সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: প্রায় পাঁচমাস আগে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নাবালিকাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের এক গ্রাম থেকে সেই নাবালিকাকে উদ্ধার করে আনল ডায়মন্ড হারবার মহিলা থানার পুলিশ। ফেসবুকে আলাপ হওয়া উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) এক যুবক কলকাতায় (Kolkata) এসে সেখান থেকেই নাবালিকাকে প্রলোভন দেখিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। নাবালিকার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি থেকেই তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
মার্চ মাসে ডায়মন্ড হারবারের বাশুলডাঙা এলাকা থেকে হঠাৎই উধাও হয়ে যায় ১৭ বছরের এক কিশোরী। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর ওই নাবালিকার মা ডায়মন্ড হারবার মহিলা থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নামে মহিলা থানার পুলিশ। জুলাইয়ের শেষে পুলিশ ওই কিশোরীর হদিশ পায়। তার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানার সীমানা লাগোয়া বাগপতে কিশোরীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নাবালিকাকে উদ্ধার করতে মহিলা থানার অফিসার ইনচার্জ পিঙ্কি ঘোষের নেতৃত্বে দুই মহিলা ও এক পুরুষ কনস্টেবলকে নিয়ে চারজনের একটি উদ্ধারকারী দল রওনা হয়ে যায় উত্তরপ্রদেশের বাগপত গ্রামের আশাড়া গ্রামে। মহিলা থানার ওসি জানান, মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ধরে গত ৯ আগস্ট তাঁরা ওই গ্রামে ঢোকেন। ওইদিন রাতে তাঁরা হানা দেন স্থানীয় যুবক হাসিন আলভির বাড়ি। সেই বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয় অপহৃতা কিশোরীকে।
[আরও পড়ুন: মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদে ইন্ধন পরকীয়ায় জড়িত মায়ের! ক্ষোভে শাশুড়িকে ‘খুন’ জামাইয়ের]
তিনি জানান, ফেসবুকে কিশোরীর সঙ্গে আলাপ হওয়া যুবক হাসিনই তাকে কলকাতায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বলে। কিশোরী কলকাতায় পৌঁছলে সেখান থেকেই ওই যুবক তাকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পাড়ি দেয়। অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে কয়েকদিনের মধ্যেই ওই নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল যুবকটির পরিবারের। তার আগেই কিশোরীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে মহিলা থানার ওসি জানান। তবে অভিযুক্ত যুবক পুলিশী অভিযানের কথা জেনে যাওয়ায় আগেভাগেই পালিয়ে যায়। উদ্ধার হওয়া কিশোরীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে। শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার আদালতে তার গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে মেয়ের উদ্ধারের খবর পেয়ে কিশোরীর মা এদিন মহিলা থানায় এসে মেয়েকে হেফাজতে নেন। ধন্যবাদ জানান মহিলা থানার ওসি-সহ উদ্ধারকারী গোটা দলকেই। ডায়মন্ড হারবার সিনি-চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর দেবারতি সরকার জানিয়েছেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এভাবেই নাবালিকাদের ভুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। কেউ উদ্ধার হচ্ছেন। কেউবা হারিয়ে যাচ্ছেন চিরকালের জন্য। নারী পাচারচক্রের হাত থেকে কিশোরীদের রক্ষায় তাদের সচেতন করতে গ্রামেগঞ্জে বহু সেমিনারও করছেন তাঁরা। কিশোরীদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।