shono
Advertisement

লখনউতে যেখানে ভূতের ভয়!

সাবধান থাকতে ক্ষতি কী! জীবন আর মৃত্যু যে সমান্তরালে চলে- এটা তো মানবেন! একটার সীমানা পেরিয়ে বিপদের মুখে কি না পড়লেই নয়? The post লখনউতে যেখানে ভূতের ভয়! appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:34 AM Jun 04, 2016Updated: 10:04 PM Jun 03, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটা কথা কোনও দিন ভেবে দেখেছেন কি? ভারতের বেশির ভাগ ভুতুড়ে জায়গার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের কোনও না কোনও ঘটনা?
ব্যাপারটা অবাক করার মতো! হতে পারে, ব্রিটিশদের অত্যাচারের স্মৃতি এখনও অবচেতনে ভয় পাইয়ে দেয় ভারতীয়দের! সেই জন্যই ভুতুড়ে জায়গায় ফিরে ফিরে আসে মৃত্যুর অনুষঙ্গে ব্রিটিশ জমানা!
হতে পারে, ব্যাপারটা নিছকই ঔপনিবেশিক হ্যাংওভার! শাসকদের ভয় পাওয়াটাই শোষকদের ধরন, যা মৃত্যুর পরেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
কিন্তু, সব যুক্তি-তর্কের ঊর্ধ্বে ফিরে যেতে হয় শেক্সপিয়রের কাছে। মনে করতে হয় হ্যামলেট-এর সেই অমোঘ সংলাপ, পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই আছে যা যুক্তি দিয়ে ধরা-ছোঁয়া যায় না!
সেই যুক্তিতে ভর দিয়েই এগোনো যাক লখনউয়ের দিকে! সেই লখনউ যা ভয়ে স্তব্ধ করে রাখে বাসিন্দা এবং পর্যটকদের!
আসলে, লখনউ মানেই ঠুমরি আর বাঈজি নয়! লখনউ মানে বিলাসবহুল নবাবজীবনও নয়। এর বাইরেও রয়েছে আর এক লখনউ যা যেমন মনখারাপের কারণ, তেমনই ভয়েরও!

Advertisement

লখনউ গেলে যাঁরা ইতিহাস ভালবাসেন, তাঁরা বেশ কয়েকটা জায়গা সচরাচর বাদ দেন না। তার মধ্যে রয়েছে সিকন্দরাবাগ, অবশ্যই রয়েছে দ্য রেসিডেন্সি।

সিকন্দরাবাগ

সাবধান! সিকন্দরাবাগআর রেসিডেন্সি মানেই কিন্তু ভূতের ভয়!
তবে, শুধুই এই দুটো জায়গা নয়। এর বাইরে আরও কুখ্যাত দুই ভুতুড়ে জায়গা আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে লখনউতে- বেগম কোঠি আর ওয়েল হাউজ।
কেন সন্ধে নামলে এই চার জায়গার ধার-কাছ দিয়ে যেতে চান না স্থানীয়রা? কেউ যেতে চাইলেও কেন বারণ করেন সকাতরে?
উত্তর খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসে। আর হিন্দু প্রচলিত বিশ্বাসে।
সময়টা ১৮৫৭। ব্রিটিশ শাসকরা একে একে জবরদখল করছে দেশীয় রাজা, নবাবদের রাজত্ব। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিদ্রোহ জাগছে শোষিত মনে।
অবশেষে সেই বিদ্রোহের ফুলকি পরিণত হল দাবানলে। মঙ্গল পাণ্ডের বিদ্রোহ ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়ে গেল সিপাহি বিদ্রোহ। হতে পারে তা ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন, হতে পারে নয়!
কিন্তু, ১৮৫৭-র শহিদরা যে মর্মান্তিক পরিণতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তেমনটা পরবর্তীকালের স্বাধীনতা-সংগ্রামীদের সঙ্গে হয়নি! সেই মর্মান্তিক, গা শিউরে ওঠা স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও ধুঁকছে লখনউ!

দ্য রেসিডেন্সি

ইতিহাস বলছে, বিদ্রোহের সময় লখনউয়ের সিকন্দরাবাগে, রেসিডেন্সিতে ব্রিটিশরা নির্মম ভাবে গুলি করে মেরেছিল সিপাহিদের। তাঁদের মৃতদেহ অন্ত্যেষ্টি আর আগুনের সম্মানটুকুও পায়নি। স্রেফ ফেলে রাখা হয়েছিল!
সিকন্দরাবাগ আর রেসিডেন্সিতে রাত নামলে এখনও সেই সময় জেগে ওঠে। শোনা যায় গুলির শব্দ। বাতাসে ভেসে ওঠে বারুদের গন্ধ। কানে আসে কান্নার আওয়াজ, আর্তরব! সেই সব যাঁরাই শুনেছেন, মূক-বধির হয়ে গিয়েছেন জন্মের মতো। অনেক সময়ে, সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁদের লাশ মিলেছে! তাই অন্ধকারে সিকন্দরাবাগ, রেসিডেন্সিতে কারও যাওয়ার অনুমতি মেলে না। স্থানীয়রাও যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলেন জায়গাদুটো!
একই ঘটনার সাক্ষী বেগম কোঠিও! রেসিডেন্সি সংলগ্ন এই বাড়ি এক সময়ে ছিল বেগমদের খাসমহল। কিন্তু, সিপাহি বিদ্রোহের সময়ে সেই আব্রু আর ছিল না। ব্রিটিশরা সিকন্দরাবাগ, রেসিডেন্সির মতো বেগম কোঠির পাতালঘরেও লাশ জমা করে রেখে দেয়। এখনও লখনউয়ের বিধান সভা মার্গ সড়কের নিচে সেই লাশ-জমা পাতালঘরের অস্তিত্ব রয়েছে। কাহিনি বলে, রাত নামলে বেগম কোঠিতেও শোনা যায় মেয়েদের কান্নার আওয়াজ। ব্রিটিশদের অত্যাচারের মুখে যে জেনানারা আব্রু রাখতে পারেননি, তাঁদের অসহায়, অতৃপ্ত আত্মা আজও হাহাকার করে! ফিরে পেতে চায় পুরনো দিনের সুখস্মৃতি! তাই সেই সময়টায় ওই জায়গায় কারও পা পড়লে তাকে বিন্দুমাত্র রেয়াত করে না বেগম কোঠির অশরীরী বাসিন্দারা! যে আব্রু তাঁরা বেঁচে থাকতে রক্ষা করতে পারেননি, মৃত্যুর পরে তাকে যতটা সম্ভব আগলে রাখতে চান! অনুপ্রবেশকারীর মৃত্যুর বিনিময়ে!

বেগম কোঠি

তবে, লখনউয়ের সব চেয়ে আতঙ্কের জায়গা ওয়েল হাউজ। এই অভিশপ্ত বাড়ির শেষ শিকার ২০০৩ সালে এক বাচ্চা ছেলে।
শোনা যায়, এই ওয়েল হাউজের এক কুয়োতে বহু সিপাহির লাশ ফেলে রেখেছিল ব্রিটিশরা। এখনও সেই কুয়োয় তাঁদের অতৃপ্ত আত্মা বাস করে!
২০০৩ সালে এই বাড়িটিতে সপরিবারে এসে ওঠেন লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তাঁর ড্রাইভারের বাচ্চা ছেলেটির স্বভাব ছিল, কুয়ো দেখলেই সেখানে পাথর ফেলা! এক দিন খেলতে খেলতে বাচ্চাটা এসে পৌঁছয় এই কুয়োর ধারে। অভ্যেস মতোই, একটা পাথর ছোড়ে কুয়োর ভিতরে!
কিন্তু, সেই পাথরটা কুয়োয় পড়ার কোনও আওয়াজ শোনা যায়নি। কেউ কি সেই পাথরটা হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলেছিলেন? আর ঘটনায় ক্ষুণ্ণ হয়েছিল তাঁর আত্মসম্মান?
বলা মুশকিল! তবে, এর পরেই রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই বাচ্চা ছেলেটি! প্রবল জ্বরের সঙ্গে তার মানসিক বিকারও দেখা যায়। মাঝে মাঝেই সে ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠত!
এভাবেই দিন যায়, কিন্তু সুস্থ আর সে হয় না! একদিন কিন্তু ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা। ওই অসুস্থ শরীরেই একদিন ঘর থেকে বেরিয়ে এল সে! ছুটতে ছুটতে গিয়ে ঝাঁপ দিল কুয়োর ভিতরে।

ওয়েল হাউজ

বাচ্চাটির মৃত্যুর পর উপাচার্য সচেতন হয়েছিলেন। ওঝা ডেকে স্বস্ত্যয়নও করিয়েছিলেন। কিন্তু, লাভ হয়নি। রাত বাড়লেই কুয়োর মধ্যে শোনা যেত মানুষের করুণ গলার স্বর। ঠিক যেন কারা বিলাপ করছে!
আপনার কি বিশ্বাস হচ্ছে না? মনে হচ্ছে সবই গাল-গল্প?
হতেই পারে!
তবে সাবধান থাকতে ক্ষতি কী! জীবন আর মৃত্যু যে সমান্তরালে চলে- এটা তো মানবেন! একটার সীমানা পেরিয়ে বিপদের মুখে কি না পড়লেই নয়?

The post লখনউতে যেখানে ভূতের ভয়! appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement