সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টালিগঞ্জ, গলফক্লাব, নিউ আলিপুর, যোধপুর পার্কের মতো কলকাতার অভিজাত এলাকাতেই মহানগরের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। মূলত তালাবন্ধ ও পরিত্যক্ত বাড়ি এবং জঞ্জালের স্তূপে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার জন্মের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগাক্রান্তের হার শহরের অন্য এলাকার তুলনায় এই অঞ্চলে সর্বাধিক বলে জানিয়েছেন কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। আক্রান্তের হার উত্তর বা মধ্য কলকাতার চেয়ে দক্ষিণের বহুতল প্রধান এলাকায় বেশি ঠিকই তবে একজনও এখনও পর্যন্ত মারা যায়নি বলে দাবি পুরসভার।
[ আরও পড়ুন: রাজীব কুমারের খবর নেই রাজ্য প্রশাসনের কাছেও, সিবিআইকে জানালেন ডিজি ]
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় সোমবার এলাকার পাঁচটি অভিজাত ওয়ার্ড (৮১, ৯৩, ৯৫, ৯৭ ও ৯৯) নিয়ে বৈঠক করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন কলাকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি মেয়র। দ্রুত জমা জঞ্জাল সাফাই থেকে শুরু করে বন্ধ ও পরিত্যক্ত বাড়িগুলি ঢুকে এডিসের লার্ভা ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমনকী বাঘাযতীনে ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি তালাবন্ধ তিনতলা বাড়ির ছাদে মই দিয়ে উঠে ডেঙ্গুর বাহক মশার লার্ভা পেয়েছেন পুরকর্মীরা। পুরআইনের ৫৪৬ ধারায় বাড়ির তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন অতীন। টালিনালা থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি পরিত্যক্ত কারখানা ও সরকারি আবাসনের জন্যই এই সমস্ত অভিজাত এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে বলে ১০ নম্বর বোরোতে হওয়া ডেপুটি মেয়রের বৈঠকে আলোচনা হয়। সাউথ সিটি—সহ বহুতলে ভরা পাঁচটি ওয়ার্ডের অভিজাত এই সমস্ত এলাকায় এসি ও ফ্রিজের সংখ্যা সাধারণ ওয়ার্ডের তুলনায় অনেক বেশি। স্বভাবতই এসি ও ফ্রিজের স্বচ্ছ জলেও প্রচুর পরিমানে ডেঙ্গুর বাহক মশার লার্ভা জন্মায়৷ বৈঠকে রিপোর্ট দেওয়া হয়। তবে গতবছরের তুলনায় এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের হার অনেক কম হয়েছে বলে চিহ্নিত ওয়ার্ডগুলির কাউন্সিলররা দাবি করেন।
[ আরও পড়ুন: কলকাতায় ফের মাদকচক্রের পর্দা ফাঁস, হেরোইন-সহ পুলিশের জালে এক ]
পুরসভার দাবি, ড্রোন দিয়ে আকাশপথে ঘন ঘন নজরদারি করার জেরেই আনোয়ার শা, টালিগঞ্জ, নিউ আলিপুর এলাকার বহুতলের ছাদে এবং পিছনের দিকে ঘিঞ্জি বসতিতেও জমা জলে লার্ভার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বেআইনিভাবে জল জমা ও লার্ভা সৃষ্টির অভিযাগে এর আগেও এই সমস্ত এলাকায় পুরআইনের ৪৯৬ ধারায় জরিমানার নোটিস দেওয়া হয়েছে। এদিনও কয়েকটি বহুতল আবাসনে নোটিস দেওয়ার নির্দেশ দেন পুরকমিশনার। রাসবিহারী মোড় লাগোয়া টালিগঞ্জ পুলিশ আবাসনে ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটাই বাড়াবাড়ি আকার নিয়েছে যে এদিন সেখানেও পরিদর্শনে যান স্বয়ং ডেপুটি মেয়র। কথা বলেন, বাসিন্দাদের সঙ্গেও। আবাসনের বাসিন্দা একাধিক পুলিশ কর্তা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা গত দু’মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। বহুতলের পাইপ ভাঙা থাকায় জল জমে লার্ভা সৃষ্টি হচ্ছে। আবাসনের তরফে কেউ পুরসভার সাফাই ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাহায্য করছে না বলে পুরকর্মীরা পালটা অভিযোগ করেন। ডেপুটি মেয়রের পালটাপ্রশ্ন, “কমিটি করে যদি আপনারা পুজোর আয়োজন করতে পারেন, তবে নিজেদের সুস্থ রাখতে নিজেরাই টিম গড়ে জঞ্জাল সাফাইয়ে নজরদারি করুন।” অবশ্য স্থানীয় কাউন্সিলর ও সাংসদ মালা রায় পাল্টা দাবি করেন, “এই ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর কোনও লার্ভা নেই, অন্যত্র ডিউটি করতে গিয়ে মশার কামড়ে অসুস্থ হতে পারেন আবাসনের পুলিশ কর্মীরা।” ডেঙ্গু রুখতে পুলিশ আবাসন ও সরকারি বাড়ির ভিতরে জঞ্জাল সাফাই নিয়ে লালবাজারের উর্ধ্বতন কর্তা এবং রাজ্য পূর্ত দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলেন ডেপুটি মেয়র।
The post দক্ষিণ কলকাতাতেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ, ঘোষণা পুরসভার appeared first on Sangbad Pratidin.