shono
Advertisement

Breaking News

সম্মানহানির আশঙ্কায় ভোট চাইতে আসেননি প্রার্থীরা, রাগে বুথমুখো হবেন না গুজরাটের যৌনকর্মীরা

নির্বাচন কমিশনও ব্রাত্য করে রেখেছে গুজরাটের যৌনকর্মীদের।
Posted: 10:58 AM Dec 01, 2022Updated: 01:15 PM Dec 01, 2022

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, গুজরাট: কথা দিয়েও কেউ কথা রাখে না। নির্বাচন কমিশনও (Election Commission) নয়। ভোটদানে উৎসাহিত করতে ‘রেডলাইট’ এলাকা থেকে প্রচারাভিযান শুরু করার কথা বলেও কথা রাখেনি কমিশন। ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে যৌনকর্মীদের। কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কাছেও ব্রাত্য তাঁরা। এমনকী ভোট চাইতে অচ্ছুতৎ দেহব্যবসায়ীদের বাড়িতে ভুলেও পা রাখছেন না প্রার্থীরা। এমনই ‘মধুর’ অভিজ্ঞতা ভাবনগরের ‘রেডলাইট’ এলাকা বলে পরিচিত বানাসকাঁথার থারাদ তালুকের ভাদিয়ার বাসিন্দাদের। ভোটের ময়দানে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা প্রার্থীদের নিয়ে পাশের গ্রামে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করে গেলেও এই গাঁয়ে পা দিচ্ছেন না। কমিশনের কর্তারাও একদিনের জন্যও এলাকায় আসেননি। তাই তাঁরাও ঠিক করেছেন এবার ভোটে বুথমুখো হবেন না। রাজ্যের সমস্ত যৌনকর্মীর কাছেও একই আবেদন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাদিয়ার (Bhadia) বাসিন্দারা।

Advertisement

ঘিঞ্জি এলাকা। সরু গলি। তার মধ্যেই ছোট ছোট একচালার ঘর। প্রতি ঘরে ৫ থেকে ছ’জনের বাস। ভাদিয়ার জনসংখ্যা এখন প্রায় ৭০০। ৫০টির কাছাকাছি পরিবারে থাকলেও এদের মূল রোজগার মহিলাদের যৌনব‌্যবসা। কিন্তু বেশিদিনের কথা নয়। এখানকার বাসিন্দাদের মূল ব্যবসা ছিল মাংস বিক্রি। গ্রামে গ্রামে হাটে গিয়ে গিয়ে মাংস বিক্রি করতেন এখানকার বাসিন্দারা। বছর কয়েক আগে সরকারের একটা সিদ্ধান্ত এদের জীবনযাত্রায় বদল আনে। প্রকাশ্যে মাংস বিক্রি করা যাবে না বলে ফতোয়া জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। তারপর থেকেই রুটিরুজি বন্ধ হয়ে যায়। অগত্যা পেটের জ্বালায় রাস্তায় নামেন মহিলারা। ক্রমে দেহব্যবসা হয়ে ওঠে রুটিরুজির পথ। জানান, এলাকার বাসিন্দা দীনেশ সারানিয়া।

[আরও পড়ুন: ‘আমাকেও শূর্পনখা বলেছিল মোদি’, ‘রাবণ’ বিতর্কের মাঝে পালটা দিলেন কংগ্রেস নেত্রী]

এই এলাকা থারাদ বিধানসভার অন্তর্গত। এখান থেকেই জয়ী হয়ে গুজরাটের (Gujarat) মন্ত্রী হন শংকর চৌধুরি। এবারও তিনি গেরুয়া প্রার্থী। প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের (Congress) গুলাব সিং রাজপুত। চুটিয়ে প্রচার করছেন। কিন্তু ভুলেও ভাদিয়ায় চরণ ছোঁয়াননি দুই প্রার্থীর কেউই। প্রচারেও নাকি বাধা। সম্মান চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। দীনেশ জানালেন, তিনদিন আগেই মন্ত্রীমশাই পাশের সায়কার এলাকায় প্রচারে আসেন। কিন্তু আমাদের পাড়ায় আসেননি। তিনি জানান, শুধু এই ভোটে নয়। আগের নির্বাচনেও আমাদের পরিবারগুলো অচ্ছুৎ ছিল। নির্বাচনেও আমাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা আশপাশের গ্রামে লাউডস্পিকার, ড্রাম এবং স্লোগান শুনি, কিন্তু প্রার্থীরা আমাদের গ্রামে আসে না। গ্রামের সুনাম তাঁদের দূরে রাখে। তবে এবার রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যৌনকর্মীরা। কারণ, ভোট দিলেও সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা তাঁরা পান না। আসলে সমস্যা সমাধানের সাহস দেখান না রাজনৈতিক নেতারাও।

[আরও পড়ুন: ২০ হাজারের বেশি অনুদানে বিরোধীদের টেক্কা বিজেপির, ধারেকাছে নেই কংগ্রেস-তৃণমূল]

এলাকায় একটি সমাজসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি প্রাথমিক স্কুল খোলা হয়েছে। তবে কোনও বাড়িতে নয়। গাছের তলায় পড়াশোনা করে যৌনকর্মীদের সন্তানরা। সেই স্কুলের শিক্ষক জগদীশ আসল জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েতের কাছে বারবার আবেদন করেও স্কুলের জন্য বাড়ি দূরঅস্ত, পড়াশোনার জন্য ন্যূনতম সামগ্রী জোটেনি। তাই এবার আর ভোটদান করতে বুথে নয়। যৌনকর্মীরা নিজেদের গৃহবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, “রাজনৈতিক নেতারা তো আসেননি। আসেন না। এটা জানাই ছিল। কিন্তু কমিশন আমাদের এলাকা থেকে সচেতনতার প্রচার শুরু করবে বলেও আসেনি। তাই এমন সিদ্ধান্ত।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement