অর্ণব আইচ: সোনালি তরলের চেহারা একই। গন্ধ শুঁকেও বোঝার উপায় নেই। একই ধরনে বোতলের গায়ে থাকা লেবেলে লেখা ব্র্যান্ডের নাম। পার্থক্য টের পাওয়া যায় সেই পানীয় মুখে দিলে। জাল মদ। আর তা থেকেই হতে পারে বিপদ। বড়দিন ও নববর্ষের উৎসবের আগে এই জাল মদ নিয়েই সতর্ক আবগারি দপ্তর ও পুলিশ। কারণ, আবগারি দপ্তরের গোয়েন্দাদের কাছে খবর, কলকাতার আশপাশে স্পিরিট দিয়ে তৈরি হচ্ছে জাল মদ। এ ছাড়াও দামি মদের বোতল থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে মদ টেনে তা কম দামি মদের সঙ্গে মিশিয়েও তৈরি হচ্ছে জাল মদ। এই ধরনের জাল মদ কয়েক মাস আগে শহরের একটি নামী হোটেল থেকে উদ্ধার হয়েছিল। তাই উৎসবে সময় এই ধরনের জাল মদ চোরাপথে ফের বাজারে বিক্রি হতে পারে, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা।
[কেউ ভাবেনি শিখ দাঙ্গার অপরাধীরা শাস্তি পাবে, কংগ্রেসকে আক্রমণ মোদির]
আবগারি দপ্তরের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, হাইওয়েতে ট্যাঙ্কার বা মালবাহী গাড়ি থেকেই চুরি হচ্ছে স্পিরিট। এই চুরির পিছনেও একটি বড় চক্র রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। অনেক সময় মালবাহী গাড়ির চালক বা খালাসিও যুক্ত থাকে এই চক্রের সঙ্গে। সেই স্পিরিট বা অ্যালকোহল পাচার হয়ে যাচ্ছে কলকাতার আশপাশে গোপনে তৈরি হওয়া জাল মদের কারখানায়। কয়েক মাস আগেই আবগারি দপ্তরের গোয়েন্দারা বারাকপুরে হানা দিয়েছিলেন একটি জাল মদের কারখানায়। উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর পরিমাণ জাল মদ। ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, কলকাতার আশপাশে বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে জাল মদের কারখানা। এই জাল মদ চক্রের মাথারা পুরনো জিনিসের দোকান খুঁজে জোগাড় করে বিশেষ কিছু ব্র্যান্ডের মদের খালি বোতল। বাইরে থেকে ছাপিয়ে নিয়ে আসে ব্র্যান্ডের লেবেল। আগে থেকে তৈরি থাকে মদের ফ্লেভার ও রং। খুব সাধারণ ও মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক, এমন পদ্ধতিতে স্পিরিটে ফ্লেভার ও গন্ধ মেশানো হয়। সেই মদ বোতলবন্দি করে চক্রের সদস্যরা। কোনও ফিল্টারও করা হয় না বলে অভিযোগ। সেই জাল মদ পাচার হয় কলকাতা ও তার আশপাশের কিছু জায়গায়। বেআইনি মদের ঠেকের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছোট দোকানেও যে জাল মদ পাচার হয়েছে, তা জেনেছেন গোয়েন্দারা।
এদিকে, স্কচের মতো দামি মদের ‘জাল’ও বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাঁরা জেনেছেন, সিরিঞ্জ দিয়ে স্কচের বোতল থেকে মদ বের করে সেই বোতলে মেশানো হচ্ছে কম দামের মদ। যে মদ সিরিঞ্জ দিয়ে টেনে বের করে নেওয়া হয়েছে, সেই মদ একই ব্র্যান্ডের স্কচের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে আবগারি গোয়েন্দাদের কাছে খবর, শহরের কিছু পানশালায় এই ধরনের ‘জাল মদ’ বিক্রি করা হয়। তার প্রমাণ এর আগেও নামী হোটেলে তল্লাশি চালিয়ে পেয়েছেন তাঁরা। আসল মদের সঙ্গে এই জাল মদের স্বাদের পার্থক্য থাকলেও নেশাতুর হওয়ার পর অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। সেই সুযোগে এই ধরনের জাল মদ বিক্রি করে কিছু পানশালা কর্তৃপক্ষ। রাজ্য আবগারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়দিন ও নববর্ষে শহরে এই ধরনের জাল মদ রোখার চেষ্টা চলছে। কলকাতার আশপাশে জাল মদের চক্রের উপর চলছে কড়া নজরদারি। কলকাতার দোকান বা পানশালায় যাতে জাল মদ বিক্রি না হয়, তার জন্য সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
[অপমান করেছে স্ত্রী, দুই ছেলেকে নিয়ে রেললাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী যুবক]
The post জোড়া পদ্ধতিতে জাল মদ, বড়দিনের উৎসবে শঙ্কায় আবগারি দপ্তর appeared first on Sangbad Pratidin.