর। আর সেখানেই ঘটেছিল বিপত্তি! যা দেখে রে রে করে উঠেছিলেন বাঙালি নেটিজেনদের একাংশ। সেন্সর বোর্ড সেই দৃশ্য বদলে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছেন। এপ্রঙ্গে দেবাংশু ভট্টাচার্যর কী মন্তব্য?
তিনি বলছেন, “আমার মনে হয়, শিল্পী যে কোনওভাবে তাঁর মতের প্রকাশ করতে পারেন। ভারতবর্ষে এমনও লোক থাকতে পারেন যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চেনেন না। মাদার টেরিজা, বল্লভভাই প্যাটেলদেরও যে সকলেই চিনবেন, তার গ্যারান্টি কেউ দেবেন না। ফলে এরকমই একটা মানুষ যদি প্রথমবার গিয়ে কোথাও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখ দেখেন, তার মনে হতেই পারে যে, ইনি হয়তো সেই পরিবারের বৃদ্ধ কোনও সদস্য। এবার পরিচালক যদি মনে করেন, কোনও মূর্খ মানুষকে প্রোর্ট্রে করবেন, তাহলে চরিত্রকে সেভাবেই সাজাতে হবে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে। সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা ধর্মীয় কোনও বিষয়ে যতক্ষণ না আঘাত হানা হচ্ছে, ততটা অবধি শিল্পীকে স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন।”