রমেন দাস: দুর্গাপুজো কার? কোনও ধর্ম, জাতি অথবা নির্দিষ্ট কিছুর! এই প্রশ্নের অন্তরালে বারবার বিতর্ক সৃষ্টি হয় দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2023) ‘বিশেষীকরণ’ নিয়েও। কিন্তু ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ স্লোগানে ভর করে যদি তলিয়ে দেখা যায়, এই পুজো সত্যিই সবার। কেউ কেউ বলেন, রাজনীতি-স্লোগান, দলাদলিরও মধ্যেও এক বাক্যে বলা যায় পুজো কিন্তু সবার!
কেন বলছি একথা? দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম পুজোর মধ্যে মুদিয়ালি ও শিবমন্দিরের পুজো বিখ্যাত। ভিড়ের ক্ষেত্রে এবারও তার অন্যথা হয়নি ওই পুজো মণ্ডপে। কিন্তু এখানেই রয়েছে ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহানে’র এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মুদিয়ালির (Mudiali Club Kolkata) পুজো দেখে বেরনোর পথে ধরে সোজা মূল রাস্তার দিকে এগোলেই চোখে পড়ে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একাধিক যুবক।
তাঁরা প্রত্যেকেই একটি পিচবোর্ডে কিছু ছোট ছোট বেলুন সেঁটে ডাকছেন ওই বন্দুকের গুলি ছোঁড়ার জন্য! নাহ, এখানে কোনও প্রতিশোধ নেই, নেই হানাহানিও! শুধু পেটের দায়ে পুজো কাটানোর অঙ্গীকার রয়েছে ওঁদের। কারা ওঁরা? কলকাতার একাধিক জায়গায় ভিড় জমানোদের দল থেকে খানিকটা দলছুট ওঁরা। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায়। কেউ এসেছেন কুলপি থেকে, কেউ এসেছেন জয়নগর থেকে।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2023: লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ কি সত্যিই দেবী দুর্গার সন্তান?]
কারও বাড়ি লক্ষ্মীকান্তপুরে। আফসার গায়েন, রাজ্জাক মোল্লা, হাফিজুল মোল্লারা পুজো শুরুর কয়েক দিন আগেই হাজির হন কলকাতায়। সেখানেই প্রায় ১০ দিন ধরে চলে তাঁদের কাজ। পুজো কমিটিকে আয় না থাকলেও নির্দিষ্ট পরিমাণের ‘হপ্তা’ দিয়েই ‘দাদা, আসুন, দিদি আসুনে’ই পেট ভরানোর রসদ খোঁজেন ওঁরা। সারা বছর রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ অথবা কোনও প্ল্যান্টে কাজ করেও পুজোর সময় বেশি রোজগারের আশায় কলকাতায় আসেন মহম্মদ আজগাররা।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2023: ‘পরিবর্তনের জন্য যা করার করব’, পুজো উদ্বোধনেও রাজনীতির কথা শাহর মুখে!]
যুবক হাফিজুল বলছেন, ”আমরা আসি শুধু আয়ের নেশায়। পরিবার ছেড়ে এই রাস্তার ধারেই কাটিয়ে দিই দিনের পর দিন, আগের মতো আয় নেই আর!” প্রায় একই সুর রাজ্জাকের গলায়। তাঁর কথায়, ”এখানেই থাকি। কিছু টাকা দিতে হয়। কিন্তু কাজের জন্য সেটা তো করতেই হবে।” এখানেই ওঠে প্রশ্ন। হিন্দুর দুর্গাপুজো মুসলমানের পেটের ভাত জোগায়? আজগারদের কথায়, ”এই প্রশ্ন আজও ওঠে ঠিকই কিন্তু আমরা তো বাঙালি, মনে হয় এই রাজ্য বলেই এতটা স্বাধীন সবাই। এখানে ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়!” কোথাও ধর্মের নামে দাঙ্গা, কোথাও ধর্মকে কেন্দ্র করেই খুন! রক্তাক্ত ধার্মিক ইতিহাসে মন্দির, মসজিদ, গির্জার আবহ অশান্তিও খুঁজে নেয় বারবার। ঠিক সেখানে দাঁড়িয়েই একটি পুজো আর একাধিক ভালো থাকার উপজীব্যে এমন সাধারণ উদাহরণকেও অসাধারণই বলছেন কেউ কেউ।