shono
Advertisement

Gram Banglar Durga Puja 2023: রয়েছে নিজস্ব পাঁচালি, বিশেষ রীতিতে গোস্বামী বাড়ির দুর্গাপুজো পড়ল ৩৪০ বছরে

বহু স্মৃতিবিজড়িত শ্রীরামপুরের এই বাড়ি।
Posted: 04:58 PM Oct 07, 2023Updated: 05:46 PM Oct 07, 2023

সুমন করাতি, হুগলি: বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায় একদিন ঘুরতে ঘুরতে হাজির হয়েছিলেন এখানে। ‘ঘরে বাইরে’ ছবির শুটিংয়ের রেইকি করতে। খবর ছড়াতেই উপচে পড়ে ভিড়। বেগতিক দেখে শুটিংয়ের পরিকল্পনায় সেখানেই ইতি টানেন তিনি। কিন্তু তাতে কী? শ্রীরামপুরের (Sreerampur) গোস্বামী বাড়িতে বিভিন্ন সময়েই পা পড়েছে রুপোলি জগতের বহু তারকা। উত্তম কুমার, সুপ্রিয়া দেবী – কে ছিলেন না সেই তালিকায়? সেই বাড়ির দুর্গাপুজোর রীতিতে অভিনবত্ব থাকাই স্বাভাবিক। এ বাড়িতে পুজো হয় নিজস্ব পুঁথি মেনে। আর পাঁচটা দুর্গাপুজোর (Gram Banglar Durga Puja 2023)তুলনায় এখানকার রীতি একটু ভিন্ন। এবছর ৩৪০ বছরে পড়ল এ বাড়ির পুজো।

Advertisement

শোনা যায়, ত্রিবেণী সম্মেলন উপলক্ষে এসেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গাঁধী (Mahatma Gandhi)। এসেছেন ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়। যোগসূত্র এ বাড়িরই বলাইচন্দ্র গোস্বামী, যিনি শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। এই বাড়ির আরেক সদস্য তুলসীচন্দ্র গোস্বামী ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশের কাছের মানুষ। চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী বাসন্তী দেবী অত্যন্ত স্নেহ করতেন তাঁকে। এই বৃত্তেরই আর এক বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও ছিল তুলসীচন্দ্রের বিশেষ হৃদ্যতা। সেই সূত্রে সুভাষও এসেছেন এ বাড়িতে।

এক নিঃশ্বাসে এত দূর বলে থামলেন শ্রীরামপুর গোস্বামী বাড়ির উত্তর পুরুষ শিবাশিস গোস্বামী। বললেন, “এ বাড়ির অতীত ঐতিহ্য জুড়ে রয়েছেন বহু দিকপাল ব্যক্তিত্ব। যার মধ্যে রামজয় গোস্বামী অন্যতম। জোড়াসাঁকোর দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে তিনি যৌথভাবে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক স্থাপন করেন। যদিও সে ব্যাঙ্ক পরে উঠেও যায়। এ বাড়ির আর এক সফল ব্যবসায়ী রঘুরাম গোস্বামীর লোকমুখে নাম হয় ‘প্রিন্স অফ মার্চেন্ট’। শোনা যায়, যখন ডাচরা (Dutch) শ্রীরামপুর ছেড়ে চলে গেলেন, তখন এই রঘুরাম পুরো শ্রীরামপুর কিনে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের বাধাদানের কারণে তিনি তা পারেননি।”

[আরও পড়ুন: খারাপ রেফারিংয়ের পরেও কবাডিতে ইতিহাস, ইরানকে হারিয়ে অষ্টমবার সোনা জিতল ভারত]

গোস্বামী বাড়ির আর এক শরিক দেবাশিস গোস্বামী জানালেন এ বাড়ির আদি পুরুষের কাহিনি। চৈতন্য পার্ষদ অদ্বৈত আচার্যের পুত্র অচ্যুতানন্দের কন্যার বংশধরের সঙ্গে বিয়ে হয় পাটুলির পণ্ডিত লক্ষ্মণ ভট্টাচার্যের। যিনি নবাব আলিবর্দির কাছ থেকে চক্রবর্তী উপাধি পান। তাঁর পুত্র রামগোবিন্দ টোলে অধ্যাপনা করতেন। এই রামগোবিন্দ গোস্বামী শ্রীরামপুর গোস্বামী পরিবারের আদিপুরুষ। নবাব আলিবর্দি খাঁয়ের শাসনকালে রামগোবিন্দ স্ত্রী মনোরমাকে নিয়ে জলপথে পাটুলি থেকে গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। কলকাতার কাছাকাছি মনোরমার হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। রামগোবিন্দকে তাই শ্রীরামপুরে থামতে হয়। শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায় তা জানতে পেরে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেন। সেই সূত্রে জমিদারি পান রামগোবিন্দ। তাঁর নাতি হরিনারায়ণ গোস্বামীর আমলে দুর্গাপুজোর সূচনা। পরে মূল বসতবাড়ির অনুকরণে প্রাসাদ সংলগ্ন ঠাকুরদালানে জাঁকজমক করে পুজো শুরু করেন রঘুরাম। যে পুজো এ বছর ৩৪০-এ পড়ল।

[আরও পড়ুন: ‘যেখানে বলবেন দেখা করব’, কলকাতায় এসে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ সাধ্বীর]

এ বাড়ির দুর্গাপুজোয় আসর জমিয়ে গিয়েছেন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, ভোলা ময়রা থেকে রূপচাঁদ পক্ষী। সেই রাজবাড়ির দেওয়ালে ঘুণ ধরেছে আজ। আর সেই আসর বসে না। যেটুকু হইহুল্লোড় হয়, তা শুধু পরিবারের লোকজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শিবাশিস একটু আক্ষেপের সুরে বলেন, “জানি না এর পর কী হবে! এখন শুধু সেলফি আর ছবি তোলার ভিড়। ঐতিহ্য নিয়ে কেউই বিশেষ আগ্রহী নয়। পুজোর সময়ে হেরিটেজ টুর করতে কিছু মানুষ আসেন। সরকারি সাহায্য ছাড়া এই বিরাট বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা বেশ কঠিন কাজ। আমি আসলে এই রাজবাড়ি নিয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়েছিলাম ২০১০ সালে। যখন এলাহাবাদে মতিলাল নেহরুর বাসভবন আনন্দ ভবনে চিত্তরঞ্জন দাশ, জওহরলাল নেহরু, সুভাষ বসুর সঙ্গে আমার জ্যাঠামশাই তুলসী গোস্বামীর ছবি দেখেছিলাম। শ্রীরামপুর ফিরে এসে পরিবারের ইতিহাস চর্চা ও রাজবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগ দিই। জানি না আমাদের পরের প্রজন্ম কী করবে।”

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার