shono
Advertisement

আফটার শক! নেপালিদের গন্তব্য কলকাতা

কাঁপুনির নেপালে ঘরছাড়ার জ্বর যেন জাঁকিয়ে বসেছে! The post আফটার শক! নেপালিদের গন্তব্য কলকাতা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:18 PM Aug 02, 2016Updated: 10:48 AM Aug 02, 2016

তরুণকান্তি দাস: আফটার শক! রোজ কাঁপছে নেপাল৷ আর ভয়ে ঘর ছাড়ছেন একের পর এক নেপালবাসী৷ এবং অধিকাংশের গন্তব্য এখন কলকাতা৷ যাকে ঘরের পাশের ঘর বলে আঁকড়ে ধরছেন তাঁরা৷ গত কয়েকমাস ধরে এটাই নেপালের ট্রেন্ড৷ যা সামলাতে হিমশিম কলকাতায় অবস্থিত নেপাল কলস্যুলেটের অফিস৷ এবং এখানকার ভারতীয় দূতাবাস৷ কেন না কলকাতায় পাকাপাকি আস্তানা চেয়ে নাগরিকত্বের জন্য দরবার চলছে যে!
গত বছর এপ্রিলের ভূমিকম্পে নেপালের যেন অর্থনৈতিক পাতাল প্রবেশ ঘটেছে৷ এখানে যার নাম, ‘গোর্খা কম্পন’, তার জেরে কাঠমান্ডু ভ্যালি থেকে দরবার স্কোয়ার, একের পর এক দর্শনীয় বিশ্বমানের স্থাপত্যের ধ্বংস দেখেছে দুনিয়া৷ প্রায় আট হাজার মানুষের মৃত্যুতে নেপালবাসী হারিয়েছেন পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন৷ আর এখন কেউই যেন আস্থা রাখতে পারছেন না প্রকৃতির উপর৷ যে প্রকৃতির ধ্বংসলীলার ছাপ কাঠমান্ডুর পরতে পরতে৷ কোথাও শহরের শরীরে, কোথাও বা শহরবাসীর মনে৷ সগরমাতার কোলে শান্ত-স্নিগ্ধ দ্বিতীয় ‘সুইজারল্যান্ড’ হিসাবে পরিচিত এ কোন নেপাল! প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভারাক্রান্ত মুখ এখানকার সরকারি আধিকারিক থেকে কোনওক্রমে এখনও সরকারি-বেসরকারি শিবিরে দিন গুজরান করা মানুষের৷ যাঁদের ট্রমা এখনও কাটেনি৷
তারই মধ্যে উঠে আসছে এক অবাক করা তথ্য৷ গত বছর এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ১৭০০ বার কেঁপেছে হিমালয়ের কোলঘেঁষা দেশটি৷ এখানকার খনি ও ভূতত্ত্ব দফতরের মুখপাত্র কৃষ্ণদেব ঝা বলছেন, “এমনও হয়েছে একদিনে ১০ থেকে ১২ বার ভূমিকম্প ধরা পড়েছে৷ মাত্রা বেশি নয় বলেই রক্ষা পেয়ে যাচ্ছি৷” কিন্তু ঘর ছাড়ছেন নেপালের বহু মানুষ৷ এবং অবশ্যই এখানে ব্যবসা অথবা নানা কারণে দীর্ঘদিন ঘাঁটি গেড়ে করে-কম্মে খাওয়া লোকজনও৷ বিশেষ করে যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, তাঁদের সংখ্যাই এ ক্ষেত্রে বেশি৷ তবে সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো তথ্য হল, এঁদের অধিকাংশের প্রথম পছন্দ পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে কলকাতা৷ যে শহরকে তাঁরা বলছেন, “সস্তা ও নিরাপদ”৷
সত্যিই তাই, নিউ আলিপুরে যে পরিবারটি ঘাঁটি গেড়েছে তাঁদের ছেলে থাকেন আমেরিকায়৷ আপাতত বাবা-মাকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই নেট ঘেঁটে কলকাতাকেই আপাতত নিশ্চিত ঠাঁই বলে মনে হয়েছে তাঁর৷ কলকাতায় নেপাল কনস্যুলেটের দ্বারস্থ হন তিনি৷ সেখানকার এক কর্মী আপাতত এগারো মাসের চুক্তিতে ঘরভাড়া করে দিয়েছেন তাঁদের জন্য৷ স্বামী-স্ত্রী সেখানেই রয়েছেন৷ আর একটি পরিবার আস্তানা গেড়েছে সল্টলেকে৷ তাঁর মেয়ে এখনও থাকেন নেপালে৷ তবে মাঝেমধ্যে কলকাতা যাচ্ছেন৷ দেখভাল করছেন৷ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে ফিরছেন৷ অপেক্ষায় রয়েছেন নিজের দেশের জমিবাড়ি বিক্রি করে টাকা পয়সা নিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলার৷
কান্তাপ্রসাদ ছেত্রী, কমল নারায়ণ, প্রেমা বাহাদুররা কেউ থাকেন বাইপাসের ধারে ফ্ল্যাট ভাড়া করে৷ কারও আস্তানা বিমানবন্দরের অদূরে মাইকেলনগর৷ কান্তাপ্রসাদ যেমন ফোনে বলেছেন, “জন্মভিটে-মাটি ছেড়ে আসতে কারই বা ভাল লাগে বলুন৷ কিন্তু কী করা যাবে? আমার মেয়ে চাকরি করে নেপালে৷ এখন পাত্র খুঁজছি কলকাতায়৷ নেপালের যাঁরা এখানে থাকেন, তাঁদের পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিলে ওখানকার সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে আসবে৷” অনেকে নেপালের নাগরিকত্ব ছাড়তে চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন৷ কেউ চান ভারতের নাগরিকত্ব৷
কাঠমান্ডুর থামেল শহর হল সবচেয়ে অভিজাত এলাকা৷ সেখানে ঠিক কতদিন আগে তাঁর পূর্বপুরুষরা এসে জমিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তা মনে করতে পারেন না শিউজি কেলকর৷ শুধু এখন বলতে পারছেন, “ছেলেটাকে মুম্বই পাঠিয়ে দিয়েছি৷ পড়াশোনা করুক৷ যদি ইন্ডিয়াতে একটা কিছু করতে পারে৷ আমাদের আর ক’দিন? আর এখানে তো রোজ কাঁপুনির দিন গোনা৷ কতদিন আর এভাবে চলবে?” বজং, কালিকট, দোজাখা, লামজুং, সিন্ধুপালচকে কাঁপুনির জেরে নতুন নির্মাণ দূরে থাক, ভেঙে পড়া বাড়ি মেরামতেও সাহস পাচ্ছেন না কেউ৷ তাঁদের কাছে বিদেশ না হোক স্বদেশেই অন্য কোথাও, অন্য কোনও নিরাপদস্থান এখন আপাত-গন্তব্য৷
সত্যিই! কাঁপুনির নেপালে ঘরছাড়ার জ্বর যেন জাঁকিয়ে বসেছে!

Advertisement

The post আফটার শক! নেপালিদের গন্তব্য কলকাতা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement