গৌতম ব্রহ্ম: রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবু যদি কোনও রোগীর প্লেটলেট বা রক্ত পেতে সমস্যা হয়, তাহলে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’-তে ফোন করুন। রবিবার এমনটাই জানিয়ে দিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা। পাশাপাশি, কো-মরবিডিটি আছে এমন কারও ডেঙ্গু হলে ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শও দিলেন। গোপালিকা জানান, আজকের তারিখে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে সবমিলিয়ে দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে ২৫ জন সংকটজনক। এদেরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রাজ্যে বেশ কিছু ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর জন্য কো-মরবিডিটি দায়ী কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিন নবান্নে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে সঙ্গে নিয়ে সমস্ত জেলাশাসক, পুরসভা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তরের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রসচিব। পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জরুরি ভিত্তিতে এই বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রক্তপরীক্ষা ও জমা জল সরিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের উপর সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।’’ স্বরাষ্ট্রসচিব মনে করিয়ে দেন, ‘‘রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণ ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্লেটলেট এবং রক্ত যথেষ্ট পরিমাণ মজুত রয়েছে। এর পরও যদি কোনও রোগীর সমস্যা হয় তবে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী-তে ফোন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’ উল্লেখ্য, পথ দুর্ঘটনায় জখম বহু রোগীকেও ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’-তে ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: পথের কাঁটা স্বামী! প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শিলিগুড়িতে যুবককে ‘খুন’ স্ত্রীর]
রাজ্যের ১০৭টি সরকারি হাসপাতাল ও ৯৮ টি পুরসভা-সব মিলিয়ে ২০৫ টি জায়গায় ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। চলতি মরশুমে এখনও পর্যন্ত ৯ লক্ষ ডেঙ্গু পরীক্ষা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। এই পরিসংখ্যান তুলে স্বরাষ্ট্রসচিব দাবি করেন, ‘‘পর্যাপ্ত রক্ত পরীক্ষার আয়োজনই ডেঙ্গু মোকাবিলায় সব থেকে বেশি কাজে লাগছে। প্রস্তুতি নেওয়া যাচ্ছে আগেভাগে।’’ তবে গোপালিকা এদিন স্বীকার করে নেন, উত্তর ২৪ পরগনা হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এই জেলাগুলিতে কলকাতা থেকে ‘ডিস্ট্রিক্ট অবজারভেশন টিম’ পাঠানো হবে।
এদিনের বৈঠকে জল জমতে না দেওয়া এবং জমা জল অপসারণের উপর সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে কেন্দ্র এবং রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত সরকারি অফিসকে। বিশেষ করে সতর্ক করা হয়েছে রেলের বিভিন্ন অফিস, ইয়ার্ডকে। বন্ধ কারখানা, বাজারে জমা জল নিয়ে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে পূর্ত, সেচ, পুর-নগরোন্নয়ন দপ্তরকেও। ডেঙ্গু দমনে সবথেকে বড় অস্ত্র যে সচেতনতা তা এদিন বারবার উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রসচিব। জানান, ‘‘জ্বর হওয়ার দুদিন পরে অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। রোগীর যদি ডায়াবেটিস বা অন্য কোনও কো-মরবিডিটি থাকে তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’’ বাড়িতে চিকিৎসাধীনদের প্রচুর পরিমাণে জল খেতে বলা হয়েছে। বারণ করা হয়েছে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ‘ব্যথার ওষুধ’ খেতে।
এদিন স্বরাষ্ট্রসচিব মনে করিয়ে দেন, নিষিদ্ধ হলেও রাজ্যের বহু জায়গায় ‘সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক’ ব্যবহার হচ্ছে। যার জেরে নিকাশি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এগুলি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর আকার নিয়েছে। যার জেরে বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকাতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এই বিষয়টি আগেই উল্লেখ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন স্বরাষ্ট্র সচিব সেই কথা ফের মনে করিয়ে দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালানোর কথা বলেন। উল্লেখ্য, অসমর্থিত সূত্রের খবর, রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়েছে। কলকাতাতেই সংক্রমিতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৫০০। লাগোয়া শহরতলিতেও দাপাচ্ছে সংক্রমণ। ডালপালা মেলেছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে নজরদারি বাড়িয়ে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করল নবান্ন। জানিয়ে দিল, রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।