সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংগীত জগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী হ্যারি বেলাফন্তে (Harry Belafonte)। বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
বেলাফন্তে নামটাকে নিছক সংগীতশিল্পীর বৃত্তে আবদ্ধ রাখা যায় না। কালো মানুষদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন যেমন, তেমনই এইডসের মতো অসুখের বিরুদ্ধে প্রচারেও থেকেছেন পুরোদমে। গানের পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন। কিন্তু সারা বিশ্বের কাছে তাঁর প্রথম পরিচয় অবশ্যই সংগীতশিল্পী হিসেবে। ‘জামাইকা ফেয়ারওয়েলে’র মতো গানের জন্য তিনি চিরকাল আদৃত হবেন।
১৯২৭ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে জন্ম তাঁর। তবে শৈশবের আটটি বছর জামাইকায় কেটেছিল। পরে নিউ ইয়র্কে ফিরলেও ডায়ালেক্সিয়ার সমস্যায় হাই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পেটের তাগিদে নানা বিচিত্র কাজকর্ম করতে হয়েছে। ১৭ বছর বয়সে যোগ দেন মার্কিন নৌসেনায়। সেই সময় গোটা বিশ্ব ডুবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্ধকারে।
যুদ্ধশেষে অভিনেতা হওয়ার শখ চাপে বেলাফন্তের মাথায়। সেই প্রথম অভিনয়ের ক্লাসে ভরতি হলেন তিনি। সেই সঙ্গে হাতে তুলেন গিটার। লোকগীতি থেকে পপ, জ্যাজ গেয়ে উপার্জন শুরু করলেন নিউ ইয়র্কের ক্লাবগুলিতে। ক্রমে গানই হয়ে উঠল তাঁর পরিচয়। ১৯৫৪ সালে প্রকাশ পায় প্রথম অ্যালবাম। দ্বিতীয় অ্যালবামেই দেখলেন খ্যাতির মুখ। তবে ইতিহাস গড়ল তৃতীয় অ্যালবাম। ক্যালিপসো গানের সেই অ্যালবামে জামাইকান ঐতিহ্যের ছোঁয়া মার্কিনীদের। আমেরিকায় সেটাই প্রথম অ্যালবাম যেটা দশ লক্ষেরও বেশি বিক্রি হয়েছিল।
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর এক অ্যালবামে গত শতকের ছয়েক দশকেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর বিখ্যাত গানের মধ্যে ‘জামাইকান ফেয়ারওয়েল’ ছাড়াও ‘জাম্প ইন দ্য লাইন’, ‘দ্য ব্যানানা বোট সং’, ‘আইল্যান্ড ইন দ্য সানে’র মতো অসংখ্য গান রয়েছে। এরই পাশাপাশি অভিনয়েও পেয়েছেন সাফল্য।
কিংবদন্তি অভিনেতা, গায়ক ও সমাজকর্মী পল রোবসন ছিলেন তাঁর মেন্টর। পাশাপাশি মার্টিন লুথার কিংয়েরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন বেলাফন্তে। নিজেও ঝাঁপিয়েছিলেন সমাজসেবায়। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের অধিকারের জন্য হয়েছিলেন সোচ্চার। এবং দারিদ্র, বর্ণবাদ এবং এইডসের ছোবলে বিপন্ন আফ্রিকাতেও গিয়েছেন বারবার সমাজকর্মী হিসেবে। সব মিলিয়ে বর্ণাঢ্য এক জীবন। কিংবদন্তি বেলাফন্তের প্রয়াণ তাই এক যুগাবসান। নবতিপর গায়কের মৃত্যুতে তাই শোকের ছায়া সারা বিশ্বের সাংস্কৃতিক দুনিয়ায়।