প্রসূন বিশ্বাস, ভুবনেশ্বর: আর মাত্র নব্বই মিনিট। ক্লেটন সিলভাদের থেকে কি রবিবারের মহার্ঘ্য নব্বই মিনিটই চেয়ে নিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত? অনুশীলন শুরুর আগে মাঠের মাঝখানে ক্লেটনদের নিয়ে প্রতিদিনই ছোট্ট একটা বৈঠক করেন লাল-হলুদ কোচ। এদিন বৈঠকের একেবারে শেষে হিজাজি মাহেরদের উদ্দেশে হঠাৎই চিৎকার করে কিছু কথা বললেন তিনি। মাঠের বাইরে থেকে পুরোটা না শোনা গেলেও স্পষ্ট শোনা গেল ‘ওড়িশা’ শব্দটি। হয়তো রবিবাসরীয় প্রতিপক্ষের নাম করেই বিশেষ কোনও নির্দেশ দিলেন, নয়তো ওড়িশার মাটিতে দাঁড়িয়ে এমন কোনও বিশ্বাসের বীজমন্ত্র ছড়িয়ে দিলেন শৌভিক চক্রবর্তীদের মধ্যে যা উদ্বুদ্ধ করবে রবিবার ম্যাচের সময়।
কলকাতা থেকে বহু লাল-হলুদ সমর্থক আসছেন রবিবারের ম্যাচ দেখতে। ডুরান্ড কাপের পর ফের সর্বভারতীয় ট্রফির খেতাবি ম্যাচে নামছে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। তবে এবার ঘরের মাঠে নয়, পাশের রাজ্য ওড়িশাতে। তাও আবার গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে। ডুরান্ড হাতছাড়া হলেও সুপার কাপে (Kalinga Super Cup) ইস্টবেঙ্গল ক্রমশ পারফরম্যান্সের বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে কার্লেস কুয়াদ্রাতের অধীনে। যে ইস্টবেঙ্গল আইএসএল আর সুপার কাপ মিলিয়ে শেষ নয় ম্যাচ অপরাজিত!
শনিবার সন্ধ্যায় ওড়িশা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে সুপার কাপ ফাইনাল শুরুর চব্বিশ ঘণ্টা আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে ক্লেটন সিলভারা যথেষ্টই চনমনে ছিলেন। অনুশীলনে ছোট ছোট পোস্টে গোল করার প্রতিযোগিতায় হিজাজি মাহের, নাওরেম মহেশ, ক্লেটনরা নিখুঁত একেবারে। অনুশীলনেই আভাস পাওয়া যায় রবিবারের ম্যাচে নামার জন্য কতটা উদগ্রীব লাল-হলুদ ফুটবলাররা। এই বদল একদিনে আসেনি। ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন কুয়াদ্রাত। তিনিই যেন এই দলের নেতা। বাকিরা অনুগামী। হারলে অজুহাত দেন না, বরং সমস্যার গভীরে গিয়ে তার সমাধান করেন কুয়াদ্রাত। ডুরান্ড ফাইনালে ব্যর্থ হওয়ার পর খুঁজেছেন এই দলটায় সমস্যা ঠিক কোনখানে। আর সেই সমস্যা সমাধান করে সুপার কাপের ফাইনালেও তুলে এনেছেন দলকে। ফাইনালে নামার আগে সেটাই বলছিলেন তিনি, “দুর্ভাগ্য আমরা ডুরান্ড কাপ জিতিনি। কিন্তু আমরা তার জন্য কোনওরকম অজুহাত খুঁজিনি। সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছি। এবং আবার ফাইনালে উঠে এসেছি। আগামী ছয়মাসে আরও বদলে যাবে এই অবস্থা। দলটা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে।” যখন এই কথাগুলো বলছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ, তার আগে তাঁর পকেটে রয়েছে টানা ন’ম্যাচ অপরাজিত থাকার পরিসংখ্যান। যার মধ্যে আছে ডার্বিও।
[আরও পড়ুন: ৪২০ রানে শেষ ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস, আজই জিততে পারবেন রোহিতরা?]
রবিবার উইনিং কম্বিনেশন কি ভেঙে জাতীয় দল থেকে সদ্য ফেরা নাওরেম মহেশকে প্রথম একাদশে আনবেন কুয়াদ্রাত? আর কার্ড সমস্যা মিটিয়ে ফেরা বোরহা হেরেরা, তিনিও কি খেলবেন শুরু থেকে? এই প্রশ্নগুলোই এখন ঘুরছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মাথায়। তবে দু-একটা পরিবর্তন আসবে তা ধরে নেওয়াই যায়। যদিও উইনিং কম্বিনেশন ভাঙবেন কি না তা ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে স্পষ্ট করলেন না লাল-হলুদ কোচ। ইস্টবেঙ্গলে একটা ভালো দিক ক্লেটন আর হিজাজির গোলের মধ্যে থাকা। কুয়াদ্রাত বলেন, “দল এই মুহূর্তে ভালো ফল করছে। ধারাবাহিকতা রয়েছে খেলায়। ওড়িশারও একই অবস্থা। ভালো খেলছে। দু’দলই অপরাজিত। আমরা হারতে চাই না। আমার কাছে কঠিন ম্যাচ নিঃসন্দেহে। প্রতি ম্যাচেই গোল আসছে। হিজাজিও গোলের মধ্যে রয়েছে। ডিফেন্সের পাশাপাশি আক্রমণকেও সাহায্য করছে, এটা ভালো দিক।”
ওড়িশাকে কুয়াদ্রাতের সমীহ করার কারণ রয়েছে। সের্জিও লোবেরার দলের রক্ষণে মুর্তদা ফল নির্ভরতা দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যার ফলস্বরূপ ওড়িশা গত নয় ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই ক্লিনশিট রেখেছে। কার্লোস ডেলগাডোরাও ছন্দে রয়েছেন। মাঝমাঠের নির্ভরতা দিচ্ছেন আহমেদ জাহু। তবে জাতীয় দল থেকে ফেরা গোলকিপার অমরিন্দার সিং সম্ভবত প্রথম একাদশে থাকবেন না রবিবার। তিনি এদিন দলের সঙ্গে যোগ দিলেও আলাদা অনুশীলন করেন। অনুশীলন শেষে সিঁড়িতে বসে থাকা রয় কৃষ্ণাও জানিয়ে গেলেন তাঁরা পুরোপুরি তৈরি সুপার কাপ ফাইনালের জন্য।
ক্লেটন, হিজাজিদের নিয়ে যখন উচ্ছ্বসিত কুয়াদ্রাত, তখন ওড়িশা কোচ লোবেরা আবার প্রতিপক্ষের কোনও বিশেষ নামের প্রতি মাথা ঘামাতে চান না। নিজেদের ফুটবলারদের উপর আস্থাই সেরা অস্ত্র ওড়িশা কোচের। লোবেরা বলেন, “আমি কোনও এক, দুই বা তিনজন ফুটবলার নিয়ে পরিকল্পনা করি না। আমি মনে করি, একটা দল হিসাবে ট্রফি জিততে হয়। দল হিসাবে বিপক্ষের জন্য পরিকল্পনা করেছি। দল হিসাবেই আমরাও নামব। তবে আরও একটা বিষয়, আমি আমার দলকে নিয়েই বেশি ভাবনাচিন্তা করি। আমি আমার ফুটবলারদের উপর আস্থা রাখছি। এই মুহূর্তে আমরা ১৫ ম্যাচ অপরাজিত। তার মধ্যে ১৩ জয়।”
অন্যদিকে দলে চোট-আঘাত আছে কি না এই প্রশ্নে লোবেরা জানান, তাঁর দলে সবাই সুস্থ। সবাইকে পাওয়া যাবে। যদিও অনুশীলনে দেখা গেল সেমিফাইনালের গোলদাতা দিয়েগো মরিসিও টেনে টেনে হাঁটছেন। পুরো অনুশীলনেও করেননি। তিনি সম্ভবত অনিশ্চিত। রবিবার যদি মরিসিও না থাকেন তাহলে কিছুটা সুবিধাজনক জায়গায় থাকবে ইস্টবেঙ্গল। এছড়া বেশ খোশমেজাজেই রইলেন রয় কৃষ্ণারা। হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগের দিন পঞ্চাশ মিনিট অনুশীলন করলেন ফলরা। আসলে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দুই শিবিরের কোনও খবরই যাতে প্রতিপক্ষের কাছে পৌঁছে না যায় তার ত্রুটি রাখছেন না কুয়াদ্রাত-লোবেরারা।
আজ সুপার কাপে
ইস্টবেঙ্গল বনাম ওড়িশা এফসি
সন্ধ্যা ৭.৩০, ভুবনেশ্বর, জিও সিনেমা