অভিযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বেশি পাচ্ছেন শ্বেতাঙ্গরা ও প্রাক্তনীদের উত্তরসূরিরা।
‘গ্রেট স্কলার’ অম্বর সেন ‘হার্বার্ট ইউনিভার্সিটি’-র ডবল এমএ- এই কথা শুনে ফেলুদা আর চুপ থাকতে পারেনি, বলে উঠেছিল, ‘হার্বার্ট নয় মশাই, হার্ভার্ড, হাভার্ড!’ হার্ভার্ডের সঠিক উচ্চারণ করতেই আমবাঙালির দাঁত ভেঙে যায়, একথা সর্বজনবিদিত। তবু বাঙালিদের মধ্যে হার্ভার্ড স্কলারও যে নেই, তা বলা যায় না। অমর্ত্য সেনের নাম এক্ষেত্রে স্মর্তব্য।
কিন্তু মোদ্দায়, হার্ভার্ড বললেই একটু উচ্চমার্গের ধারণা তৃতীয় বিশ্বের মনে চলে আসেই। এখন এত বড় বিশ্ববিদ্যালয় যে মুক্তমনের অঙ্গন হবে, প্রগতিশীলতার বাতাস সেখানে খেলে বেড়াবে- তাও প্রত্যাশিত। কিন্তু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু বিতর্ক। অভিযোগ, এশিয়ান-আমেরিকানদের ‘পার্সোনাল রেটিং’ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের থেকে কম রাখা হয়েছে- এমন একটি অভিযোগ তুলেছে ‘স্টুডেন্টস ফর ফেয়ার অ্যাডমিশন’ নামে একটি গোষ্ঠী। এই মর্মে মামলাও দায়ের হয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে। এই ধরনের ভরতি প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কড়া মন্তব্যও করেছে বিগত সপ্তাহে। এর সঙ্গেই জুড়েছে আরও একটি অভিযোগ, হার্ভার্ডের প্রাক্তনী এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা অনুদান দিয়েছেন- তাঁদের সন্তানরা বেশি সুবিধা পাবে ভরতির ক্ষেত্রে, এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই বিষয়ে সচেতন হতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে, ইতিমধ্যেই।
[আরও পড়ুন: বিরোধ সর্বব্যাপী হলে সামলাতে পারবে তো বিজেপি?]
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর ২০২০ সালে মার্কিন মুলুকজুড়ে ঘনিয়ে উঠেছিল বর্ণবৈষম্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের জোয়ার, নতুন করে। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান জীবন্ত হয়ে উঠেছিল আবার। ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ বা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের দেওয়াল ভেঙে দেওয়ার ভাবনা কাজ করেছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকারের পক্ষে ভোট পড়েছিল, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায় সুনিশ্চিত করেছিল। ক্ষেত্রবিশেষে ট্রাম্প প্রশাসনের শরমহীন শ্বেতাঙ্গপন্থী হওয়ার প্রবণতাও এক্ষেত্রে কাজ করেছিল কিছুটা। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের আমলে হার্ভার্ডের মতো একটি মেধা-উৎকর্ষ কেন্দ্রের এহেন সিদ্ধান্ত ঠিক কীভাবে দেখা হবে, বা কীভাবে তার মোকাবিলা হবে- দেখা যাক।
প্রসঙ্গত, এই হার্ভার্ডেই বছর দুয়েক আগে মান্যতা পেয়েছিল জাতিগত বৈষম্যের প্রশ্নটি। তাই শুরু হয়েছিল ‘সংরক্ষিত বিভাগ’। ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা সেই সিদ্ধান্তকে প্রাণখুলে স্বাগতও জানিয়েছিল। মেধা-বিশ্বে সকলের সমান অধিকারের দাবি দিকে দিকে সোচ্চার হচ্ছে যখন আপৃথিবী শিক্ষাক্ষেত্র জু়ড়ে, সেই সময় সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে ‘প্রিভিলেজ’-কে গুরুত্ব দেওয়া কতটা গ্রহণযোগ্য? যে কোনও প্রান্তে, যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কি এই ধরনের সিদ্ধান্ত সমর্থন করা যায়? এই ভেদরেখা যত তাড়াতাড়ি মুছে যায়, ততই মঙ্গল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আপনি আচরি ধর্ম’ পালন করে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।