বাবুল হক, মালদহ: মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খোদ সরকারি হাসপাতালেই! পা কেটে যাওয়া এক রোগীকে ওল্ড মালদহের মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় জেলার প্রশাসনিক মহলেও চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
বুধবার এই বিষয়ে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন ওল্ড মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকার সারদা কলোনির বাসিন্দা বসুদেব ঘোষ (৬৮)। তাঁর অভিযোগ, সেই ওষুধ ব্যবহার করে তাঁর পায়ের ক্ষতের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে কেন তাঁকে এই ধরনের ওষুধ দেওয়া হল, এমন প্রশ্ন তুলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া।
জানা গিয়েছে, বসুদেববাবু দিন কয়েক আগে বাড়ির পোষা গরুর আঘাতে আহত হন। তাঁর বাম পায়ে আঘাত লাগে। পা কেটে যায়। সোমবার তিনি স্থানীয় মৌলপুর গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ডাক্তার দেখান। সেখান থেকে যে ওষুধ তাঁকে দেওয়া হয়, পরবর্তীতে দেখা যায় সেই ওষুধের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। বিষয়টি জানাতে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তাঁরা গুরুত্ব দিতে চাননি বলেই অভিযোগ। বাধ্য হয়ে এদিন জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ওই রোগী। বসুদেব ঘোষ জানান, দুদিন ঘরোয়া চিকিৎসা করার পর তিনি মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে যান৷ চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। হাসপাতাল থেকেই বিনামূল্যে সেই ওষুধ নিয়েছিলেন তিনি ৷ দুদিন ওষুধ খাওয়ার পর সকলের নজরে পড়ে, পায়ের অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। দেখা যায়, হাসপাতাল থেকে তাঁকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়েছে ৷ প্রতিবাদ জানাতে তিনি প্রথমে হাসপাতাল যান। কিন্তু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের গুরুত্ব দিতে চায়নি বলে অভিযোগ ৷ শেষপর্যন্ত জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি৷ বসুদেব ঘোষের অভিযোগ, "ওষুধ খেয়ে পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। এই ওষুধ খেলে আমার আরও ক্ষতি হবে। আমি জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। সরকারি হাসপাতাল থেকে যে এমন ওষুধ দেওয়া হবে, ভাবতে পারিনি।"
বসুদেববাবুর ভাইপো দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, "পা কেটে যাওয়ায় কাকাকে মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কাকার পায়ে সেলাই দেওয়া হয় ৷ চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে কিছু ওষুধ লিখে দেন৷ ইনডোরে সব ওষুধ না থাকায় আমাদের আউটডোর থেকে ওষুধ নিতে বলা হয়। আমরা আউটডোর থেকেই ওষুধ নিয়েছি। সেখান থেকে আমাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়েছে৷" ওল্ড মালদহের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়দীপ মজুমদার বলেন, "আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমাদের হাসপাতালে দু’জন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। তাঁরাই স্টোরের দায়িত্ব সামলান৷ স্টোরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ রাখার কথা নয়। আমি শুনেছি, ওই রোগীকে আউটডোর থেকে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাটি ভীষণ গুরুতর। বিএমওএইচ হিসাবে আমি এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করব ৷ ফার্মাসিস্টদের দোষ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।" মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) সুদীপ্ত ভাদুড়ি বলেন, "ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।"