নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: কাজ সেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ফিরোজ। আসার সময় মেয়ের প্রিয় চকোলেট আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর কেটে গিয়েছে পাঁচদিন। সোমবার থেকে অশান্তির আগুনে খাক হয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বহু এলাকা। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৩ জন। অশান্তির মাঝে আর বাড়ি ফেরা হয়নি করওয়াল নগরের ফিরোজেরও। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। এদিকে বাবার খোঁজে আকুল চার বছরের মেয়ে খুশি। কিন্তু কখন ফিরবে বাবা? উত্তর দিতে পারছেন না মা সাহানাও।
শুক্রবার সকালে স্বামীকে খুঁজতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন সাহানা বিবি। যদিও চিকিৎসাধীনদের মধ্যে থেকে তাঁর স্বামীকে খুঁজে পান। সেখানেও মেলেনি ফিরোজের হদিশ। শেষপর্যন্ত মর্গেও হাজির হন সাহানা। না, সেখানেও নেই ফিরোজ। মর্গের সামনেই কান্নাভেজা গলায় সংবাদমাধ্যমকে গোটা ঘটনার কথা জানান সাহানা। গত পাঁচদিন ধরে ফিরোজ নিখোঁজ থাকার পরও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেননি তিনি। সাহানার ভাই আহমেদ আলির অভিযোগ, “মঙ্গলবার থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর চেষ্টা করছি।লোনি থানায় গিয়েছিলাম, পুলিশ বলল দিল্লির করওয়াল থানায় অভিযোগ জানাতে। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে করওয়াল এলাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।” শেষপর্যন্ত শুক্রবারই নিখোঁজ ডায়েরি নেয় পুলিশও।
[আরও পড়ুন : স্কুল ও কলেজে মুসলিমদের জন্য পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষণ, নয়া আইনের পথে মহারাষ্ট্র!]
ঠিক কী হয়েছিল ফিরোজের? এ প্রসঙ্গে সাহানা বিবি বলেন, ফিরোজ ওড়নার কারুকাজ করতেন। সেই কাজের সূত্র ধরেই তাঁকে চাঁদনি চক যেতে হত। সোমবারও তেমনই কাজে বেরিয়েছিলেন ফিরোজ। কিন্তু ফেরার পথে অটো থেকে নামতেই কয়েকজন যুবক তাঁকে ঘিরে ধরে। মারধর করতে থাকে। ঘটনাস্থলে বদরে আলম বলে জনৈক ব্যক্তি ফিরোজকে উদ্ধার করে। পরে বদরের বাড়িতেই ঠাঁই পায় ফিরোজ। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ফোন করে পরিবারকে গোটা ঘটনার কথা জানান তিনি। মঙ্গলবার সকালেও বদরের ফোন থেকে ফোন করেছিলেন ফিরোজ। নিজের মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন। সেইসময় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন ফিরোজ। সাহানা জানান, “ফিরোজ বলছিল, পুলিশ একটু সাহায্য করলে আমরা এখান থেকে বেরিযে যেতে পারতাম। বদরের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। টেলিফোন সংযোগও কাটা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোনও সাহায্য করছে না।” এরপর থেকে আর হদিশ মেলেনি ফিরোজের।
[আরও পড়ুন : সম্প্রীতির নজির! মেয়ের বিয়ের কার্ডে রাধাকৃষ্ণ ও গণেশের ছবি ছাপালেন মুসলিম ব্যক্তি]
বদরের বাড়ি কালিঘাটা চৌকে। পরিজনদের নিয়েও সেখানে গিয়েছিলেন সাহানা। কিন্তু বদরের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারেন। নিখোঁজ বদরও। আর এর জেরেই চিন্তা কয়েকগুন বেড়েছে সাহানার। শেষের দিকে কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে গিয়েছিল তাঁর। চোখ মুছে বললেন, “জানেন তো বাড়ি ঢুকতেও কষ্ট হচ্ছে, বাড়িতে পা দিলেই মেয়ে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করছে, বাবা কোথায়, কখন আসবে?”
The post ‘বাবা কখন আসবে…’ চার বছরের মেয়ের প্রশ্নে নির্বাক অশান্ত দিল্লি appeared first on Sangbad Pratidin.