ফিটনেস ফ্রিক! একদিনও জিম কিংবা ওয়ার্কআউট বন্ধ রাখলেই শরীর-মন সব ক্লান্ত হয়ে পড়ে? তাই ব্যথা নিয়েও ফিট থাকতে রোজ হাঁটছেন, দৌড়চ্ছেন। এত বেশি মোটেই ভাল নয়। কেন জানেন? বললেন পেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাঞ্জলি রায়। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
সুস্থ-সবল থাকতে নিত্য শরীরচর্চার বিকল্প কিছু হয় না। এটাকে বেদবাক্যের মতো মেনে চলেন অনেকে। খুব ভাল এ অভ্যাস। তবে ভাল জিনিসও অতিরিক্ত হলে যেমন বিপজ্জনক হতে পারে, এক্ষেত্রেও ঠিক তাই-ই হয়। তনিমা মুখোপাধ্যায়, ওঁর বয়স মাত্র ৪৬ বছর। রোজ সকালে শত অসুবিধাতেও হাঁটতে যাবেনই। সত্যিই সুঅভ্যাস। উপকারও পেয়েছেন বিস্তর। দু-তিন মাস টানা ২০ মিনিট করে মর্নিং ওয়ার্ক করেই রক্তে সুগারের মাত্রা একেবারে নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেছেন। ব্যস, যেই না হাঁটার ফল হাতেনাতে পেয়েছেন, অমনি তারপর থেকে রোজ সকালে টানা কয়েকমাস ৪৫ মিনিট জোরে জোরে হাঁটার অভ্যাস করেছেন। যাতে আরও সুস্থ থাকতে পারেন। তার পরই শুরু হল হাঁটুতে অসহ্য ব্যথা।
এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু বয়স্করাই নয়, অল্প বয়সিরাও (১৮-৩০ বছর বয়সের মধ্যে), যাঁরা নিত্য জিম বা অনেক বেশি ওয়ার্কআউট, মর্নিং ওয়ার্ক করছেন, তাঁদের পরবর্তীকালে ‘ওয়ার্কআউট ইনজিওরি’-র প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষত ওজন কমানো, চেহারার গঠন ঠিক করা ইত্যাদি কারণে জিমে যাওয়া বা নিত্য হাঁটা, এক্সারসাইজ করার প্রবণতা অল্পবয়সিদের মধ্যেও খুব বেড়েছে। আর শীতকালে এমনিতেই বেশিরভাগ মানুষই হাঁটা বা এক্সারসাইজ করেন। তাই কিছু ব্যাপারে সতর্ক হতেই হবে।
[আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘বাংলায় চাকরি করতে হলে আঞ্চলিক ভাষা জানা মাস্ট’, বললেন মুখ্যমন্ত্রী]
কেন ক্ষতি হয় জানেন?
- প্রত্যেকের শরীরের গঠন, ওজন ও উচ্চতা অনুযায়ী কার কতটা এক্সারসাইজ করা উচিত সেটা নির্ভর করে। না হলে এক্সাসাইজের সময় পেশিতে পর্যাপ্ত রক্তপ্রবাহ ঠিকমতো না হলে পেশির ক্ষতি হতে পারে। আবার বেশিমাত্রায় রক্ত প্রভাব হলে তাও পেশির জন্য ভাল নয়।
- ‘হাইপারট্রফিক মাসল’ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে পেশির অতিরিক্ত পরিশ্রম হওয়ার ফলে মাসল ফাইবার বা পেশিতে উপস্থিত তন্তু অতিরিক্ত চাপে ছিঁড়ে যায়। তাই পেশিতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ঠিক বজায় রাখা জরুরি।
- লিগামেন্টে বেশি চাপ পড়ে লিগামেন্টও ছিঁড়ে যেতে পারে। তাই শরীরের ওজন অনুযায়ী একজনের কতটা এক্সারসাইজ বা ওয়ার্কআউট দরকার সেটা হিসেব করে নিয়ে সেই মতো এক্সারসাইজ করা উচিত। জিম ট্রেনার বা এক্সারসাইজ এক্সপার্টরা তা নির্ণয় করে বলে দিতে পারেন।
[আরও পড়ুন: খাঁচা খুলতেই নদীতে ঝাঁপ! কুলতলিতে তাণ্ডবের পর বাইনের জঙ্গলে মিলিয়ে গেল বাঘ]
এমন করবেন না
- শরীরের কোনও অংশে ব্যথা হলে সেই অবস্থায় কখনই এক্সারসাইজ বা জিম নয়।
- জোর করে এক্সারসাইজ করতে গেলে পেশিতে বা হাড়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে লেগে গিয়ে বড়সড় ড্যামেজ হয়ে যায়। আমাদের কাছে এমন রোগীও এসেছেন যাঁর অল্প হাঁটু ব্যথা নিয়েও জিম করার ফলে হাঁটুর আরও খারাপ অবস্থা হয়েছে। তারপর চিকিৎসা করে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছে।
- লিগামেন্ট ইনজিওরি হলে পেন ম্যানেজমেন্ট বা থেরাপি করিয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব।
- হাঁটা বা ট্রেড মিলের ক্ষেত্রে ততটুকুই হাঁটা উচিত যতক্ষণ পর্যন্ত পায়ে না লাগছে। পায়ে লাগতে শুরু করার পরও জোর করে হাঁটতে থাকলে তা থেকে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে
- প্রথম শুরু করার পর একটু-একটু করে এক্সারসাইজের পরিমাণ বাড়াতে হবে। দ্রুত বেশি চাপ নেওয়া চলবে না।
বাড়িতে বিএমআই মাপুন
বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স) = ওজন (কেজি) / উচ্চতা (মিটার)
বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে থাকলে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের অনুপাতে ঠিক আছে। এর বেশি হলে সেই মতো এক্সারসাইজ করুন।