অরূপ বসাক, মালবাজার: মা আসছেন, সেই আনন্দে মেতে উঠেছে গোটা দেশের মানুষ। সেই আনন্দের ঢেউ এবার প্রথম আছড়ে পড়লো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬২০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের কোলে ঝান্ডি ও সুন্তালে এলাকায়। সেই আনন্দে মেতে উঠেছে পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয় মানুষ জন। কালিম্পং জেলার গরুবাথান ব্লকের পাহাড়ের কোলে ছোট্ট দুটি গ্রাম ঝান্ডি ও সুন্তালে। নিজের মনোরম পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে এই দুই গ্রাম। দিনমান দেখা যায় মেঘ ও রোদের খেলা। শীতের দিনে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায় দুই গ্রাম। এদিকওদিক মিলিয়ে গোটা চল্লিশ পরিবারের বাস। জীবিকার প্রধান উৎস এলাচ ও ঝাড়ুর চাষ এবং পশুপালন।
সম্প্রতি কয়েকটি হোমস্টে গড়ে উঠেছে এই দুই গ্রামে। এতেই শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। সৃষ্ঠি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। পাহাড়ের এতো উচুতে হিমালয় কন্যার আগমন উপলক্ষে পুজার আয়োজন হয়নি। হবেই বা কি করে? মুষ্টিমেয় কিছু লোকের পক্ষে পাহাড়ের এত উপরে আয়োজন করা হয়ে ওঠেনি। তাই এখানের মানুষজন পুজোর কয়দিন নিচে গরুবাথান এলাকায় পুজা দেখার আনন্দ পেত। দক্ষিণবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ী শুভম পোদ্দার কয়েকবছর আগে এখানে গড়ে তুলেছেন এক হোমস্টে। ঝান্ডিতে রয়েছে ৫-৬টি হোমষ্টে। আর এই ঝান্ডিতে এবার হচ্ছে দুর্গা পুজো। বাইরে থেকে আসছে পুরোহিত এবং ঢাকি। তাই তাদের জন্য এক দুটো হোমষ্টে পুজোর কটা দিন ছেড়ে দিতে হবে।
[আরও পড়ুন: পুজোর উপহার! দেউচা-পাঁচামি প্রকল্পে সরকারি প্যাকেজে মিলবে আরও আর্থিক সাহায্য]
চলতি বছর তার উদ্যোগে প্রথম পাহাড়ের উপরে পর্বতরাজ হিমালয় কন্যা উমার আরাধনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ” ঝান্ডি- সুন্তালে ইউনাইটেড ক্লাব”। পুজার নাম দেওয়া হয়েছে ” স্বর্গের দুর্গাপুজো”।
শুভমবাবু নিজের মুখে জানালেন, পাহাড়ে থাকার এক অভিলাষ ছিল। সেই ইচ্ছেপূরণ করতে এখানে হোমস্টে গড়ে তুলেছি। এখন বহু পর্যটক আসেন পুজোর মধ্যে। এখানে থাকতে গিয়ে দেখেছি পুজোর কয়েকদিন স্থানীয়রা আর পর্যটকরা পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে না পেরে হাঁ হুতাশ করতেন। তাই গত একবছর ধরে উদ্যোগ নিয়ে এবার পুজোর আয়োজন শুরু করেছি। স্থানীয়রা সাহায্য করছেন। পুজোর জন্য প্রতিমা আসছে মালবাজার শহর থেকে। শিল্পী সুবল পাল। পুরোহিত আসছেন ময়নাগুড়ি থেকে। জোরা ঢাকি আসবে সুদূর কলকাতা থেকে। পুজোর কদিন চলবে নানা অনুষ্ঠান ও ভোগপ্রসাদ বিতরণ। পুজার পর কলকাতা ও অন্যান্য জায়গার শিল্পীর সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাহাড়ের এই পুজোর টানে বহু সমতলের মানুষ পাহাড়ে আসবে এমনটাই আশা করা যায়। স্বর্গের এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে উৎসাহ দেখিয়েছে কলকাতার সেলিব্রেটি থেকে নেতারা।
অভিনেতা চন্দন সেন, জয়জীৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,এই প্রথম ঝান্ডিতে দুর্গা পুজো হচ্ছে। খুব ভাল লাগছে। পর্যটকরা ঝান্ডিতে ঘুরতে গিয়ে দুর্গাপুজো দেখতে পারবেন। ঝান্ডির বাসিন্দা দাওয়া শেরপা, পুনম শেরপা বলেন, এর আগে আমরা গরুবাথানে দুর্গাপুজো দেখতে যেতাম কিন্তু এবার আমরা সবাই মিলে এই পুজো করছি। এতে পর্যটকেরাও খুশি হবে।