কৃষ্ণকুমার দাস: তৃণমূলের নবীন-প্রবীণ তত্ত্ব নিয়ে কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এই নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় মুখ খোলেন একাধিক তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক। সম্প্রতি এই নিয়ে মুখ খোলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বয়সের ঊর্ধ্বসীমা থাকার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এবার এই ইস্যুতে মুখ খুললেন কলকাতা মেয়র এবং পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
এবিপি আনন্দের সঙ্গে কথা বলার সময় পুর ও নগরোয়ন্ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “রাজনীতি আর চাকরি আলাদা। বয়স হলে দৌঁড়নো সম্ভব না এটা ঠিক। তবে রাজনীতিকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। আমরা সবাই স্বেচ্ছাসেবক, কেউ কর্মী নই। অভিষেক যেটা বলছেন, ঠিক বলছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেই আমরা রয়েছি। আমি চাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও ২০ বছর সুস্থ সবল থাকুন। অভিজ্ঞতার আলাদা দাম রয়েছে।” ফিরহাদের মতে, প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একমাত্র মাপকাঠি গ্রহণযোগ্যতা। তিনি বলেন, “প্রার্থী হওয়ার বিষয়েও একমাত্র মাপকাঠি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। আমি তো এখনও মনে করি ডায়মন্ড হারবারে সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্যতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তেমন অন্য কোনও জায়গায় আরও কারও হতে পারে। মিছিল-মিটিং ও মানুষের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে নবীনদের প্রয়োজন। আমি যেমন এখন মধ্যবয়সী, কয়েকদিন পর প্রবীণ হব। আজ যাঁরা নবীন কাল তাঁরা মধ্যবয়সে পৌঁছবেন।’
২০২১-এ তৃণমূল তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পর শাসকদলের অন্দরে চালু হয়েছিল ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’। সেই নিয়ে দলের কারও কারও অমত ছিল। সেই ইস্যুতেও এদিন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন পুরমন্ত্রী। ফিরহাদ বলেন, “দলে অনেক ধরনের মতামত থাকে, আলোচনা হয়। আমরা সবাই মতামত দিই। সিদ্ধান্ত নেন আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যেটা ঠিক করেন আমরা সেটা মেনে নিই। দলে খোলা হাওয়ার মতো কথা বলার জায়গা রয়েছে। ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নিয়ে এখনও আলোচনার মতো বিষয় রয়েছে। ব্যক্তি বিশেষে মতামত আলাদা। তবে এই নিয়ে আমার তত্ত্ব বাইরে বলব না। সেটা দলের ভিতরে বলব।” উল্লেখ্য, নবীন-প্রবীণ তত্ত্ব নিয়ে সম্প্রতি মুখ খোলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সব পেশাতেই বয়সের একটা ঊর্ধ্বসীমা অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। কারণ নবীনদের পক্ষে যে পরিশ্রম করা সম্ভব, প্রবীণদের পক্ষে কখনই তা সম্ভব না।”
ফিরহাদ বলেন, “মানুষের কাছে যাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাঁকে প্রার্থী করা উচিত। সে প্রবীণ হলে প্রবীণ হবে, নবীন হলে নবীন হবে। আমি এখনও বলছি ডায়মন্ড হারবারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন অনেকই আছেন, যাঁদের মানুষ গ্রহণ করেছে, তাঁরাই থাকবেন।” এরপরেই তাঁর আরও মন্তব্য, “আমি নিজেকে মধ্যবয়স্ক বলি। আমি নিজে নবীন প্রবীণের মাঝখানে রয়েছি।” প্রবীণরা কতটা মাঠে ময়দানে নেমে সক্রিয় থাকতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ বলেন, “শোভনদা (মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়) খুবই কাজ করতে পারেন। মদনদাও (বিধায়ক মদন মিত্র) কাজ করতে পারেন। সৌগতদা যে ভাবে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে কাজ করেন তা খুব কম জনপ্রতিনিধি করেন। আমরা তাঁর কাছে শিখি কী ভাবে নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্র সামলাতে হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে আমাদের কারও এ বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়। যা বলার বলা উচিত পার্টির অন্দরেই। সবার প্রয়োজন আছে দলে। মানুষের গ্রহণযোগ্যতাই শেষ কথা হওয়া উচিত।’’
তার পরেই ফিরহাদের এমন মন্তব্য যথেষ্ঠ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বাংলার রাজনীতির কারবারিরা। তবে দলের আরও একটি বিষয় নিয়েও নিজের মতামত জানিয়েছেন কলকাতা বন্দরের বিধায়ক। ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেছেন, ‘‘দলে অনেক রকম কথা থাকে। তা নিয়ে আলোচনাও হয়। আমরা সবাই দলে নিজেদের মতামত জানাই। সেই গণতন্ত্র আমাদের দলে আছে। তারপর নির্ণয় নেন আমাদের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যা ঠিক করবেন আমরা শৃঙ্খলাপরায়ণ সৈনিক সেটাই করব। এটা আলোচনার মধ্যে ছিল। এক এক জনের এক একটা থিয়োরি। দলে এটা থাকা উচিত। উপর থেকে কোনও জিনিস চাপিয়ে দেওয়া হয় না। তাই পার্টির ভিতরে যা আলোচনা হয় তা বাইরে কখনওই বলব না।’’