চন্দন বিশ্বাস: ২০১৮ সালের জুন মাস। ততদিনে সেভেন সামিটের অভিষ্ট পূরণ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ সাত মহাদেশের সাতটা উচ্চতম শৃঙ্গ স্পর্শ করে ফেলেছে আমাদের সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ঠিক সেই সময় নতুন অভিযান ‘মাউন্ট দামাবন্ডের’ প্রস্তুতিপর্ব চলছিল, সঙ্গী ছিলেন বেঙ্গালুরুর ভাস্বতী চট্টোপাধ্যায়। ভাস্বতীই খোঁজখবর করে জানান যে সত্যরূপ একটা বিশ্বরেকর্ডের দাবিদার হওয়ার মুখে। শুরু হল আবার আরও পড়াশোনা। দেখা গেল, সেভেন সামিট আর সেভেন ভলকানিক সামিট মিলিয়ে শৃঙ্গ দাঁড়াচ্ছে সব মিলিয়ে বারোটা (কিলিমাঞ্জারো এবং এলব্রুস দুই লিস্টিতেই কমন)। আটটা শৃঙ্গে সফল অভিযান ইতিমধ্যেই সাঙ্গ, বাকি থাকল আর মাত্র চারটে। কিন্তু সময় আর বেশি নেই, বছরখানেকের মধ্যেই চারটে শৃঙ্গে উঠতে পারলে তবেই সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিশ্বরেকর্ড করবেন। ভাবনার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ এগিয়ে গেল। স্পনসর জোগাড় করা থেকে শুরু করে অভিযানের প্রস্তুতি। ২০১৮-তেই সফল হল মাউন্ট দামাবন্ড, মাউন্ট গিলাউয়ে এবং মাউন্ট পিকো দি ওরিজাবা ভলকানিক অভিযান। অবশেষে আজ, বুধবার ২০১৯-এর ১৬ জানুয়ারিতে মাত্র ৩৫ বছর ৯ মাসে দাঁড়িয়ে মাউন্ট সিডলের চূড়ায় উঠে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেভেন সামিট এবং সেভেন ভলকানিক সামিটের বিশ্বরেকর্ড ব্যাগে পুরলেন তিনি।
সত্যরূপের এই সাফল্যের পিছনে অবশ্যইভাবে থাকছে ওর আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ীদের অকুন্ঠ সমর্থন। ২০১৮ সালে যখন মাউন্ট ভিনসন ম্যাসিফ অভিযানে যান তখন বন্ধু-বান্ধবেরাই মিলিতভাবে প্রায় আট লাখ টাকা তুলেছিলেন। স্কুল, কলেজ, ক্লাব সোনারপুর আরোহী বা ফেসবুক সব দিকেই প্রবল উদ্দীপনা। প্রচার এবং প্রসারের ভার নিজের দায়িত্বে সামলিয়েছেন বন্ধু দীপাঞ্জন দাস। স্পনসর এবং অন্যান্য যোগাযোগের দায়িত্ব অনেকটাই নিয়েছিলেন ছোটবেলার স্কুলের বন্ধু বর্তমানে আইনজীবী অরিন্দম দাস। গতকাল থেকেই ভাস্বতীর বাড়িতে বন্ধু-বান্ধবরা জড়ো হয়েছিলেন ইতিহাস তৈরি হওয়াকে সেলিব্রেট করার জন্য। এদিন সন্ধেয় ছোটবেলার শহর ভগবানগোলায় তৈরি হয়েছে হিউম্যান পিরামিড। উচ্ছ্বসিত তাঁর বিগত অভিযানের সহ-অভিযাত্রীরাও। ২০১৬ সালে একই সঙ্গে মাউন্ট এভারেস্ট সফল অভিযানে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের রুদ্রপ্রসাদ হালদার। তাঁর কথায়, ‘সত্যরূপ আজ আক্ষরিক অর্থেই আমাদের মধ্যে একজন বিশ্বনাগরিক’। ২০১৩ সালে মাউন্ট এলব্রুস অভিযানের সহ-অভিযাত্রী ছিলেন বাংলাদেশের সিফাত ফাহমিদা ইতি। তাঁর কথায়, ‘সত্যরূপের উপস্থিতিই অভিযানের পজিটিভিটি বাড়িয়ে দেয়’।
[বিশ্বরেকর্ড সত্যরূপের, সপ্তআগ্নেয়গিরির চূড়ায় বাঙালি পর্বতারোহী]
সত্যরূপের এই জনপ্রিয়তার কৃতিত্ব সম্পূর্ণভাবে ওঁরই। মাউন্ট সিডলে অভিযানে গিয়েও ওঁর মাথায় ছিল এক বাঙালি কারাটে প্লেয়ারের কথা। যে পয়সার অভাবে রাঁচিতে একটা ন্যাশনাল মিটে অংশ নিতে পারছিল না। সত্যরূপই তাঁর স্পনসর জোগাড়ের দায়িত্ব নিয়ে নেন এবং সেই অ্যাথলিট ব্রোঞ্জ জেতেন। এই পজিটিভ মানসিকতার একজন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নেবেন তা তো বলাই বাহুল্য।
লেখক ট্রান্স হিমালয়ান সাইক্লিস্ট এবং সত্যরূপ সিদ্ধান্তের বন্ধু
The post সত্যরূপ জানতেনই না উনি বিশ্বরেকর্ডের পথে! appeared first on Sangbad Pratidin.