সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রেমডিসিভি ও ডেক্সামেথাজোনের পর এবার করোনার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ফ্যাভিপিরাভিরকে ছাড়পত্র দিল ড্রাগ কন্ট্রোল। ফ্যাবিফ্লু ব্র্যান্ডের আওতায় এই ড্রাগ ছাড়পত্র পেয়েছে। এর প্রতি ট্যাবলেটের দাম ১০৩ টাকা। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালসের হাত ধরে বাজারে আসতে চলেছে এই ওষুধ। ওষুধটি ২০০ মিলিগ্রামের হিসাবে ৩৪টি ট্যাবলেটগুলির স্ট্রিপের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে। তবে বর্তমানে নির্দিষ্ট সংখ্যক করোনা রোগীর উপরেই এই ওষুধের ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল।
ইতিমধ্যেই চিন, জাপান, ইটালির মতো দেশে এই ড্রাগের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। রিপোর্ট যথেষ্ট ইতিবাচক। আর তার পরই ভারতও এই ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) ও সেন্টার ফর সায়েন্টেফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (CSIR) তত্ত্বাবধানে এই ট্রায়াল চলছিল। মুম্বইয়ের গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যালে এর তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রান চলছিল। এর রিপোর্ট ইতিবাচক হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে এবার থেকে এই ওষুধ প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল। তবে এই ওষুধ ব্যবহার করতে গেলে প্রেসক্রিপশন বাধ্যতামূলক।
[ আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফায় মোদি সরকার: ঐতিহাসিক, সাহসী ও রূপান্তরকারী সংস্কারের একটি বছর ]
ফ্যাভিপিরাভির ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন হিসেবে মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হয়। এটি RNA পলিমারেজ উৎসেচককে প্রতিহত করে। ভাইরাসের প্রতিলিপি গঠনে জন্যে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেহের মধ্যে ভাইরাল প্রোটিনের বিভাজন রোধ করে এই ড্রাগ। এই ওষুধ কোনওভাবেই মানুষের দেহের DNA বা RNA-কে প্রভাবিত করতে পারে না। অপর একটি মতে, এই ওষুধ ভাইরাসের RNA-এর মারাত্মক ট্রান্সভার্শন মিউটেশন ঘটায়। যার ফলে অতি দুর্বল ফেনোটাইপ বিশিষ্ট ভাইরাস গঠিত হয়। এই ওষুধ কোনওভাবেই মানুষের দেহের DNA বা RNA-কে প্রভাবিত করতে পারে না। ফলে মানুষের দেহে এর ক্ষতিকর প্রভাবের সম্ভবনা অতি সীমিত। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রায় ৯১% ক্ষেত্রে এই ওষুধ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় ফলপ্রসূ। COVID-19 রোগীদের ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগের পর CT স্ক্যান রিপোর্ট অসম্ভব ইতিবাচক। করোনা রোগীদের ১৪ দিনের ডোজে ফ্যাভিপিরাভির দেওয়া হয়। সংক্রমণ মাঝারি হলে প্রথম দিনে ৩৬০০ মিলিগ্রামের ডোজ দেওয়া হবে। এরপর ১৪ দিনের ডোজে এই ওষুধ দেওয়া হবে রোগীদের। তবে সমস্তটাই নির্ভর করছে সংক্রমণের উপর।
জাপানে এর ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধী হিসেবে। এটি আভিগান নামে জাপানে অতি সুপরিচিত। ২০১৪ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ যখন বেড়েছিল, তখন এই ওষুধ মারাত্মক কাজে দিয়েছিল। সেই কথা মাথায় রেখেই ইয়েলো ফিভার, হাত-পা ব্যাথা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই ওষুধের ব্যবহার করা হচ্ছে। রাশিয়ায় এই ওষুধে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছেন চিকিৎসকরা। সেখানে এই ওষুধের প্রাথমিক প্রয়োগে ৩০০ জনের বেশি রোগী মাত্র ৪ দিনে প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রক অবিলম্বে এই ওষুধের প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে। এরপরই ভারতে এর ট্রায়াল রান শুরু হয়। তাতে ইতিবাচক ফল পাওয়ার পরই ওষুধটিকে আজ ড্রাগ কন্ট্রোল ছাড়পত্র দিল। রেমডিসিভির ও ডেক্সামেথাজোনের পর এই ওষুধের হাত ধরে এবার করোনা যুদ্ধে জয়ী হবে ভারত। এমনটাই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
The post ফ্যাভিপিরাভিরকে হাতিয়ার করে করোনা যুদ্ধে জয়ের পথে ভারত, ওষুধ তৈরির ছাড়পত্র পেল Glenmark appeared first on Sangbad Pratidin.