shono
Advertisement

Breaking News

বারো মাসে তেরো খরচ

যে টাকা এই পুজোর বাজারে খাটছে, তা যদি পরিকল্পনা করে কোনও একটি উৎপাদক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেত, তা হলে তার অবদান নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে অনেক সুদূরপ্রসারী হত৷ The post বারো মাসে তেরো খরচ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:36 PM Oct 04, 2016Updated: 06:06 PM Oct 04, 2016

পুজোকে ঘিরে রাজ্যে একটি বিশাল অঙ্কের ব্যবসা হয়৷ যে টাকা এই পুজোর বাজারে খাটছে, তা যদি পরিকল্পনা করে কোনও একটি উৎপাদক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেত, তা হলে তার অবদান নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে অনেক সুদূরপ্রসারী হত৷ সুতীর্থ চক্রবর্তী

Advertisement

পুজোকে ঘিরে রাজ্যে কী কী ব্যবসা হয় সে সম্পর্কে প্রতিবছরই পুজোর আগে আকর্ষণীয় তথ্য উঠে আসে৷ এবার যেমন জানা গেল, পুজোয় কলকাতা শহরেই শুধু কয়েক কোটি টাকার বাঁশের ব্যবসা হয়৷ এখন থিম পুজোর যুগ৷ নানা মাপের সঙ্গে নানা মানের বাঁশ প্রয়োজন হয়৷ শুধু মেদিনীপুরের মোটা বাঁশ দিয়ে পুজোর সাজ হয় না৷ থিম পুজোর উদ্যোক্তাদের বাঁশ আনতে হয় অসম, ত্রিপুরা থেকে৷ বাঁশের ব্যবসার মতোই আরও একটি মজাদার ব্যবসার তথ্য এবার উঠে এসেছে৷ পুজোকে ঘিরে নাকি এখন নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যাপক চাহিদা৷ বহু পুজো কমিটি প্রতিমার গায়ে দামি গয়না লাগাচ্ছে৷ দর্শক টানার এটি একটি নতুন চমক৷ দামি গয়না লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে নিরাপত্তাকর্মীদের৷ এই পুজোর ক’দিন কলকাতার নিরাপত্তা সংস্থাগুলিও নাকি কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা করে৷

কিছুদিন আগে এক বণিক সভা হিসাব দিয়েছিল পুজোকে ঘিরে রাজ্যে মোট ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়৷ টাকার অঙ্কটা খুবই বড় শোনাচ্ছে৷ জানা নেই এই বণিক সভা কোনও সমীক্ষার পর তথ্যটি হাজির করেছিল কি না৷ যদিও পুজোকে ঘিরে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবসা হয় যে পুরো হিসাবটি পাওয়া খুব কঠিন৷

পুজোকে ঘিরে সবচেয়ে বড় ব্যবসা নিঃসন্দেহে জামাকাপড়ের৷ এখন জামাকাপড়ের ব্যবসা মানেই রেডিমেড পোশাক৷ এর একটি বড় অংশ জোগান দেয় অন্য রাজ্যগুলি৷ ফলে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে পুজোয় রাজ্যবাসীর খরচ করা টাকার একটা সিংহভাগ রাজ্যের বাইরেই চলে যায়৷ ইদানীং পুজো কমিটিগুলির বাজেট বিশাল৷ কলকাতার কয়েকটি বড় বড় পুজো কোটি টাকার উপর বাজেট করে৷ অনেকেরই বাজেট ৫০-৬০ লক্ষ টাকা৷ গোটা রাজ্যে পুজোর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার৷ পুজো কমিটির বাজেট যোগ করলেই দেখা যাবে, বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে মণ্ডপ বানাতে, প্রতিমা কিনতে ও আলো লাগাতে৷ পুজো কেন্দ্রিক শিল্পে সারা বছর রাজ্যে কত মানুষ কাজ করেন তার কোনও হিসাব নেই৷ মনে হয় না সংখ্যাটা খুব বেশি হবে৷ পুজোর দু’তিন মাস আগে থেকে কিছু কাজের সুযোগ তৈরি হয়৷ আজকাল পাড়ার দোকানগুলির ব্যবসাও আর আগের মতো নেই৷ ফলে সেখানেও যে কাজের সুযোগ, তাও নয়৷ প্রতিমা বানানো, মণ্ডপ বানানো, আলো লাগানো ইত্যাদি কয়েক মাসের কাজ৷ কর্মসংস্থানের দিকটি বিচার করলে পুজোর অবদান অর্থনীতিতে বিশাল, এমনটা বলা যায় না৷

কিন্তু পুজোকে ঘিরে রাজ্যে একটি বিশাল অঙ্কের ব্যবসা হয়৷ যে টাকা এই পুজোর বাজারে খাটছে, তা যদি পরিকল্পনা করে কোনও একটি উৎপাদক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেত, তা হলে তার অবদান নিঃসন্দেহে অর্থনীতিতে অনেক সুদূরপ্রসারী হত৷ এই টাকা লগ্নি করে কলকারখানা ইত্যাদি বানালে তা থেকে যেমন অনেক বেশি কর্মসংস্থান হত, তেমন সেই টাকা অর্থনীতিতে চক্রাকারে আরও বেশি পরিমাণ উৎপাদন ভবিষ্যতে সৃষ্টি করতে পারত৷ কোনও উৎসবকে ঘিরে যদি দেশের প্রচুর সম্পদের অপচয় হয়, তা হলে তা ঘুরিয়ে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবই ফেলে৷ সেই কারণে পুজোর খরচ বা পুজোকে ঘিরে ব্যবসার অঙ্ক আমাদের প্রাথমিকভাবে উৎসাহ দিলেও গভীরভাবে বিচার করতে হবে যে এই পরিমাণ টাকা খরচ করে দিনের শেষে আমরা কী পেলাম৷ এই টাকার কতটা বাজে খরচের তালিকায় চলে গেল৷

পুজোকে ঘিরে জুতো-জামাকাপড়ের যে ব্যবসা তা অবশ্যই অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক৷ কিন্তু যে পরিমাণ বিদ্যুত্‍ খরচ হয় তার কতটা আমাদের মতো দরিদ্র দেশে অপচয়, সেই হিসাব জরুরি৷ এই পরিমাণ বিদ্যুত্‍ উৎপাদন করতে সরকারের কত খরচ হয় তা হিসাব করা দরকার৷ সেই খরচ বাঁচাতে পারলে তা অন্য খাতে খরচ হতে পারত৷ এইভাবে সব অপচয়গুলিকে যোগ করতে পারলে দেখা যাবে যে পুজোর ব্যবসা নিয়ে আহ্লাদ করার মতো কিছু থাকে না৷ আমাদের দেশে অবশ্য সব রাজ্যেই এইরকম নানা উৎসব রয়েছে৷ সব উৎসবেই এইরকম জাতীয় সম্পদের অপচয় রয়েছে৷ অপরিকল্পিত খরচ রয়েছে৷ দারিদ্র থাকলেও আমরা তো আসলে বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশের লোক৷

The post বারো মাসে তেরো খরচ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement