গৌতম ব্রহ্ম : মরণোত্তর দেহদান। শব্দবন্ধটি ইদানীং যথেষ্ট পরিচিত। বহু মানুষ তাঁদের দেহ দান করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিসাধনের জন্য। মৃত ব্যক্তির অঙ্গদানে নতুন প্রাণ পায় মৃতপ্রায় ব্যক্তি। কিন্তু যখন শোনা যায়, একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর পর নিজের হাতে সেই সন্তানের দেহ দান করছেন তার বাবা-মা, তখন নড়ে যায় আামাদের অন্তরাত্মা। আর মন ধাক্কা খায় এটা শুনে যখন সন্তানহারা বাবা বলেন মেয়েটাকে আগুনে পুড়তে দেখতে পারবেন না বলেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত।
[জানেন, কী থেকে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়?]
ঘটনা হাওড়ার শিবপুরের। সুবীর চক্রবর্তীর একমাত্র মেয়ে সৃজা। দুরারোগ্য ‘এইচএলএইচ’ রোগের ছোবল মেয়ের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। বৃহস্পতিবার পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তেরো বছরের কিশোরীর। কিন্তু সকালেই ‘হার্ট অ্যাটাক।’ ডাক্তারবাবুরা হাজার চেষ্টা করেও প্রাণ সঞ্চার করতে পারেননি সৃজার শরীরে।
[আপনার হাতেই লুকিয়ে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি, জানেন কীভাবে?]
শোকে পাথর হয়েও সুবীরবাবু ও তাঁর স্ত্রী অর্পিতা অসম্ভব ‘সাহসী’ একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। দান করেন মেয়ের দেহ। সুবীরবাবুর ইচ্ছা পূরণ করতে এগিয়ে আসেন রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার। তাঁর উদ্যোগে বৃহস্পতিবারই সৃজার দেহ সংগ্রহ করেন রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজির বিশেষজ্ঞরা। এরপর বাড়ি ঘুরে দেহ আসে এসএসকেএম হাসপাতালে। শুক্রবার দেহ থেকে চামড়া নিয়ে সংরক্ষণ করে রাখে পিজি’র প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, যার পুরোভাগে ছিলেন অধ্যাপক বিজয়কুমার মজুমদার। সৃজার ত্বক জমা থাকবে পিজি’র স্কিন ব্যাঙ্ক—এ। আগুনে পোড়া কোনও রোগী হয়তো তা দিয়ে নতুন জীবন পাবেন। চোখ, ত্বক সংরক্ষিত হওয়ার পর সৃজার দেহ চলে যায় পিজি’র অ্যানাটমি বিভাগে। ডাক্তারি পড়ুয়াদের শব ব্যবচ্ছেদে তা কাজে লাগবে।
[স্তন্যদানের জায়গাই নেই কর্মস্থলে, কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন মায়েরা]
গত কয়েক বছরে অনেকগুলি দেহদানের ঘটনার সাক্ষী রাজ্য। কিন্তু সৃজার মতো এত অল্পবয়েসীর দেহদান রাজ্যে এই প্রথম।
[জানেন, পুজোর আগে শহরের নতুন স্টাইল স্টেটমেন্ট কি?]
সুবীরবাবু ও অর্পিতাদেবী অবশ্য এতকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নেননি। মেয়ের শেষকৃত্য করার মতো মনের জোর ওঁদের ছিল না। মেয়ের দেহ চুল্লিতে পুড়ছে, তা দেখতে পারবেন না। ফলে দেহদানের সিদ্ধান্ত বলে এদিন জানান সুবীরবাবু। হতে পারে, নির্মম সত্যের কাছ থেকে পালানোর রাস্তা খুঁজেছিলেন তাঁরা, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই রাস্তায় চলার পথেও নজির গড়ে গেলেন সুবীর বাবু ও তাঁর পরিবার।
The post তেরো বছরের মেয়ের দেহ দান করলেন শিবপুরের দম্পতি appeared first on Sangbad Pratidin.