সুপর্ণা মজুমদার: ভারতীয় সিনেমায় আবেগের প্রাধান্য থাকে। তবে সব সিনেমায় আবেগ খুব বেশি মানায় না। এটা ‘দ্য বিগ বুল’ (The Big Bull) পরিচালক কুকি গুলাটির বোঝা উচিত ছিল। অতিনাটকীয়তাতেই যেন হারিয়ে গেল নয়ের দশকের অন্যতম শেয়ার কেলেঙ্কারির কাহিনি। ‘লুজলি বেসড অন’ – সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি সিনেমায় একথা লেখাই হয়ে থাকে। কারণ সিনেমার স্বার্থে কাহিনিতে একটু রদবদল পরিচালক-চিত্রনাট্যকাররা করেই থাকেন। তবে অযথা গল্পে আবেগ পুষতে গেলে তার ভারসাম্য নষ্ট হয়। অনেকক্ষেত্রে মূল উপাদানটিই পার্শ্ব চরিত্র হয়ে যায়। এমনটাই হয়েছে অভিষেক বচ্চন (Abhishek Bachchan) অভিনীত, অজয় দেবগন (Ajay Devgn) প্রযোজিত ‘দ্য বিগ বুল’ ছবির ক্ষেত্রে।
‘বিগ বুল’ অর্থাৎ নয়ের দশকে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের ‘শেয়ার মাফিয়া’ হর্ষদ মেহতা (Harshad Mehta)। তাঁকে কেন্দ্র করেই যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছিলেন অর্জুন ধাওয়ান এবং পরিচালক কুকি গুলাটি। সংলাপ লেখেন রীতেশ শাহ। শেয়ার মার্কেটের একটা নিজস্ব ছন্দ রয়েছে। যাঁরা এ বিষয়ে আগ্রহী, তাঁদের কাছে যেন আলাদা এক রোমাঞ্চ। সেই রোমাঞ্চের রসদেই ‘দ্য বিগ বুল’ সিনেমার গল্প টানা যেত। কিন্তু তার বদলে অযথা হেমন্ত শাহর (অভিষেক) ব্যক্তিগত জীবনের গল্প দেখানো হল। প্রায় আড়াই ঘণ্টার সিনেমা তৈরি করার কোনও প্রয়োজন ছিল না। হেমন্ত ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়ার প্রেম দেখানোর জন্য একটা আস্ত গানও সিনেমার মধ্যে রাখার কোনও প্রয়োজনও ছিল না।
অভিষেক বচ্চন চেষ্টা করেছেন। তবে তাঁর অভিনয়ে সেই কবেকার ‘গুরু’ সিনেমার গুরুকান্ত দেশাই রয়ে গিয়েছে। অট্টহাসের জায়গাগুলি বিরক্তিকর ঠেকেছে। হেমন্তের স্ত্রী প্রিয়ার চরিত্রে নিকিতা দত্তর (Nikita Dutta) তেমন কিছু করার ছিল না। সাংবাদিক সুচেতা দালালের চরিত্রকে ছবিতে মীরা রাওয়ের নাম দেওয়া হয়েছে। সেই ভূমিকায় সূত্রধরের কাজটি করেছেন ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ (Ileana D’Cruz)। মন্দের ভাল তিনি। যতদূর পেরেছেন কাহিনির সূত্রধর হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। বাকি চরিত্ররা ক্ষণিকের জন্যই এসেছে আর গিয়েছে। আর তাতেই নজর কেড়েছেন সৌরভ শুক্লা, মহেশ মঞ্জরেকর। সুপ্রিয় পাঠক, রাম কাপুরের অভিনেতাদের যথাযত ব্যবহার করাই হয়নি।
[আরও পড়ুন: বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে কং-গডজিলা! চোখ ধাঁধানো সাফল্যের পিছনে কোন রহস্য?]
হর্ষদ মেহতার জীবন অবলম্বনেই তৈরি হয়েছিল সোনি লিভ ওয়েব প্ল্যাটফর্মের সিরিজ ‘স্ক্যাম ১৯৯২: দ্য হর্ষদ মেহতা স্টোরি’ (Scam 1992: The Harshad Mehta Story)। সেখানে হর্ষদ মেহতার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন প্রতীক গান্ধী। হনসল মেহতা ও জয় মেহতা পরিচালিত সিরিজটি অনেকেরই পছন্দ হয়েছিল। এমন বিষয় সিনেমার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তুলে ধরা অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য পরিচালকের সাধুবাদ প্রাপ্য। তবে চিত্রনাট্য মেদহীন করাই যেত। ছবির শেষে ইলিয়ানার চরিত্র দাবি করছে স্বাধীনতার পর থেকে ভারতবর্ষের কোনও উন্নতিই হয়নি। আর একটি অপরাধকে প্রকাশ্যে আনতে আরেকটি অপরাধের প্রয়োজন ছিল। কোনও ‘স্ক্যাম’কে যুক্তিযুক্ত করার এই চেষ্টায় বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয় না। তবে ডিজনি প্লাস হটস্টারে (Disney+ Hotstar) আপনি সিনেমাটি দেখবেন কিনা তা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।