দীপঙ্কর মণ্ডল: ছাত্রছাত্রীদের ভর্তিতে প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় না। প্রচুর শিক্ষক পদ খালি। শতবর্ষ প্রাচীন সরকারি স্কুলগুলি যেন দুয়োরানি। বেশিরভাগ জায়গায় গ্রন্থাগারিক নেই। প্রধান শিক্ষক নেই। কয়েকবছর ধরে ল্যাবরেটরি খাতে টাকা আসে না। এরপরেও ফি বছর নিয়ম করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে তুখড় ফল করে সরকারি স্কুলগুলি। এবার সাফল্যের সব রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে। কোন ম্যাজিকে এমন হয়? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সরকারি স্কুলে শিক্ষকরা রাজনীতি করতে পারেন না। শ্রেণিকক্ষের বাইরেও বহু শিক্ষক স্কুলে আলাদা করে পড়ান। এরফলেই বাড়তি সাফল্য আসে। মেধা তালিকায় প্রথম দশে থাকা ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, সরকারি স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকারা অরাজনৈতিক। তাঁদের শেখানো পথে হাঁটলে সাফল্য অধরা থাকে না।
[মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল কোচবিহারের, প্রথম দশে কতজন জানেন?]
রাজ্যে এখন ৩৮টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল। এবার ৩১০৫ জন পড়ুয়া মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। সাফল্যের হার ৯৮.৯৪ শতাংশ। প্রথম দশের মেধা তালিকায় আছে সাতজন। কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমি থেকে সঞ্জীবনী দেবনাথ প্রথম হয়েছে। একই স্কুল থেকে তৃতীয়স্থানে ময়ূরাক্ষী সরকার। পঞ্চমস্থানে অঙ্কিতা দাস ও নবম স্থানে ঐতিজ্যা সাহা। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের নীলজা দাস এবার পঞ্চম হয়েছে। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের সৈকত সিংহরায় নবমস্থানে। সরকারি স্কুলগুলি থেকে ৪৮৩ জন পড়ুয়া ৯০ থেকে ১০০-র মধ্যে নম্বর পেয়েছে। কীভাবে এই সাফল্য? কোনও স্কুলেই প্রবেশিকা পরীক্ষা হয় না। লটারির মাধ্যমে ভর্তি হতে হয় স্কুলগুলিতে। সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু জানিয়েছেন, “আমাদের স্কুলগুলিতে পরিকাঠামো ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। প্রচুর প্রধান শিক্ষক পদ ফাঁকা। বেশিরভাগ স্কুলে লাইব্রেরিয়ান নেই। গত তিন বছর ধরে ল্যাবের জন্য কোনও অনুদান আসে না। শুধু শিক্ষকদের চূড়ান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসাবে সাফল্য আসে।”
[ফের ইফতার খেয়ে অসুস্থ পঞ্চাশেরও বেশি বাসিন্দা, আতঙ্ক বংশীহারিতে]
সরকারি স্কুলের অন্য শিক্ষকরা জানাচ্ছেন, এটা একটা ছাঁকনি বিহীন জায়গা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায় এমন পড়ুয়া পাওয়া যায় যারা প্রথম প্রজন্মে স্কুলে আসছে। স্কুলের শিক্ষকদের সবাই আদর্শ হিসাবে দেখে। বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই আর্থিক প্রাচুর্য কী, তা জানে না। অনটনের মধ্য থেকেই অভাবিত সাফল্য পায় এই পড়ুয়ারা। প্রসঙ্গত, সরকারি স্কুলের শিক্ষক নেওয়া হয় পিএসসি-র মাধ্যমে। সরকার পোষিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে শূন্য শিক্ষক পদ পূরণ করে এসএসসি। নিয়ম অনুযায়ী শুধুমাত্র সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাই ভোটে দাঁড়াতে পারেন না। প্রকাশ্যে কোনও দলকে নিজেদের সমর্থনের কথাও জানাতে পারেন না। এই নিয়মই আশীর্বাদ হয়ে নেমে আসে ছাত্রছাত্রীদের উপরে। শিশুমনে অরাজনৈতিক মতাদর্শ সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।
The post সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা অরাজনৈতিক, মাধ্যমিকে ঈর্ষণীয় সাফল্য পড়ুয়াদের appeared first on Sangbad Pratidin.