shono
Advertisement
IPL 2024

ভূলুণ্ঠিত দেবতার আসন! আইপিএলের নির্মম পেশাদারিত্বের দুনিয়ায় মহিমা হারাচ্ছেন ক্রিকেটাররা

সৌরভ, ধোনি থেকে আজকের রাহুল, দেশের ক্রিকেটের ছবিটা কি ক্রমশ বদলাচ্ছে?
Published By: Arpan DasPosted: 08:55 PM May 09, 2024Updated: 09:10 PM May 09, 2024

অর্পণ দাস: ফেলো কড়ি মাখো তেল! সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে এই প্রবাদ। যেখানে কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেওয়া হয় লাভের হিসেব। শেষ কথা বলে পুঁজি। পান থেকে চুন খসলে রক্তচক্ষু মেলে এগিয়ে আসে মালিকপক্ষ। দিনের শেষে দুনিয়াটা টার্গেট সর্বস্ব।

Advertisement

টার্গেট অবশ্য ক্রিকেটেও থাকে। ম্যাচ জিততে রান তাড়া করতে হয়। কখনও পা ছুঁয়ে যায় সাফল্য। কখনও-বা ব্যর্থতার অন্ধকার ভুলে শুরু হয় নতুন লড়াই। হার-জিতের দাঁড়িপাল্লায় ব্যালেন্স করে সোজা দাঁড়িয়ে থাকে ক্রিকেটীয় স্পিরিট। কিছুদিন চর্চা চলে চায়ের আড্ডায়। লাগাতার সমালোচনায় বিদ্ধ হন ক্রিকেটাররা। কিন্তু স্টেডিয়ামের আলো জ্বলে উঠলে ফের ভিড় জমে ওঠে। মুখে-মুখে ঘুরতে থাকে দলের জন্য চেনা স্লোগান।

আইপিএলও তার থেকে আলাদা কিছু নয়। ক্রিকেট, আবেগ আর বিনোদনের আদর্শ মিশেল। অথচ ছায়ার নিচে বসে থাকে এক চূড়ান্ত পেশাদার জগৎ। সেখানে ক্রিকেটটাই সব নয়, শেষ কথা বলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নামের আড়ালে থাকা ব্যবসায়িক পরিকাঠামো। বলবে নাই-বা কেন? কোটি-কোটি টাকা ঢেলে মালিকপক্ষ জিতবেন বলে মরণপণ করছেন। ক্রিকেটাররা শুধু সেরাটুকু দিয়ে পার পাবেন না। জিততেই হবে। নতুবা হয়তো অবস্থা হবে কেএল রাহুলের মতো। ম্যাচ হেরে কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তের সামনে দল মালিকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হবে।

ছবি: সোশাল মিডিয়া।

মানুষ চমকে উঠছেন। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা ক্ষোভ জানাচ্ছেন। রাহুলকে দল ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে। ক্রিকেট তো এদেশে ধর্মের মতো। ক্রিকেটাররা সেখানে দেবতার আসনে আসীন। একমাত্র ভক্তদেরই অধিকার আছে তাঁদের তুলোধনা করার। কিন্তু মালিকপক্ষ সর্বসমক্ষে কেন এমন করবেন? তাঁরা কি ক্রিকেট বোঝেন? তাঁরা জানেন চূড়ান্ত পর্যুদস্ত হলে কী যায় অধিনায়কের উপর দিয়ে?

না, তাঁদের সেটা জানার কথা নয়। কিন্তু পেশাদার দুনিয়ায় তাঁরা অর্থের মূল্য বোঝেন। মাঠের নায়করাও ক্যামেরার সামনে বাধ্য হন 'দে ধনা ধন' নাচতে। আইপিএল নামক টুর্নামেন্টের মধ্যে ক্রিকেটের উলটো পিঠের অংশ বিনোদন বলে তাকে গা সইয়ে নেওয়া যায়। কিংবা চার দেওয়ালের মধ্যে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথোপকথনও চাপা পড়ে যায়। সমস্যা তৈরি হল এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই।

[আরও পড়ুন: রাহুল নেতৃত্ব ছাড়তে চাইলে আপত্তি জানাবে না লখনউ ম্যানেজমেন্ট! তুঙ্গে জল্পনা]

যদিও হাতের কাছে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। ২০১৭ সালে টুর্নামেন্টের মাঝপথেই পুণে সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। নেতৃত্বের দায়িত্বে আসেন স্টিভ স্মিথ। রাহুল আর ধোনির মধ্যে বিস্তর তফাৎ। দ্বিতীয় ব্যক্তি ভারতের বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। চেন্নাইয়ের হয়ে একাধিক আইপিএল ট্রফি জিতেছেন। অথচ খারাপ ফল দিলে তাঁকেও সরিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র ভাববেন না।

মনে পড়তে পারে শাহরুখ খান ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘটনাও। ব্যর্থতার কারণে বাংলার ঘরের ছেলেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল নাইট রাইডার্সের নেতৃত্ব থেকে। এমনকী দলও ছাড়তে হয়। তিনি যখন পুণে ওয়ারিয়ার্সের অধিনায়ক হয়ে ইডেনে খেলতে আসেন, তখন 'বঙ্গভঙ্গ' দেখেছিল ভারতীয় ক্রিকেট। কিন্তু সব কিছুরই একটা নিয়মবিধি রয়েছে। মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে কাউকে মালিকের ভর্ৎসনার সম্মুখীন হতে হয় না।

তখন সুসময়।

নিজের আত্মজীবনী 'ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে' চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছিলেন প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড তারকা রস টেলর। এক ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়ে যান তিনি। ম্যাচও হারে তাঁর দল। ম্যাচ শেষে তাঁর গালে চড় মেরেছিলেন দলের মালিক। জানিয়ে দিয়েছিলেন, শূন্য করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় না। সবটাই হয়েছিল হাসতে হাসতে। বলা যেতে পারে পেশাদারিত্বের মুখোশ জড়িয়ে।

এতটা পেশাদারিত্বের জন্য বোধহয় খেলাধুলোর পৃথিবী আজও তৈরি নয়। বিশেষ করে ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যে তীব্র আবেগ জড়িয়ে থাকে, তার সঙ্গে কোনও ভাবেই মেলানো যায় না এই ছবিটাকে। যেখানে মুম্বই অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ডিয়ার হয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করে না টিম ম্যানেজমেন্ট। মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে 'অপমানিত' হতে হয় লখনউ অধিনায়ককে।

[আরও পড়ুন: ক্যাপ্টেন কুলকে ছেঁটে ফেলেছিলেন, এবার কি অধিনায়ক রাহুলকেও সরাবেন গোয়েঙ্কা?]

সৌরভ, ধোনি থেকে আজকের রাহুল, ক্রিকেটের ছবিটা কি ক্রমশ বদলাচ্ছে? পেশাদারিত্ব মানে হয়ে যাবে সাফল্য আর অর্থের মেলবন্ধন। সেলসম্যানের টার্গেট পূরণ না হলে ছাঁটাই! দেবতা নন, তাঁরা মালিকের অধীনে কাজ করা অতি সাধারণ বেতনভূক ক্রিকেটার। এই সত্যিটা বুঝে নিলেই হয়তো মঙ্গল ভক্তদের। এখন থেকেই তৈরি হয়ে যাওয়া উচিত নতুন চেহারার ক্রিকেট দুনিয়ার জন্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ফেলো কড়ি মাখো তেল! সাধারণত ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে এই প্রবাদ।
  • পান থেকে চুন খসলে রক্তচক্ষু মেলে এগিয়ে আসবে মালিকপক্ষ। দিনের শেষে দুনিয়াটা টার্গেট সর্বস্ব।
  • টার্গেট অবশ্য ক্রিকেটেও থাকে। ম্যাচ জিততে রান তাড়া করতে হয়।
Advertisement