সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করল ইজরায়েল। বড়সড় মিসাইল হামলা চালাল দেশটি। কয়েকদিন আগেই সিরিয়ায় একটি ইজরায়েলি এফ-১৬ বোমারু বিমানকে গুলি করে নামানো হয়। ব্যবহার করা হয় ‘অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান’। ওই হামলারই পালটা মার হিসাবে এই মিসাইল হামলা বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এর জেরে সাম্প্রতিককালে ইজরায়েল, সিরিয়া ও ইরানের মধ্যে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হল বলেও মনে করছেন তাঁরা।
এই প্রসঙ্গে ইজরায়েল সেনা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাঁদের মিলিটারি জেটকে উত্তর সিরিয়ায় গুলি করে নামানো হয়। এমন অঘটন সাম্প্রতিককালে ঘটেনি। শেষবার ১৯৮২-তে লেবানন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একবারই এই ‘হিম্মত’ দেখিয়েছিল কোনও দেশ। নইলে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হাঁকার জন্য বুকের পাটা দরকার। ‘অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান’-এর ধাক্কায় বিধ্বস্ত ইজরায়েলি জেটটির দুই পাইলট নিরাপদে মাটিতে নেমে এলেও গুলির লড়াইয়ে আহত হন। তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মিডিয়াকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। জারি করা হয়েছে সেন্সরশিপ।
[মহাকাশে মিলল সোনার খনি! অভিযানের তোড়জোড় নাসার]
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে ইরান ও সিরিয়াকে সতর্ক করে দেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। টিভিতে বলেন, ‘ইরানের সেনাকে সতর্ক করে বলতে চাই, সিরিয়ার মাটিকে ব্যবহার করে ইজরায়েলকে ধ্বংস করবেন না।’ শুধু এফ-১৬ নামিয়েই শান্ত হয়নি ইরান। অভিযোগ, ইজরায়েলি সীমান্তের ভিতর ড্রোন পাঠিয়ে সে দেশের সেনাবহরের দক্ষতাও লুকিয়ে দেখেছে ইরান। নেতানিয়াহু বলেন, ‘ড্রোন যখন পাঠিয়েছেন, তখন নিশ্চয় দেখেছেন আমাদের সেনা কীভাবে তৈরি। আশা করি এরপর আর আমাদের বিরুদ্ধে হামলার সাহস পাবেন না। আর যদি হামলা করেন, তাহলে জেনে রাখুন, আমি স্রেফ হুমকি দিচ্ছি না। ইজরায়েলের শত্রুদের ধ্বংস করার ১০০% ক্ষমতা রয়েছে আমাদের সেনার।’
I have been warning for some time about the dangers of Iran’s military entrenchment in Syria. Iran seeks to use Syrian territory to attack Israel for its professed goal of destroying Israel. pic.twitter.com/bfWinriX3h
— PM of Israel (@IsraeliPM) February 10, 2018
শুধু সামরিকভাবে নয়, সমান্তরাল গতিতে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়ে তোলে ইজরায়েল। নেতানিয়াহু টেলিফোনে যোগাযোগ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, মার্কিন বিদেশসচিব টিলারসনের সঙ্গে। তাঁদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়, সিরিয়ার আঘাতের হাত থেকে মাতৃভূমিকে বাঁচাতে কসুর করবে না ইজরায়েল। সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে তারা। তখন যেন কেউ বাধা না দেয়। যদিও পুতিন তাঁকে বলেন, ‘এমন কোনও পদক্ষেপ করবেন না, যাতে ওই অঞ্চলে নতুন কোনও যুদ্ধের সূচনা হয়।’ রাশিয়া চায় না, যে সিরিয়ায় আসাদ সরকারের রাশ একটুও আলগা হোক।
[৭১ জন যাত্রীকে নিয়ে ভেঙে পড়ল রুশ বিমান, সকলেরই মৃত্যুর শঙ্কা]
আবার আমেরিকা কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে ইজরায়েলকেই সমর্থন জানায়। পেন্টাগন বার্তা দেয়, ইজরায়েলের সম্পূর্ণ স্বাধিকার রয়েছে নিজেদের দেশকে রক্ষা করার। সবদিক খতিয়ে দেখেই সিরিয়াতে লাগাতার মিসাইল হামলা দাগেন নেতানিয়াহু। তেহরান অবশ্য ড্রোন পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করে ইজরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে ‘অর্থহীন’ বলেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলি জানাচ্ছে, বেছে বেছে সিরিয়ার মাটিতে ইরানি সেনার ঘাঁটিগুলি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইজরায়েল। আকাশপথে এত বড় মাপের হামলায় ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ কয়েকগুণ। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের অন্যতম কৌশলী রাষ্ট্র রাশিয়া সবপক্ষকেই সংযত হওয়ার ডাক দিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনও লক্ষণই আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
The post এফ-১৬ নামানোর জবাব, সিরিয়াতে মিসাইল হামলা ইজরায়েলের appeared first on Sangbad Pratidin.