সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানুষ মৃত্যুর পরে কীসের মায়া কাটাতে পারে না?
এক কথায় বললে, জীবনের!
তবে, জীবন শব্দটা মাত্র তিন অক্ষরের হলেও এর ব্যাপ্তি বড় কম নয়। ফলে, অর্থ, কাম, সুরা, প্রিয় মানুষ বা পছন্দের জীবনযাত্রা- যে কোনও কিছুই মায়ায় বেঁধে রাখতে পারে মৃত্যুর পরেও।
কিন্তু, মধ্যপ্রদেশের শিবপুরীর এই ভাঙা কেল্লার কাহিনি বড় জটিল। মৃত্যুর আগে যিনি এখানে থাকতেন, তিনি আর কাউকে থাকতে দেন না বর্তমানে।
তিনি বীর খান্ডেরাও!
শিবপুরী আজও জয়ধ্বনি দেয় তার পরাক্রমশালী সন্তান সেনাপতি বীর খান্ডেরাওয়ের নামে। বীর খান্ডেরাওয়ের হাত ধরেই শিবপুরী জেলার এই গ্রাম যেমন গড়ে উঠেছিল, তেমনই সমৃদ্ধও হয়েছিল। প্রিয় এই গ্রামে, প্রিয় এই কেল্লায় নিজের পছন্দমতো জীবন কাটাতেন বীর খান্ডেরাও। মূলত যুদ্ধ-বিগ্রহ, শত্রুর হাত থেকে স্বভূমি রক্ষা নিয়েই কাটত তাঁর জীবন। এক ক্ষত্রিয় বীরের যা কাজ আর কী!
তবে, নামে যতই সেনাপতি হোন, আদতে শিবপুরীর এই গ্রামের রাজাই ছিলেন বীর খান্ডেরাও। কাজেই তাঁর কেল্লা আর জীবনযাপনের জাঁকজমক দেখে অবাক হয়ে যেতেন বহিরাগতরা। আর অবাক হতেন কেল্লায় প্রতি রাতে বসা জলসার বাহারে।
কাহিনি বলে, সঙ্গীতের প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল বীর খান্ডেরাওয়ের। তাই যে সময়টায় তিনি যুদ্ধে থাকতেন না, তার প্রতি রাতে কেল্লায় বসত মেহফিল। সুন্দরী নর্তকীদের ঘুঙুর আর সুরের ছন্দে উতলা হত রাত।
আবার অনেকে বলেন, রোজ রাতের এই জলসা নিছক সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ নয়। শিবপুরীর এই কেল্লায় না কি সঞ্চিত ছিল চোখধাঁধানো সম্পদ। সেটা পাহারা দেওয়ার জন্যই রোজ রাতে জলসা বসত কেল্লায়। যাতে নাচ, গানের শব্দে কেউ ঘুমিয়ে পড়তে না পারে।
ঘুমোতেন না বীর খান্ডেরাও নিজেও, অন্যকেও ঘুমোতে দিতেন না।
কিন্তু, এভাবে বেশি দিন চলতে পারে না। স্বাভাবিক নিয়মেই একদিন রাত-জাগার অত্যাচারের শোধ তুলল শরীর। অসুস্থ হয়ে অবশেষে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি।
তার পর?
যে গ্রামের একদিন রক্ষাকর্তা ছিলেন বীর খান্ডেরাও, সেই গ্রামে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটতে লাগল। এক এক করে মৃত্যুর ছায়া নেমে আসতে থাকল গ্রামের সব বাড়িতেই।
কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে গ্রামবাসীরা এক তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হন। তিনি বলেন, বীর খান্ডেরাওয়ের অতৃপ্ত আত্মা কেল্লা ছেড়ে কোথাও যায়নি। সম্পদের মায়া তাঁকে কেল্লায় বেঁধে রেখেছে মৃত্যুর পরেও। যাতে এই সম্পদ কারও হাতে না যায়, সেই জন্যই গ্রামবাসীদের হত্যা করছেন তিনি।
সব কথা জানার পরে ভয়ে এবং তান্ত্রিকের পরামর্শমতো সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে যান। শুধু নর্তকী, দাসদাসী আর বীর খান্ডেরাওয়ের পরিবারের লোকজন থেকে যায়।
কালের নিয়মে ধীরে ধীরে মৃত্যু হয় তাঁদেরও! কেটে যায় অনেক যুগ। ভয় কাটিয়ে আবার গ্রামে বসতি গড়ে উঠতে থাকে। স্কুল হয়, আলো আসে।
কিন্তু, বীর খান্ডেরাও কেল্লা ছেড়ে কোথাও যাননি। আজও রাত নামলেই ঘুঙুরের শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়। শোনা যায়, ভেসে আসা সুর। সেই সুর যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা এক অমোঘ টানে পায়ে পায়ে হাজির হন কেল্লায়। তার পর আর ফেরেন না পরিচিত জগতে। ফেরে শুধু তাদের মৃতদেহ!
অনেকে গুপ্তধন খুঁজতেও বেশ কয়েকবার হানা দিয়েছেন বীর খান্ডেরাওয়ের কেল্লায়। অদ্ভুত ব্যাপার, প্রত্যেকেরই মৃত্যু হয়েছে মুখে রক্ত তুলে!
অবাক ব্যাপার, না? অর্থরক্ষার জন্য এভাবে রক্ষকই পরিণত হলেন ভক্ষকে?
আসলে, ব্যাপারটা শুধুই অর্থের নয়। ওই বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, অন্যের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকাতেই লুকিয়ে ছিল বীর খান্ডেরাওয়ের অহং। মৃত্যুর পরেও তা যায়নি।
আপনারও তাই শিবপুরীর ওই কেল্লার দিকে না যাওয়াই ভাল হবে! শুধু শুধু সব হারানো অতৃপ্ত আত্মার অহঙ্কারে ঘা দেওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে কি?
The post রাত নামলেই এই কেল্লায় ভুতুড়ে জলসা বসে appeared first on Sangbad Pratidin.