গৌতম ব্রহ্ম: খলনায়ক কে? বিল্ডিং লাগোয়া বাতিস্তম্ভের শর্ট সার্কিট? না বাতিস্তম্ভ থেকে ঝড়ে পড়া ফুলকির ছোবলে ফেটে যাওয়া ডিও কন্টেনার? দাবানল হয়ে ওঠা ফুলকির নেপথ্যে কে? কার জন্য জতুগৃহ হল বাগরি মার্কেট? কার জন্য এত আগুনের এমন আগ্রাসী চেহারা? দিনভর বাগরি চত্বরে জেগে রইল এই প্রশ্ন। খোঁজ চলল খলনায়কের? আগুনের গন্ধবিচারে ব্যস্ত পু্লিশ থেকে ব্যবসায়ী। দমকলকর্মী থেকে মুটে-মজদুর। কেউ দায় চাপালেন পারফিউম-নেলপালিশের উপর। কেউ প্লাস্টিকের উপর। কেউ আবার বললেন, “জীবনদায়ী ওষুষই জীবন নিল বাগরির!” খলনায়ক হওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার, প্লাস্টিকের খেলনা, স্পিরিট, নকল গয়না তৈরির রাসায়নিক, চাইনিজ ঘাস।
[বাগরি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন দিলীপ ঘোষ]
আগুন লাগার ১০ ঘণ্টা পর দমকলকর্মীরা বাগরি মার্কেটের ভিতর ঢোকেন। দেখা যায়, সিঁড়ি-মেঝে জুড়ে ডাই করে রাখা প্লাস্টিক আর রাসায়নিক। বাথরুমের সামনেও ওষুধের পেটির পাহাড়। ওষুধ মানে তো শুধু ট্যাবলেট নয়। স্পিরিট, সিরাপ, ইঞ্জেকশনের মতো অত্যধিক দাহ্য পদার্থও। যা এদিনের আগুনকে নিভতে দেয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে সন্দেহের শীর্ষে সেই ফুটপাথের ডালায় প্লাস্টিক মুড়ি দিয়ে থাকা ডিও কন্টেনার। ডিও কন্টেনার থেকে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফুটপাথের দোকানে মজুত ডিও-স্তূপ তো দাবানল তৈরি করতেই পারে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ডিও-তেই অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। যাতে প্রোপেন, আইসোবুটেন, বুটেন ও অন্যান্য অতি দাহ্য রাসায়নিক ‘কম্প্রেসড’ অবস্থায় থাকে। ডিও এতটাই দাহ্য যে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তাই সূর্যের আলো থেকে ডিও কন্টেনারকে দূরে রাখাটাই দস্তুর। কন্টেনারের গায়ে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণও রয়েছে সেই মর্মে। যদিও চূড়ান্ত কারণ বলবেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, আগুন নেভার পরেই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা উৎসস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন। তারপর তার ময়নাতদন্ত হবে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিন দারোয়ান। দীননাথ দুবে, শিবরাম সিং ও প্রদীপ সিং। তিনজনই জানিয়েছেন, সি গেটের একটি ফুটপাথের দোকানে মজুত ডিও-পারফিউম বিক্রির দোকানে বাতিস্তম্ভে শর্ট সার্কিট হওয়া ফুলকি এসে পড়ে। তারপরই একটি আগুনের গোলা গ্রাস করে বাগরি মার্কেটের নিচতলা। তারপর সেই আগুন আস্তে আস্তে সিঁড়িতে মজুত দাহ্য পদার্থের হাত ধরে উপরে উঠতে থাকে। ওই ফুটপাথের দোকানদারই ১০০ নম্বরে ডায়াল করে দমকলকে প্রথম আগুন লাগার খবর দেন। বাজারের ভিতরের দোকানিরাও মেনে নিয়েছেন, ওষুধের ‘হোল সেল’ দোকানেও প্রসাধনী বিক্রি হত। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ডিও থেকে শুরু বলেই আগুন এমন আগ্রাসী চেহারা নিয়ে ছড়িয়েছে।
[বৃদ্ধা মাকে খোলা বারান্দায় ফেলে বেড়াতে গেল ছেলে-বউমা]
The post ১০০ টাকার ডিওতে জতুগৃহ কোটি টাকার বাগরি! appeared first on Sangbad Pratidin.