shono
Advertisement

Breaking News

মোক্যাম্বোর শ্রেণিবৈষম্য আদৌ কি আমাদের সচেতন করল?

প্রতিবাদ চলছে, চলুক! কিন্তু, অন্যকে সম্মান করা কি আর আমরা শিখছি? The post মোক্যাম্বোর শ্রেণিবৈষম্য আদৌ কি আমাদের সচেতন করল? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:05 PM Sep 13, 2016Updated: 12:35 PM Sep 13, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রতিবাদের শহর কলকাতায় মিছিল কি এখন সোশ্যাল মিডিয়ামুখী?
প্রশ্নটা এই মুহূর্তে খুব একটা অযৌক্তিক বোধ হয় নয়! দিলাশি হেমনানি যে মুহূর্ত থেকে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তাঁর ‘মোক্যাম্বো’-লাঞ্ছনার কথা, তখন থেকেই ঢিল পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার জলে। একটা নয়, একাধিক! সবাই সোচ্চার হয়েছেন কলকাতার অভিজাত ওই রেস্তোরাঁর শ্রেণিবৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে। প্রায় সবাই শেয়ার করেছেন হেমনানির ওই পোস্টটি। সবার মুখেই এক কথা- ”নাহ্, এর পরে আর মোক্যাম্বো যাওয়া চলবে না!”
পাশাপাশি, ‘জোমাটো’-তে উপচে পড়ছে ভিড়! এক রাতের মধ্যে শহরের যে রেস্তোরাঁ ৫-এর মধ্যে ৪.৪ রেটিং পেত, তা নেমে এসেছে ১.৮-এ! অনেকে আবার এতটাও নম্বর দিতে চাইছেন না! রেস্তোরাঁটির জন্য বরাদ্দ করেছেন মাত্র ১ নম্বর! সেটা সম্ভবত সুস্বাদের গুণে! রান্না ওরা ভালই করে, সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই!
কিন্তু, সমস্যা অন্যত্র! শ্রেণিবৈষম্যের এহেন নজির কি ‘মোক্যাম্বো’র ভাগে একা? মনে আছে, রাজধানী দিল্লির কথা? ২০১৫-র মার্চের ঘটনা। এক যুবককে ঢুকতেই দেয়নি দিল্লির এক অভিজাত রেস্তোরাঁ। যুবকের অপরাধ- তিনি প্রতিবন্ধী! তাঁর চলাফেরা হুইল চেয়ারে সীমাবদ্ধ! বছর ঘুরে গিয়েছে বলেই হয়তো ঘটনাটি এখন অপ্রাসঙ্গিক। হয়তো বা অপ্রাসঙ্গিক অন্য শহরের ঘটনা বলেও!
তবে, সব ঘটনাই আঙুল তুলছে একটাই দিকে- আমরা কি আর যথেষ্ট মানবিক নই? দায়ের ভাগ কিন্তু নিজেদেরই নিতে হবে। ‘মোক্যাম্বো’র যে কর্মী হেমনানিকে ড্রাইভার-সহ রেস্তোরাঁয় ঢুকতে বাধা দিলেন, তিনিও কিন্তু সমাজেরই অংশ। তাঁর থেকে উঁচু পদে যাঁরা রয়েছেন, কোনও একটা জায়গায় গিয়ে তাঁদের কাছে তিনিও উপহাস আর অবমাননার শিকার! অর্থাৎ, শ্রেণিবৈষম্য চক্রাকারে চলছেই!
মানতে অসুবিধা হচ্ছে না তো? হলে নিজেদের দিকে তাকানো যাক আরও একটু নিবিড় করে! বাসে-ট্রামে শ্রমজীবী মানুষ যখন আমাদের পাশে বসেন, এতটুকুও অস্বস্তি কি হয় না? মেট্রোয় গ্রাম থেকে আসা মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে কি বিরক্ত লাগে না? কন্ডাকটর, রিকশাওয়ালাদের তো এখনও অনেকে তুই-তোকারি করে সম্বোধন করেন! তাঁদের দলে আমরাই পড়ি, যাঁরা তথাকথিত ভদ্র মানুষ হিসেবে সমাজে নাম কিনেছি! বা, বাড়ির কাজের মহিলাকে টেবিলে বসিয়ে খেতে দিয়েছি কখনও? স্রেফ মাতাল হওয়ার অপরাধেই কি অনেক রাতে, ফাঁকা রাস্তায় বাস থেকে নামিয়ে দিইনি সহযাত্রীকে? শহরের স্কুলে-কলেজে গ্রামের ছেলে এলে কেমন ব্যবহারটা পায় ভাবুন তো! তাহলে?
প্রশ্নগুলো অস্বস্তিকর! তাই ফিরে আসা যাক ক্লাব-রেস্তোরাঁর জগতে। বছর কয়েক আগেও তো শহরের কোনও পানশালায় একা মেয়ের প্রবেশাধিকার ছিল না! তখন এত প্রতিবাদ কি ওঠেনি সোশ্যাল মিডিয়া সেই সময় ততটাও জনপ্রিয় ছিল না বলে? না কি অভিজাত ক্লাবগুলোর নির্দিষ্ট পোশাকবিধি লিখিত নিয়ম বলেই থেকে যায় প্রতিবাদের বাইরে? এই জায়গায় এসে হঠাৎ করেই মনে পড়ে যাচ্ছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা। তাঁর মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বও পাজামা-পাঞ্জাবি আর চটি পরে থাকার জন্য অতিথি নিয়ে বসার অনুমতি পাননি ক্যালকাটা ক্লাবের অন্দরে। তাঁর সৌজন্যে বাগানে পেতে দেওয়া হয়েছিল টেবল-চেয়ার! তফাত বলতে এটুকুই!
অনেকে ‘মোক্যাম্বো’র তীব্র সমালোচনার সঙ্গে জুড়েছেন আরও একটি যুক্তি। তার অবলম্বন বাঙালির শহরে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার! এই জাতীয় অনেক অভিজাত জায়গাতেই বাংলায় কথা বললে অস্বস্তিকর দৃষ্টির সামনে পড়তে হয়! কিন্তু, ঝাঁ-চকচকে জায়গা দেখলে অকারণে ইংরেজি কি আমরাই বলে থাকি না? তাহলে আর রেস্তোরাঁ কী দোষ করল!
এই সূত্রে মনে পড়ে যাচ্ছে কলকাতার এক পুরনো কথা। বাবু কলকাতার কথা। হীরা বুলবুল নামে এক বিখ্যাত বাঈজি তার একমাত্র পুত্রসন্তানকে ভর্তি করিয়েছিল হিন্দু কলেজে। ঔদার্য আর শিক্ষার পীঠস্থানে। চন্দ্রনাথ নামে সেই কিশোর যে দিন থেকে কলেজে যায়, তার দু’-এক দিনের মধ্যে হিন্দু কলেজের পঠন-পাঠন শিকেয় ওঠে! অভিজাত, ভদ্র সন্তানরা আর পড়তে যেতে চাইতেন না হিন্দু কলেজে। পড়াতে চাইতেন না অধ্যাপকরা! শেষ পর্যন্ত চন্দ্রনাথকে হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতেই হয় একঘরে হয়ে গিয়ে!
সেই ঐতিহ্য আর কোথায় বদলিয়েছে! শুধু গঙ্গা দিয়ে অনেক স্রোত বয়ে গিয়েছে, এই যা! তার ঘোলা জলের মতো সমাজের অস্বচ্ছতা দেখে বার বার সরব হয়েছেন শহরের লেখকরা। আয়না ধরতে চেয়েছেন সমাজের মুখের দিকে তাকিয়ে। যে কাজটা এখন করছে সোশ্যাল মিডিয়া! উদ্যোগী হয়েছে জনৈক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। সমাজের নিম্নবর্গীয় কিছু মানুষকে নিয়ে আগামীকাল তারা মোক্যাম্বোয় খেতে যাবে বলে ঠিক করেছে। বাধা পেলে এগোবে আইনি পথে!
বেশ কথা! প্রতিবাদ চলছে, চলুক! কিন্তু, অন্যকে সম্মান করা কি আর আমরা শিখছি?

Advertisement

The post মোক্যাম্বোর শ্রেণিবৈষম্য আদৌ কি আমাদের সচেতন করল? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement