ভারতীয় ফুটবলে বেশ পরিচিত মুখ অস্কার ব্রুজো (Oscar Bruzon)। একসময়ে মাণ্ডবীর তীরের স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার কোচ ছিলেন।আইএসএলের ক্লাব মুম্বই সিটি এফসি-তেও কাজ করেছেন এই স্পেনীয়। সেই ব্রুজোর হাতে এখন বসুন্ধরা কিংসের (Basundhara Kings) রিমোট কন্ট্রোল।এএফসি কাপে মোহনবাগান (Mohun Bagan), মাজিয়া ও গোকুলামের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশের এই শক্তিশালী দল। ওপার বাংলার জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও কাজ করা হয়ে গিয়েছে ব্রুজোর।এহেন অস্কার ব্রুজো এএফসি কাপে তাঁর দলের সম্ভাবনা, প্রতিপক্ষ হিসেবে মোহনবাগানের শক্তি ও দুর্বলতা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে কথা বললেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের প্রতিনিধি কৃশানু মজুমদারের সঙ্গে।
এএফসি কাপে আপনাদের গ্রুপে রয়েছে মোহনবাগান, কেরলের গোকুলাম এবং মালদ্বীপের মাজিয়া। কঠিন গ্রুপ বলে মনে হচ্ছে?
অস্কার ব্রুজো: সন্দেহ নেই খুবই কঠিন গ্রুপ। গ্রুপে যে ৪টি ক্লাব রয়েছে, সেগুলো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ১০টি ক্লাবের মধ্যে থাকবে বলেই আমার মনে হয়।ম্যাচগুলো বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে। পরের পর্বে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে সবক’টি ক্লাবেরই। তবে যে কোনও টুর্নামেন্টেরই প্রথম ম্যাচটি সবসময়ে কঠিন হয়। ফলে সব কিছু নির্ভর করছে এই প্রথম ম্যাচটির উপরই।
এবার বসুন্ধরা কিংস নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
অস্কার ব্রুজো: গতবার মাত্র একটি গোলের জন্য আমরা নক আউট পর্বে পৌঁছতে পারিনি। এই বছর আমরা আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেই খেলতে নামছি। এবার ভাল করব বলেই আমার বিশ্বাস।
[আরও পড়ুন: IPL 2022: বিশ্বকাপ জয়ের মাঠে একা লড়লেন ধোনি, মুম্বইয়ের কাছে হেরে ছিটকে গেল চেন্নাই]
বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। দেশের ফুটবলপ্রেমীদের অনেক আশা রয়েছে আপনাদের নিয়ে। বসুন্ধরা কিংস সম্পর্কে দু-চার কথা যদি শেয়ার করেন।
অস্কার ব্রুজো: জন্মলগ্নের পর থেকেই আমাদের ক্লাবের উদ্দেশ্য একটাই। ঘরোয়া টু্র্নামেন্ট হোক বা আন্তর্জাতিক, আমরা সাফল্য পাওয়ার জন্য মরিয়া। মাত্র ৪-৫ বছর হল সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিযোগিতাগুলিতে খেলতে শুরু করেছি আমরা। কিন্তু এই অল্প সময়ে উপমহাদেশের ফুটবলে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে আমরা নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছি।আর এই ভূমিকায় আমরা খুবই স্বচ্ছন্দ। বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠীর অংশ আমরা। নির্দিষ্ট কর্পোরেট সংস্কৃতি রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ইমরুল হাসানের দূরদৃষ্টি ও পরিকল্পনা। আমরা সাফল্য পাওয়ার জন্য ক্ষুধার্ত বলতে পারেন।
যুবভারতীতে আবাহনীকে বিধ্বস্ত করেছে মোহনবাগান। জুয়ান ফেরান্দোর দলের খেলা নিশ্চয় দেখেছেন? কেমন মনে হচ্ছে এই মোহনবাগানকে? ফেরান্দোর বিরুদ্ধে কোনও সময়ে কি দল নামিয়েছিলেন?
অস্কার ব্রুজো: ফেরান্দো আর আমার মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি কখনও।তবে মোহনবাগানের সঙ্গে একাধিকবার আমার দেখা হয়েছে। স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার কোচ হিসেবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম।মুম্বই সিটিতে থাকার সময়েও মোহনবাগানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কখনও তা ছিল মধুর আবার কখনও তা মোটেও সুখকর হয়নি। সাম্প্রতিককালে মোহনবাগানের পারফরম্যান্স খুবই ভাল। রেজাল্টও পেয়েছে ওরা। খেতাব জেতার অন্যতম দাবিদারও বটে। কোচ বদলে ফেলেছে মোহনবাগান। কোচ পরিবর্তনের ফলে আমরা আশঙ্কা করছি আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে মোহনবাগান।
প্রথমে ভরদুপুরে ম্যাচ ফেলা হয়েছিল। পরে সূচি পরিবর্তন করা হয়। সূচি পরিবর্তিত হওয়ায় একদিকে তো ভালই হল। উঁচুমানের ফুটবল তুলে ধরা যাবে।
অস্কার ব্রুজো: কলকাতায় মধ্য মে-তে বেলা একটার সময়ে গনগনে গরমে ভাল ফুটবল খেলা কখনওই সম্ভব নয়। ফুটবলের জন্য এটা ভাল খবর যে সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সময় বদল করা হয়েছে ম্যাচের। এর ফলে উচ্চমানের মানের ফুটবল তুলে ধরা সম্ভব বলে মনে করি।
ঘরের মাঠে খেলবে মোহনবাগান। এর সুযোগ নেবে সবুজ-মেরুন। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নামবেন যখন, তখন কিন্তু গোটা যুবভারতীই আপনাদের বিরুদ্ধে যাবে।
অস্কার ব্রুজো: পেশাদার ফুটবলে দেখা গিয়েছে, ঘরের দলই ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা পায়। কিন্তু যখন কোনও কিছুই ঠিকঠাক যায় না, তখন মুহূর্তের মধ্যেই ছবিটা বদলে যায়। অতিরিক্ত চাপ গ্রাস করে বসে ঘরের দলকে।
আপনি তো ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে ভালই ওয়াকিবহাল। ভারত ছেড়ে বাংলাদেশের ক্লাবের দায়িত্ব নিলেন কেন?
অস্কার ব্রুজো: আইএসএল ক্লাবগুলোর মতোই দূরদৃষ্টি এবং লক্ষ্য আমাদের ক্লাবেরও।বসুন্ধরার স্কোয়াডে ১২ জন জাতীয় দলের প্লেয়ার রয়েছে।বিশ্বমানের সব বিদেশি ফুটবলার রয়েছে।অ্যাকাডেমি থেকে প্লেয়ার উঠে আসে সিনিয়র দলে। ধারাবাহিক ভাবে সিনিয়র দলের জন্য খেলোয়াড় যোগান দেয় অ্যাকাডেমি।সম্প্রতি একটি স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে। ক্লাব ম্যানেজমেন্ট সবসময়ে উন্নতির জন্য চেষ্টা করে চলেছে।বলতে পারেন, সঠিক এক প্রজেক্টের মধ্যেই রয়েছি আমি।
বাংলাদেশ জাতীয় দলও সামলেছি। বসুন্ধরার কোচ হিসেবে ভাল কাজ করতে পেরেছিলাম বলেই হয়ত এত বড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আমার উপরে। জাতীয় দল আমার হাতে তুলে দিয়ে আসলে আমার কাজকেই স্বীকৃতি জানানো হয়েছিল।