সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি, কেউই তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেখা করেননি। তাই এবার রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাত আরও বাড়িয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকেই রাজভবনে ডেকে পাঠালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় সম্প্রতি রাজ্যে যে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা বিস্তারিত জানতে চান রাজ্যপাল। কিন্তু প্রশাসন এবং পুলিশের তরফে তাঁকে সাহায্য না করায়, তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকেই তলব করলেন। টুইট করে একথা জানিয়েছেন ধনকড়। মঙ্গলবার সুবিধামতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজভবনে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
আরও চরমে উঠছে নবান্ন-রাজভবনের দ্বন্দ্ব। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও বিরোধিতা না করলেও, আকারে-ইঙ্গিতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বুঝিয়েই দিয়েছেন যে এই অবস্থান তিনি বিশেষ ভালভাবে দেখছেন না। বরং তৃণমূলের প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলি অনেকাংশে ‘সংবিধান বিরোধী’ বলেও মনে করেন রাজ্যপাল। তারউপর প্রতিবাদের নামে লাগাতার হিংসার ঘটনা রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এসব দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জগদীপ ধনকড়।
[আরও পড়ুন: CAA নিয়ে তৃণমূলকে পালটা, ২৩ তারিখ মহামিছিলে রাজ্য বিজেপি]
আর এই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য প্রশাসন কী ভূমিকা নিচ্ছে, তা বিস্তারিত জানতেই তিনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা ও রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে। কিন্তু রাজ্যপালকে জবাব দেওয়া তো দূর অস্ত, তাঁদের দু’জনের কেউই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখাও করেননি। আজ দিনভর অপেক্ষার পর বিকেলে এ নিয়ে রাজ্যপাল টুইটারে কার্যত ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান যে তাঁরা যে রাজভবনে যেতে পারবেন না, রাজ্যপালকে পালটা বার্তা করে তা জানানোর সৌজন্যতাটুকুও দেখাননি। রাজ্য প্রশাসন এবং পুলিশের এই আচরণে তিনি স্তম্ভিত বলেও লিখেছেন।
এর কিছুক্ষণ পর আরও একটি টুইট করে রাজ্যপাল ঘোষণা করেন যে এবার মুখ্যমন্ত্রীকেই সরাসরি রাজভবনে ডাকছেন। তাঁর কাছ থেকেই সবটা শুনতে চান। মুখ্যমন্ত্রী যেন মঙ্গলবার সময়মতো সেখানে পৌঁছে যান। এও লেখেন যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সময়-সুযোগমতো রাজভবনে যেতে পারেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রস্তুত রাজ্যপাল।
এ নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের মন্তব্য, ”রাজ্যপাল সংবিধানের সীমা লঙ্ঘন করেছেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর এই মুহূর্তে কোথাও গিয়ে চা খাওয়ার সময় নেই। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে উনি ব্যস্ত। মনে হয়, উনি যেতে পারবেন না।” সন্ধের পর অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখে রাজ্যপালকে তাঁর অসন্তোষ কার্যত প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ” আপনার এত টুইট আর বিবৃতি দেখে আমি দুঃখিত। কিন্তু আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার যথেষ্ট শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছে।” এতেই স্পষ্ট, রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ এড়ালেন মুখ্যমন্ত্রীও।
কিন্তু এখানেই ইতি পড়ল না। রাতের দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে পালটা চিঠি লিখলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাতে স্পষ্টই জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় তিনি ব্যথিত। রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এই ভূমিকা প্রশংসনীয় নয় মোটেও।
[আরও পড়ুন: বিজেপির মিছিল ঘিরে যাদবপুরের সুলেখা মোড়ে ধুন্ধুমার, ব্যাপক যানজট]
The post দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে মমতাকেই রাজভবনে তলব, চিঠিতেই রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী সংঘাত প্রকাশ্যে appeared first on Sangbad Pratidin.