নন্দন দত্ত, রামপুরহাট: বাঙালির শারদ উৎসবে বিহারের বাসিন্দারা বীরভূমে নিয়ে এসেছেন আনন্দ নাড়ু। পুজোয় তাঁদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। আধুনিকতায় হারিয়েছে বাড়ির মেয়েদের হাতের তৈরি নাড়ু। একদিকে বিহারি ব্যবসায়ী, অন্যদিকে বিভিন্ন কোম্পানি পুজোর বাজার ধরতে বিভিন্ন রকমের আনন্দের নাড়ু নিয়ে হাজির। একসময় গ্রামে-গঞ্জে পুজোতে অতিথি আপ্যায়ন করতে একমাত্র ভরসা ছিল নারকেলের নাড়ু। মা-ঠাকুরমাদের হাতে তৈরি নাড়ু, বেসনের ঝুড়ির নাড়ু কিংবা গুড়ের মুড়কি এখন আর নেই। সেই নাড়ু, মুড়কি এখন শুধুমাত্র বাজারের পণ্য। রামপুরহাট, বোলপুর বা সিউড়ির বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যাচ্ছে রেডিমেড নাড়ু। তবে বিহারিদের হাতে বানানো টাটকা নাড়ুর চাহিদা বেশি।
সিউড়ির বাসস্ট্যান্ড এসপি মোড়-সহ বিভিন্ন জায়গায় স্টল করে বিক্রি হচ্ছে নাড়ু। রামপুরহাট শহরে বিহারিদের একটা বড় অংশ পরিযায়ী হিসাবে নাড়ু বানাতে বাংলায় আসেন। তবে পুজোয়(Durga Puja 2024) তাঁদের ব্যস্ততা চরমে। অনেক পরিযায়ী শ্রমিক পুজোয় স্থায়ী আস্তানা গেড়েছেন। রামপুরহাট আদালতের পাশেই এক বিহারের নাড়ু ব্যবসায়ী ক্রন্দন সাউ জানান, ‘‘বিহারের গয়া জেলা থেকে রামপুরহাট শহরে এসেছেন নাড়ুর ব্যবসা করতে। তবে পুজোর ব্যবসাটা সম্পূর্ণ আলাদা। একা হাতে সামলাতে পারেন না, আরও ৪-৫ জনকে আনতে হয়। সারা বছর এই দিনগুলির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন তিনি।
রামপুরহাট হাসপাতাল পাড়ার বৃদ্ধা সরস্বতী মণ্ডল আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর সময় প্রতি বাড়িতেই আখের গুড়, খই, বেসন, ময়দা, নারকেল ও চিনি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু পদ রাখা হত। এখন সব অতীত। একটা সময় ছিল যখন চাল কিংবা চিড়ে তৈরি করার জন্য অনেক বাড়িতে ঢেঁকির শব্দে ভোরে ঘুম ভাঙত। কালের পরিবর্তনে এখন যন্ত্রাংশের প্রবেশ হয়েছে। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি।’’বর্তমানে আখের গুড়ের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। পাশাপাশি বেড়েছে মেয়েদের ব্যস্ততা। এছাড়াও নাড়ু তৈরিতে এখনকার মেয়েদের অনভিজ্ঞতার ফলে বাড়ির হেঁশেলে বন্ধ হয়েছে নাড়ু মুড়কি তৈরির কাজ। এককথায় বলা যেতে পারে, প্রায় বিলুপ্তির পথে বাড়ির মেয়ের হাতের তৈরি নাড়ু, মুড়কি।
শহরের বিভিন্ন দোকানে রেডিমেড নারকেল নাড়ু পাওয়া গেলেও একেবারে চোখের সামনে বিভিন্ন ধরনের টাটকা নাড়ু তৈরি করছেন বিহারের বাসিন্দারা। রামপুরহাটের পাঁচমাথার নাড়ু ব্যবসায়ী অসীম সাউ জানান, ‘‘নাড়ুর দাম কম। তাই কেনাই বেশি সুবিধা মানুষের।’’ সাধারণ নাড়ু ৩০ টাকায় প্রতি ২৫০ গ্রাম প্যাকেটের পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভালোমানের নাড়ু একই ওজনের ৭০ টাকা পর্যন্ত দর রয়েছে। নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ু, মুড়ির নাড়ু, ঝুড়ির নাড়ু, মুড়কি ইত্যাদি প্রায় ১০ রকমের নাড়ু এবারের পুজোয় তৈরি করা হচ্ছে। তবে এখনও কোনও ব্যবসায়ী পুজো স্পেশাল নাড়ু তৈরি করেননি।