সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হয়তো তোমারই জন্য, জিতে গেল রাজনীতির সৌজন্য! তাঁকে দেখে ঘাটালবাসী মুচকি হেসে এখন এ-কথা বলতেই পারেন। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান তো ছিলই, তবে চলতি ভোটের হাওয়ায় দেবের মাস্টারস্ট্রোক ছিল সৌজন্য-ই। দেখা গেল, তৃণমূলের রাজনৈতিক সৌজন্যের 'পোস্টারবয়' হতাশ করেননি। ঘাটালে ফের সবুজঝড় উঠল তাঁর ক্যারিশমাতেই।
টলিউডের ‘চ্যাম্পিয়ন’ বনাম ‘মাচো মস্তানা’!ঘাটালের রাজনৈতিক লড়াই মোটামুটি এই বৃত্তেই ঘোরাফেরা করছিল। তবে, চলতি ভোটের আগে সেই কেন্দ্র বাড়তি নজর কেড়ে নিয়েছিল একাধিক কারণে। খোদ দেব(Dev) রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি ছাড়বেন বললেই দল তাঁকে ছাড়ে নাকি! ছাড়েওনি। শোনা যায়, আসরে নেমেছিলেন খোদ দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর হাত ছাড়েননি। বরং বলেছিলেন, যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান দেবের স্বপ্ন, তা বাস্তবায়িত করতে পদক্ষেপ করবে রাজ্যই। অতএব সব জল্পনার সমাপ্তি। বাংলা দেখল রাজনীতিতে 'খোকাবাবু'র প্রত্যাবর্তন। সেই শুরু। দল যে দায়িত্ব দিয়েছিল তা রক্ষা করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছিলেন তারকা। নিজের কেন্দ্রে তো বটেই, ঘুরে ঘুরে প্রায় গোটা বাংলাতেই প্রচার করেছিলেন তিনি।
আর তাঁর সাধের ঘাটাল? বলতে গেলে, ঘাটালের ঘরের ছেলেই হয়ে গিয়েছেন দেব। অতএব আশা হোক আর ভরসা, দেব-এ ছিল অটুট। চব্বিশের ভোটের লড়াই এমনিতেই শক্ত। রাজনীতির শক্ত মাটিতেই সে লড়াই লড়ছেন দেব-ও। তবে তাঁর মধ্যেই তিনি উড়িয়ে দিলেন সৌজন্যের পতাকা। বঙ্গে রাজনৈতিক সৌজনের যে বাতাবরণ ক্রমশ যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল, তা পুরোদমে ফিরিয়ে আনলেন দেব। শুরু হল নতুন চর্চা। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবেই। কিন্তু তা কি ব্যক্তিসম্পর্কে বিষিয়ে দিতে পারে! মুখে মুখে শুরু হল কথা। বলা যায়, দেবের সৌজন্যে নতুন ন্যারেটিভ পেয়ে গিয়েছিল ভোটের রাজনীতি। সেই নিয়ে তর্ক-বিতর্কও হল বিস্তর। তবে শেষমেশ ভোটের ফল(Ghatal Lok Sabha Election Result) দেখাল, সৌজন্যের রাজনীতিতে শেষ হাসি হেসেছেন দেব-ই।
[আরও পড়ুন: নিজের বাড়িতেই ক্ষতবিক্ষত মিমি! ছবি শেয়ার করে কাকে দুষলেন?]
তাহলে কোন অঙ্কে হেরে গেলেন পদ্মপ্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়? খড়্গপুরের প্রাক্তন বিধায়কের প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাঁর নজর ঘাটালের আসন জেতার থেকেও তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল বিভিন্ন ইস্যুতে দেবকে আক্রমণ করা। ভোটপ্রচারের ময়দানে কখনও দেবের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছেন, আবার কখনও বা চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনের তরফে নোটিস পেয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সৌজন্য বনাম দোষারপের সিঁড়িভাঙা অঙ্কতেই ক্রমশ যেন পিছিয়ে যেতে শুরু করলেন হিরণ। ভোটের ফলাফল তাতেই সিলমোহর দিয়ে দিল। তবে জয়ের যাত্রাপথে চড়াই-উতরাই ছিলই। প্রাথমিক ট্রেন্ডে দেখা গিয়েছিল, অন্তত কিছুক্ষণের জন্যও এগিয়ে ছিলেন হিরণ। বেলা গড়াতে লিড নিতে শুরু করেন দেব। সেই লিড ক্রমশ বাড়তে থাকে। বেলাশেষে ঘাটালের ভোট আর মন জিতলেন দেবই।
ছবি 'X' হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত
সাংসদ হিসাবে এবার এক নতুন গন্তব্যের দিকে দেব। ২০১৪ সালে সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে ৪ লক্ষ ভোটে হারিয়েছিলেন। সেই থেকে সাংসদ হিসেবে তাঁর বিজয়রথ ছুটছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতী ঘোষকে পরাস্ত করার পর এবার হারালেন তাঁরই টলি-সতীর্থকে। ঘাটাল জানত, দেব তারকা বটে তবে দূর আকাশের তারকা নন। বরং কাছের মানুষই। সেই কাছের মানুষকেই আরও একটু কাছে টেনে নিলেন ঘাটালবাসী। দেব নিজেও অনেকটা বদলে ফেলেছেন নিজেকে। কোথায় সেই তারকাসুলভ গ্ল্যামার-জৌলুস। ঘামে ভেজা পোশাকে জনতার মুখরিত সখ্যে যখন তিনি মিশে যেতেন, তখন কে বলবে তিনি সেলুয়েডের মানুষ! আদতে তিনি বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলেন, আমি তোমাদেরই লোক। ভোটের খাতায় তাঁকে জিতিয়ে দিয়ে ঘাটালের মানুষও যেন তাঁকে বলে দিলেন, "আপনি থাকছেন স্যার।"
অতঃপর? দেব আবার সংসদে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে নতুন করে হয়তো কোমর বেঁধে নামবেন। আর সেই অবকাশেই যেন জিতে যাবে সৌজন্য, বাংলার চিরকালের রাজনৈতিক সৌজন্যের ঐতিহ্য।