অভিরূপ দাস: গরম কড়াই থেকে এবার কি সোজা উনুনের মধ্যে? মারণ করোনা ভাইরাস (Coronavirus) ঠেকাতে টিকা নিয়ে চিকিৎসকদের আশঙ্কা তেমনটাই। কোভ্যাক্সিন আর কোভিশিল্ড – দেশে আপাতত এই দুই প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। ভারত বায়োটেক আর সেরাম ইনস্টিটিউটের এই দুটি টিকার কাজ নিয়ে সন্দিহান চিকিৎসকরা। ‘ভ্যাকসিন নিতে ভয়? নিলে কী সমস্যা?’ – রবিবার এই শীর্ষক এক আলোচনায় হাজির ছিলেন বাংলার চিকিৎসকদের একাংশ। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের সেই আলোচনাতেই উঠে এল টিকা নিয়ে হাজারও আশঙ্কা।
ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডা. শান্তুনু ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, টিকা নিয়ে স্বচ্ছতার বিস্তর অভাব। তাঁর যুক্তি, প্রতিটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। এখনও পর্যন্ত যে রিপোর্ট এসেছে, তা দেখতে পারছেন টিকা নির্মাণকারী সংস্থাও। শুধুমাত্র সরকারের কাছেই ওই রিপোর্ট রয়েছে। ডা. ত্রিপাঠীর দাবি, ওই রিপোর্ট জনগণের সামনে নিয়ে আসা হোক। যাতে চিকিৎসকরাও বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন আদৌ কতটা কার্যকরী ভ্যাকসিনগুলি (vaccine)।
[আরও পড়ুন: বিশ্বের ৭৫% ভাইরাস ঘটিত রোগ প্রাণীবাহিত, কেন একথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা?]
এদিকে ফোন করলেই কলার টিউনে বাজছে টিকার উপযোগিতার কথা। সার্বিকভাবে প্রচার চলছে টিকা ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। এমন প্রচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডা. গৌতম দাস। কোভ্যাক্সিনের লিটারেচারের ছাপানো তথ্য তুলে তিনি জানিয়েছেন, “খোদ টিকার লিটারেচারেই লেখা রয়েছে যদি আপনার কোনও ধরনের অ্যালার্জি থাকে, রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে, গর্ভবতী হন, কিংবা সদ্যোজাতকে স্তন্যপান করান তাহলে টিকা নেবেন না। তারপরেও কীভাবে টিকা নিয়ে সার্বিক প্রচার চলছে।”
কোভ্যাক্সিনের উপাদানের নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। ডা. গৌতম দাস জানিয়েছেন, কোভ্যাক্সিনে ৬ মাইক্রোগ্রাম হোল ভিরিয়ন অ্যান্টিজেন, ২৫০ মাইক্রোগ্রাম অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সি জেল, ১৫ মাইক্রোগ্রাম টিএলআর ৭ এবং ২৫০০ মাইক্রোগ্রাম ফেনোক্সিথানোল রয়েছে। তাঁর কথায়, উপাদানের অ্যালুমিনিয়াম শরীরের ইলেকট্রো কেমিক্যাল সুইচিং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে সাধারণ হজম ক্ষমতায় প্রভাব পরবে।
প্রশ্ন উঠেছে কোভিশিল্ড (Covishield) নিয়েও। চিকিৎসকরা বলেছেন খোদ কোভিশিল্ড নির্মাতারাই জানিয়েছে এই টিকায় জিএমও বা জেনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজম রয়েছে। শিম্পাঞ্জির অ্যাডিনোভাইরাসকে জেনেটিকালি মডিফাইড করে মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডা. গৌতম দাসের কথায়, এটা সম্পূর্ণ অপরিক্ষীত প্রযুক্তি। এখানে অ্যাডিনো ভাইরাসকে সিমিয়ান ভাইরাস৪০ এর সঙ্গে মেশানো হয়েছে। এই সিমিয়ান ভাইরাস ৪০ এইচআইভি পজিটিভের কারণ!
[আরও পড়ুন: অ্যালার্জি থাকলেও নেওয়া যাবে করোনার টিকা, তবে মানতে হবে সতর্কতা]
ইউরোপের ১৭ টা দেশ ইতিমধ্যেই টিকার ট্রায়াল বন্ধ রেখেছে। চিকিৎসকরা বলছেন ২০২৩ এর এপ্রিল, মে’র আগে এই দুই টিকা নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য সামনে আসা সম্ভব নয়। এরপরেও টিকা নিলেই সমস্যার সমাধান হবে এমন যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। বয়স্কদের জোর করে টিকা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন ছেলেমেয়েরা। ডা. সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, এমনটা করার আগে মনে রাখবেন মূলত ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের উপর টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে। আর বলা হচ্ছে ষাটোর্ধ্বদের আগে টিকা দিতে হবে। এর কি বৈজ্ঞানিক কোনও যুক্তি আছে? টিকা নেওয়ার আগে অবশ্যই ভ্যাকসিনেটরকে জানান –
- আপনার কোনওরকম অ্যালার্জি আছে কি না।
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান কি না।
- শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে কি না।
- সন্তানসম্ভবা কি না।
- বাচ্চাকে স্তন্যপান করান কি না।
- টিকা নির্মাণকারী সংস্থা বলছে উপরোক্ত এমন লোকেদের টিকা নয়।
- ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সমস্ত তথ্য পাবলিক ডোমেইনে আনার দাবি চিকিৎসকদের।
- চিকিৎসকদের আশঙ্কা কোভ্যাকসিন থেকে নষ্ট হতে পারে হজম ক্ষমতা। কোভিশিল্ড থেকে HIV পজিটিভের আশঙ্কা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে যে সমস্ত টিকা প্রি কোয়ালিফিকেশন স্তরে অ্যাপ্রুভ হয়েছে শুধুমাত্র তা থেকে কোনওরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তবেই দায়িত্ব নেওয়া হবে। কোভ্যাক্সিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রি কোয়ালিফিকেশন স্টেজে ছাড়পত্র পায়নি।