‘পার্টনার’ নাম দিয়ে গিগ শ্রমিকদের বাড়ছে শোষণ। অধিকার রক্ষা, পেশাগত স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কর্নাটক সরকারের বিল পেশ।
দেশে ক্রমবর্ধমান মাসিক বেতনভুক্ত কর্মসংস্থান হ্রাসের সঙ্গে-সঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে অ্যাপ-প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক ‘গিগ কর্মী’-র সংখ্যা। অসংগঠিত ও অনিয়ন্ত্রিত শ্রম বাজারটি এই সময়ে দাঁড়িয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করলেও একইসঙ্গে রয়েছে শ্রমজীবীদের বিপুল অনিশ্চয়তা। কর্নাটক সরকার সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় ‘কর্নাটক প্ল্যাটফর্ম বেস্ড গিগ ওয়ার্কার্স’ (‘সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার’) বিল, ২০২৪ পেশ করেছে। প্রস্তাবিত বিলটির উদ্দেশ্য– গিগ শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, পেশাগত স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কর্নাটক সরকারের এই পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য হলেও গিগ শ্রমিকদের ‘কর্মচারী’ হিসাবে স্বীকৃতি, আয় ও কাজের নির্দিষ্ট সময়ের নিশ্চয়তা প্রদান এখনও অন্তরায়।
[আরও পড়ুন: বিহারে VIP দলের প্রধান মুকেশ সাহানির বাবা খুন! ঘরের ভিতর মিলল ক্ষতবিক্ষত দেহ]
বর্তমান সময়ে কর্মংস্থানের ক্ষেত্রে অ্যাপ-ভিত্তিক পরিষেবাগুলি বড় ভূমিকা পালন করছে। যেমন অ্যাপ ক্যাব, পণ্য ডেলিভারি, গার্হস্থ্য পরিষেবা। এক দশক আগে এ-দেশে যখন অ্যাপ-ভিত্তিক গিগ শ্রমের উদ্ভব হয়েছিল, তখনই সেখানে ‘কর্মচারী’ শব্দটি অনুপস্থিত ছিল। বরং, এই কাজে যুক্তদের ‘পার্টনার’ নাম দেওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট চুক্তি ও কাজের সময়ের সীমাবদ্ধতার বাইরে নিজের ইচ্ছায় কাজ ও আয়ের শর্ত প্রথমটায় বেশ ভালোই মনে হয়েছিল। কিন্তু, ক্রমশ আয় হ্রাস এবং কাজের সময় বৃদ্ধির ফলে ধারণাটি বিলীয়মান। ফলে গিগ শ্রমিকরা সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রকের অভাবে শোষিত হচ্ছে বেশি।
এসব সত্ত্বেও, গিগ অর্থনীতির প্রসারণ কমছে না। নীতি আয়োগের একটি রিপোর্ট অনুসারে, এই দশকের শুরুতে দেশে গিগ-কর্মীর সংখ্যা ছিল ৭৭ লক্ষ। আগামী ২০২৯-’৩০ সালের মধ্যে তারা দেশের মোট আয়ের ৪.১ শতাংশ এবং অকৃষি কর্মশক্তির ৬.৭ শতাংশ হবে। কর্নাটক সরকারের তৈরি করা খসড়া বিলটিতে গিগ শ্রমিকদের শ্রম-অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। যার লক্ষ্য নির্বিচারে বরখাস্ত বন্ধ করা, শ্রমিকদের অভিযোগের প্রতিকার এবং স্বয়ংক্রিয় পর্যবেক্ষণ, সর্বোপরি অ্যালগরিদম-চালিত অর্থপ্রদানের অস্বচ্ছ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা।
[আরও পড়ুন: আতঙ্কের নাম ‘চাঁদিপুরা’, মারণ ভাইরাসে ৫ দিনে ৬ শিশুর মৃত্যু গুজরাটে!]
বিলে গিগ শ্রমিকদের জন্য একটি ওয়েলফেরার বোর্ড ও ওয়েলফেয়ার ফান্ড তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে পরিষেবা প্ল্যাটফর্মগুলি তাদের প্রতিটি লেনদেনে বা বার্ষিক টার্নওভারের একটি অংশ ওই তহবিলে প্রদান করবে। তবে শ্রমিক সংগঠনগুলি পরামর্শ দিয়েছে, সংস্থাগুলি যেহেতু তাদের বার্ষিক রিপোর্টে নূন্যতম লাভ দেখায়, তাই প্রতিটি লেনদেনে একটি অংশ তহবিলে প্রদানের নিয়ম শ্রেয়। কারণ, এই নিয়মে নিবন্ধন গিগ শ্রমিকদের আইনত দৃশ্যমান করবে। তবে শুধু রাজ্যভিত্তিক আইনেই সমস্যার সমাধান হবে না। জাতীয় পর্যায়ে ন্যূনতম মজুরি, যুক্তিসংগত কাজের সময় ও শর্তাবলি এবং সুদৃঢ় সামাজিক নিরাপত্তা, সেই সঙ্গে গিগ শ্রমিকদের ‘কর্মচারী’-র মর্যাদা প্রদানের জন্য ব্যাপক আইনের প্রয়োজন।