ধান খেতের জলে দূষণবিহীনভাবে মাছ চাষ করাকে ‘মিশ্র’ বা ‘জাওলা’ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা বলে। এই চাষ পরিবেশবান্ধব। কম খরচে বেশি আয় হয়। সুন্দরবন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর এলাকার এক ফসলি ধান চাষের জমিতে ধান চাষ ও মাছ এক সাথে করলে প্রচুর লাভ। লিখেছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অন্তরা মহাপাত্র ও বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বরিষ্ঠ গবেষক ড. পরিতোষ বিশ্বাস। আজ শেষ পর্ব।
চাষের জমির সীমানার আল বা বাঁধ মজবুত করে তৈরি করতে হয়। ইঁদুর যেন এই বাঁধে গর্ত না করে। গর্ত থাকলে তার মধ্যে দিয়ে জলের সঙ্গে মাছেরাও পালিয়ে যাবে। নজর রাখতে হবে, যেন ফিশারিতে কোনও মাছখেকো প্রাণী (ভোঁদর, মেছো বিড়াল) বা মাছখেকো পাখী (মাছরাঙা, বক) বা মাংসাশী মাছ (শোল, শাল, বোয়াল, চিতল, ভেটকি, ন্যাদোশ) না থাকে। থাকলেই সর্বনাশ। বিরাট ক্ষতি। ছোট সব মাছ খেয়ে নেবে। ধান খেতের অল্প জলে যখন মাছেরা খেলে বেড়ায় তখন মানুষ বা জন্তু-জানোয়ারের লোভ থেকে মাছকে রক্ষা করা খুব কঠিন। তখন তাড়াতাড়ি মাছ বিক্রি করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নাহলে, পথে বসতে হতে পারে।
উপকারিতা
- মাছের শরীরের বর্জ্য মল, মূত্র এবং মৃত মাছেরা জমির উর্বরা শক্তি বাড়ায়।
- ধান গাছের পাশ কাঠির (Tellering) সংখ্যা বাড়ে, ধানের শিষের সংখ্যাও বাড়ে। ফলনও বাড়ে।
- ক্ষতিকারক পোকা, যেমন, মাজরা পোকা (Baddy Stem Borer), মাকড়শা বা মশার ডিম, লার্ভা ইত্যাদি মাছেদের প্রিয় খাবার, যার ফলে, মাছ, ধান, মানুষের উপকার হয়। মানুষ পতঙ্গবাহিত-রোগ (ডেঙ্গি, এনকেফেলাইটিস, ম্যালেরিয়া প্রভৃতির আক্রমণ থেকে বাঁচে।
- একই জমিতে মাছ ও ধান থেকে চাষির আয় দ্বিগুণ হয়।
- রাসায়নিক বর্জিত চাষ হওয়ায় চাষের খরচ কমে, লাভও বাড়ে।
- জমিতে জল থাকায় ক্ষতিকারক ইঁদুর, আগাছা ক্ষতি করতে পারে না।
- এই চাষে জমির শক্তি অনেক বাড়ে। ধান ও গাছের ফলন ও বাড়ে, আয়ও বাড়ে।