বর্ষশেষের আনন্দে আজ গা ভাসানোর দিন৷ বাইরে কিংবা বাড়িতে পার্টির পরিকল্পনা নিশ্চয়ই রয়েছে আপনার৷ পার্টির আনন্দ যাতে কোনওভাবেই মাটি না হয়, সে বিষয়েই কিছু টিপস দিচ্ছেন রীতা ভিমানি৷
ক্রিসমাসে আমাদের সবার প্রচুর বাইরে খাওয়া হয়ে গিয়েছে। ক্লাবে, রেস্তরাঁয়, হোটেলে খেয়ে খেয়ে সবাই ক্লান্ত।নিউ ইয়ার্সে তাই বেশি ভাল লাগে বাড়িতে ছোট, অন্তরঙ্গ পার্টি আয়োজন করতে। এ রকম পার্টির দুটো বড় সুবিধে। এক, হাতেগোনা ঘনিষ্ঠদের বাইরে কাউকে ডাকার ব্যাপার নেই। আর দুই, নিজের বাড়ির রান্না সার্ভ করা যায়।
তবে বর্ষশেষের পার্টি যেন খুব ম্যাড়ম্যাড়ে না হয়। পার্টির মুখ্য আমন্ত্রিত হিসেবে ডাকতে পারেন বিখ্যাত কোনও ব্যক্তিত্বকে। বা শহরে আসা কোনও বিশিষ্ট অতিথিকে। তিনি শিল্পী, লেখক, গায়ক, প্রফেসর, কবি, ক্রীড়াবিদ, যে কেউ হতে পারেন। এমন কেউ, যাঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভাল, যাতে তিনি পুরো সন্ধে আপনার বাড়িতে কাটাতে পারেন। আপনার অতিথিরা তা হলে যথেষ্ট সুযোগ পাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলার। আমন্ত্রিতের তালিকায় এমন কেউ থাকলে জমায়েতটা অর্থপূর্ণ হয়। কয়েকদিন আগে জার্মানির ডেপুটি কনসাল জেনারেলের বাড়িতে ক্রিসমাস পার্টির নেমন্তন্ন ছিল। নিমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন সমাজের নানা ক্ষেত্রের গুণীজন। ছিল অঢেল পানীয়, বিশাল ডিনার। তবে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ছিল সন্ধের এন্টারটেনার-পালোমা মজুমদার। আপনাদের মনে থাকবে, ‘দৃষ্টিকোণ’ ছবির জনপ্রিয় গান ‘আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করছি’ গেয়েছিল পালোমা। ওর গান সন্ধে মাতিয়ে দিয়েছিল। একজন বিদেশি কী ভাবে নিজেদের উৎসবপালনের মধ্যেও স্থানীয় সংস্কৃতি মিশিয়ে দিতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিল ওই পার্টিটা।
[কেকের মধ্যেই লুকিয়ে যৌনতার আস্বাদ, প্রেমিকার জন্য তাই বাছুন এগুলি]
আমাদের সবার অবশ্য এত বিলাসবহুল পার্টি আয়োজনের সাধ্য নেই। ছোট ফ্ল্যাটে, সীমিত বাজেটে কি তা হলে ভাল পার্টি অ্যারেঞ্জ করা যায় না? আলবাত যায়।
কাদের নেমন্তন্ন করতে চান, সেই লিস্টটা প্রথমেই বানিয়ে ফেলতে হবে। এমন নাম রাখুন, যাঁদের মানসিকতায় মিল আছে। বা পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে ধরুন এমন কয়েকজনকে ডাকলেন, যাঁদের সঙ্গে আপনার নতুন আলাপ হয়েছে। তাতে বেশ একটা বৈচিত্র্য আসবে। যদি আমন্ত্রিতের তালিকায় বিশিষ্ট কেউ থাকেন, তা হলে তাঁকে গেস্ট অফ অনার করতে পারেন। তিনি কী খেতে ভালবাসেন, কী কী খান না, কোন খাবারে তাঁর অ্যালার্জি, সেগুলো ভাল করে জিজ্ঞেস করে নিন। এই কাজটা বাকি আমন্ত্রিতদের ক্ষেত্রেও করতে হবে। ধরুন আপনি পাঁচ দম্পতিকে নেমন্তন্ন করেছেন। তাঁদের কে ভেজিটেরিয়ান, কে নন-ভেজিটেরিয়ান, কারও সি-ফুডে অ্যালার্জি আছে কি না, তাঁরা কি রেড মিট খান-আপনি জানেন না। তাঁদের সবাইকে যদি ফোন করে এগুলো জেনে নিন, তাঁদের ভাল লাগবে। চার-পাঁচটা ফোনের ব্যাপার, তাই আপনারও খুব বেশি সময় লাগবে না। অথচ তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া যাবে যে, এই ডিনারের পিছনে একটা ভাবনা রয়েছে। পার্টির দিন দারুণ ফ্যান্সি এক্সপেরিমেন্টাল রান্না করে তাক লাগাতে যাবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। বরং যে সব ডিশ রান্নায় আপনার (বা আপনার রান্নার লোকের) সুখ্যাতি রয়েছে, সেগুলোই মেনুতে রাখুন।
[পার্টি পছন্দ নয়? বর্ষবরণের রাত এভাবেই সেলিব্রেট করুন বাড়িতে]
মাঝেমধ্যে আপনার অতিথি ভাগ্য সদয় হতে পারে। আমাদের সঙ্গে যেমন হয়েছিল। দু’একবার সুনীল গাভাসকর নিজেই আমাদের ফোন করে জানিয়েছেন, উনি কলকাতায় আসছেন। কী কী খেতে চান, সেটাও বলে দিয়েছেন-কষা মাংস, চিংড়ি মালাইকারি আর মিষ্টি দই। এই তিনটে আইটেমের সঙ্গে আমাদের শুধু আর কয়েকটা পদ যোগ করতে হয়েছিল। আর গেস্টলিস্টে এমন মানুষদের রেখেছিলাম, যাঁদের সঙ্গে সুনীল গাভাসকর দেখা করতে চান। উলটোটা নয়।
বছরদুয়েক আগের আর একটা পার্টি মনে পড়ছে। ‘দ্য লাস্ট স্যালুট’ নাটকটা নিয়ে শহরে এসেছিলেন মহেশ ভাট। বিড়লা সভাঘরে নাটক ছিল। সেটা শেষ হওয়ার পরে উনি হঠাৎই ঠিক করলেন, আমাদের বাড়ি আসবেন (আমাদের বাড়ি বিড়লা সভাঘরের পাশেই)। সারা দিনের খাটনির পরে ওঁরা সবাই ক্লান্ত। চট করে খাওয়া যায়, এমন কিছু চাইছিলেন। এ দিকে আমার বাড়িতে সে দিন কিচ্ছু নেই। ভাবছি ক্লাব থেকে খাবার আনাব, এমন সময় ভাট সাব বললেন ডাল-রুটি হলেই ওঁর চলবে। সাধারণ খাবারই নাকি ওঁর পছন্দ।
আমাদের রাঁধুনি যমুনার উদ্ভাবনী ক্ষমতা দারুণ। কম সময়ে রান্না করতেও ও এক্সপার্ট। ভাট সাব কী খেতে চান বলামাত্র ছোলার ডাল বসিয়ে দিল যমুনা। ফ্রিজ থেকে কড়াইশুঁটি বের করল। প্রেশার কুকারে চটপট আলু সেদ্ধ করে ফেলল। ঝট করে শশা-পেঁয়াজ-টমেটো কেটে গুজরাতি কাচুম্বর-স্টাইল স্যালাড বানাল। টেবলে আসতে থাকল গরমাগরম রুটি। সঙ্গে সুস্বাদু আলু-মটর আর ডাল। জমিয়ে খাওয়ার সঙ্গে চলল নাটকের পোস্টমর্টেম। মনে রাখার মতো একটা রাত।
[শীতে উষ্ণ থাকুন, ঋতাভরী ও রেচেলের থেকে জেনে নিন টিপস]
অনেক দিন পরে ভাট সাবের একটা মেসেজ এল। দারুণ ডিনারের জন্য যমুনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে। এটা না হয় ব্যতিক্রম। এমনিতে নিউ ইয়ার্স পার্টিতে সাধারণ ডিনার সার্ভ করা যায় না। মেনুতে রাখতে হবে প্রচুর বৈচিত্র্য। অনেকরকম ডিশ। খাবারের প্রেজেন্টেশনও ভাল হওয়া চাই। মাথায় রাখতে হবে খাবারের বিভিন্ন রং।
বাড়িতে পার্টির জন্য ঘর সাজানো মাস্ট। গরমকালে ঘরের কোণে কোণে বাটিতে জুঁইফুলের মালা রাখতে পারেন। শীতকালে ফুলদানিতে রাখুন টাটকা ফুল। গেস্ট আসার ঠিক আগে ঘরে সুগন্ধী মোমবাতি জ্বালিয়ে দিন। ট্রাই করতে পারেন অ্যারোমা কন্টেনার। এগুলোর নীচের দিকে মোমবাতি জ্বালিয়ে ওপরে তেল আর জল ভাসিয়ে দিন। পুরো পার্টি সুগন্ধে ভরিয়ে রাখবে। ইলেকট্রিকাল অ্যারোমা কন্টেনারও ব্যবহার করতে পারেন।
টয়লেটের দিকেও খেয়াল রাখুন। ফ্রেশ গেস্ট টাওয়েল, নতুন সাবান, ভরতি টিস্যু বক্স-সব যেন মজুত থাকে।
[বিয়েতে ‘নো গিফট প্লিজ’, এমন অবস্থায় নবদম্পতিকে কী উপহার দেবেন?]
যে কোনও পার্টির কেন্দ্রে যেহেতু খাবার, তাই টেবিল সুন্দর করে সাজানো খুব জরুরি। সব সার্ভিং ডিশ যেন ম্যাচিং হয়। রুপোর কাজ করা সার্ভিং ডিশ বা সুন্দর ডিজাইনের সেরামিক সার্ভওয়ের ব্যবহার করতে পারেন। একটা পার্টির জন্য পুরো ডিনার সেট কিনতে হবে না। এগুলো ভাড়া করা যায়। এতে আপনার পার্টি একটা আলাদা অভিজাত মাত্রা পাবে। না হলে একটা সুন্দর ডিনার সেট রেখে দিতে পারেন শুধু পার্টিতে ব্যবহারের জন্য।
যদি হার্ড ড্রিংক সার্ভ করেন, তা হলে যেন কয়েক রকমের তরলের ব্যবস্থা থাকে। সবাই হুইস্কি বা ভদকা খাবে, তা কিন্তু নয়। ড্রিংকের আনুষঙ্গিক, যেমন সোডা, বরফ, ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিংক, ফ্রুট জুস-পর্যাপ্ত পরিমাণে বাড়িতে এনে রাখুন।
বসার অ্যারেঞ্জমেন্ট এমনভাবে করুন, যাতে ছোট ছোট গ্রুপে আমন্ত্রিতরা বসতে পারেন। বাড়তি মোড়া রাখুন। মাটিতে কার্পেট পেতে দিন, সঙ্গে কয়েকটা কুশন। বারান্দা সাজান গাছ আর মোমবাতি দিয়ে।
ব্যাকগ্রাউন্ডে হালকা করে বাজবে, এমন মিউজিক রেডি রাখতে হবে। তবে আমন্ত্রিতদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকেন যিনি গানবাজনা করেন, তা হলে কিছু সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখতে পারেন। হারমোনিয়াম অনেকের বাড়িতেই থাকে। পিয়ানো, পারকাশন অ্যাক্সেসরিজ বা ইলেকট্রনিক তানপুরা থাকলে তো আরও ভাল।
[‘বিয়েটা কি আমার হাতে?’ সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন ক্যাটরিনা]
বাড়ির সাজ তো হল। আপনি নিজে কী রকম সাজবেন? হোস্টেস হিসেবে চেষ্টা করুন একেবারে আলুথালু না থাকার। আপনাকে দেখে যেন মনে না হয়, সবে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। সুন্দর, ছিমছাম সাজুন। খুব চড়া সাজবেন না, যাতে গেস্টদের চেয়ে আপনাকে বেশি ঝলমলে লাগে! পার্টি শুরুর সময় আপনাকে ফ্রেশ থাকতে হবে। অতিথি আপ্যায়ন করতে হবে না? খাবার, পানীয় আর কথাবার্তা-তিনটেই যাতে সচল থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন।
আপনার হাজব্যান্ড যদি ভাল ড্রিংক তৈরি করতে পারেন, তাঁর উপর বারটেন্ডিংয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দিন। তবে জনাদশেকের বেশি লোক নেমন্তন্ন করলে ড্রিংক সার্ভ করার জন্য পেশাদার কাউকে রাখাই ভাল। তাতে আপনারা নিজেরা রিল্যাক্সড ভাবে সন্ধেটা উপভোগ করতে পারবেন।
এটাই তো আসল রিল্যাক্স করা, পার্টি উপভোগ করা। তা হলে আপনার অতিথিরাও রিল্যাক্স করতে পারবেন। আগে থেকে পার্টি প্ল্যানিং করে রাখলে আখেরে আপনারই ভাল। তাতে আপনার আনন্দ তো হবেই, আপনার অতিথিরাও এনজয় করবেন আর দিনের পর দিন আপনার পার্টির প্রশংসা করবেন!
The post বর্ষবরণের পার্টিতে এক্সপেরিমেন্টাল রান্না ভুলেও করবেন না, কেন জানেন? appeared first on Sangbad Pratidin.