সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ২ বছর ৮ মাস বয়সের এক শিশুর খাদ্যনালীতে আটকে ছিল সেফটিপিন। জটিল অস্ত্রোপচারে প্রাণ বাঁচাল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত খুদে।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর থানার হরিণবাড়ির বাসিন্দা দু’বছর আট মাসের শিশু সৌরনীল জানা। খেলতে খেলতে একটি বড় মাপের মুখখোলা সেফটিপিন মুখে দিয়ে ফেলেছিল সে। তারপর সেটি গিলে ফেলে। সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা এক্স-রে প্লেটে দেখেন, সেফটিপিনের খোলা মুখটি খাদ্যনালীতে আটকে রয়েছে। ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক ডা: দীপ্তেন পাল জানান, মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন থিয়েটারে সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করেন।
[আরও পড়ুন: ‘আমার গায়ে কালি ছেটালে, আমার কাছে আলকাতরা আছে’, SSC দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদের পালটা তোপ মমতার]
হাসপাতালের দুই অ্যানাসথেসিস্ট ডা: অর্ণব সরকার ও ডা: রূপম জানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মাইক্রোসার্জারি শুরু করেন। ডা: পাল বলেন, “মাইক্রোসার্জারির কাজটি খুব সহজ ছিল না। বরং রীতিমতো চ্যালেঞ্জিংই ছিল। মাছের কাঁটা বা পয়সা খাদ্যনালীতে ঢুকে গেলে মাইক্রোসার্জারি করে তা বের করা সহজ। কিন্তু যেহেতু বড়সড় সেফটিপিনটি খোলা অবস্থায় ছিল এবং সেফটিপিনের খোলামুখটি উপরদিকে ছিল তাই সাধারণভাবে মাইক্রোসার্জারিতে বের করা হলে রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা ছিল। খাদ্যনালী ফুটো হয়ে যেতে পারতো। তাছাড়া খাদ্যনালীর পিছনেই রক্তের ধমনী ও গুরুত্বপূর্ণ শিরা রয়েছে। সেফটিফিনের খোলামুখের খোঁচা সেসব জায়গায় লেগে গেলেও বিপদের আশঙ্কা ছিল। তাই খাদ্যনালীর ভিতরে নল ঢুকিয়ে সেফটিপিনটি প্রথমে পুরোপুরিভাবে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে খোলা মুখটি উপরদিক থেকে নিচের দিকে আনা হয়। এদিকে শিশুটির বমি ও কাশিও হচ্ছিল।”
ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে এই ধরণের মাইক্রোসার্জারি এই প্রথম বলেই জানান চিকিৎসক পাল। রাজ্যেও একমাত্র এসএসকেএম হাসপাতালে এই ধরনের অপারেশন করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। ইএনটি বিভাগের ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে শেষপর্যন্ত মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমেই শিশুর খাদ্যনালী থেকে খোলামুখের সেফটিপিনটি বের করে আনতে সক্ষম হন তাঁরা। ডায়মন্ড হারবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সুপ্রীম সাহা জানান, “মাইক্রোসার্জারি করে ওই শিশুর খাদ্যনালী থেকে সেফটিপিনটি বের করে আনার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটিকে সাধারণ বেডে রাখা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে মুখ দিয়েই খাওয়াদাওয়া করছে। এককথায়, শিশুটি বর্তমানে হাসপাতালে সুস্থ ও স্বাভাবিকই রয়েছে।” হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ডা: উৎপল দাঁ জানান, হাসপাতালের এই সাফল্যে তিনি গর্বিত। এই জটিল মাইক্রোসার্জারির কাজে যুক্ত তিন চিকিৎসককেই তিনি ধন্যবাদ জানান। শিশুরোগীর বাবা রূপঙ্কর জানা ছেলেকে প্রাণ সংশয়ের হাত থেকে রক্ষা করায় চিকিৎসকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।